রিপনের পা নেই, তার হাতই ভরসা! করেন মানবেতর জীবনযাপন

প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২১, ০৭:৫৭ পিএম

পা তার থেকেও নেই, হাতের উপর ভর করে চলতে হয়। ৩০টি বছর ধরেই সে হাতের উপর ভর করে চলছে। আর কোন দিন পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়াতে পারবে না। বিভিন্ন হাট বাজারে দেখা যায় তাকে হাতের উপর ভর করে হাটছে আর মানুষের কাছে সাহায্য চাইছে। তার সাথে বলে জানা যায় তার নাম রিপন মিয়া।

সে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের হারুয়া  গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে ।

তার বাড়ি হারুয়ায় গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,প্রায় ১৭ বছর আগে বিয়ে করেন মোছা শিল্পী আক্তারকে। তাদের সংসারে এক মেয়ে দুই ছেলে, সবার বড় মোছা. মিনা আক্তার (১৪) মো. জাহিদ (১২) মো. ইব্রাহিম (১০)।

পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে জির্ণশির্ণ ঘরে তাদের বসবাস।সন্তানদের লিখাপড়া খরচসহ সংসারে উপার্জনকারী একমাত্র রিপণ মিয়া। নেই তার অর্থ সম্পত্তি।পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে রয়েছে পাঁচ শতক জমি। যেখানে ছয় ভাই মিলে বসবাস করছে ।

জানা যায়, রিপন মিয়ার বয়স সাত বছর, হঠাৎ টাইফয়েড জ্বরে পঙ্গু হয়ে যান। দুটি পা অচল হয়ে যায়। বাবার অভাবের সংসারে করাতে পারেননি তেমন ভালো  চিকিৎসা। ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সে হারান মা কেও।

এরপর থেকেই শুরু হয় জীবন চালানোর যুদ্ধ। দুই হাতে ভর করে বিভিন্ন বাজারে হাত পেতে, ভিক্ষা করে চলে তার জীবন সংসার রিপন মিয়া বিডি২৪লাইভ কে বলেন, আমি ঈশ্বরগঞ্জ,গৌরীপুর,নান্দাইল  উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জের হাট বাজারে সারা দিন ভিক্ষা করি। যে টাকা পায়, তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে।

তার উপর আবার সন্তানদের লেখাপড়া খরচও যোগাতে হয়। তিনি আরও বলেন,যে টাকা সারাদিন ভিক্ষা করে যা পাই। তার প্রায় অর্ধেকেই চলে যায়,বাড়ি থেকে বাজারে  যেতে রিক্সা ভাড়ায়।পরে অবশিষ্ট কিছু টাকা দিয়ে সংসার চালানো অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে।

আর যে দিন বৃষ্টি আসে দিন আর যেতে পারি না। তিনি বলেন,যদি আমার নিজের একটি রিক্সা গাড়ি থাকতো তাহলে রিক্সা ভাড়া'র টাকাটা আমার থেকে যেতো। আর এই টাকাটা আমার সংসারের জন্য অনেক কিছু। একটি রিকশার দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

এত টাকা দিয়ে রিক্সা  কেনা আমার পক্ষে সম্ভব না। সরকারীভাবে কিংবা সমাজের বিত্তবানরা যদি আমার দিকে একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলেই হয়তো একটি রিকশা কেনা সম্ভব।রিপন মিয়ার স্ত্রী শিল্পী আক্তার জানায়,পাঁচ জনের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তিন বেলা ঠিকমত লবন ভাতই জুটে না।

যে ঘরে বসবাস করি বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। সরকার কত মানুষকে ঘর দিচ্ছে। আমাদের যদি একটা ঘর দিত। তাহলে ঘরে অন্ততপক্ষে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা.হাফিজা জেসমিন বলেন, রিপন মিয়া'র বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: