৩১ বছর নৌকায় বসবাস তার, এভাবেই জীবন শুরু

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২১, ০২:০২ এএম
রবিন খান, সিংড়া (নাটোর) থেকে: একজন জীবন সংগ্রামী মানুষের গল্প, এ গল্প নিছক নয়। রোদে পুড়ে, ঝড়ে জীবনের নৌকার গতি থেমে গেলেও হার মানার মানুষ তিনি নয়। হার মানলে যে সংসারের হাল থমকে দাঁড়াবে তাই অসুস্থ অবস্থায় জীবনের তাগিদে ছুটে চলতে হয়েছে তাকে। আঃ মজিদ নাটোরের সিংড়া উপজেলার কাউয়াটিকরি গ্রামের মৃত আফাজ ফকিরের পুত্র। তখন চলনবিলের দুর্গম পল্লী কাউয়াটিকরি গ্রাম। সিংড়া উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিঃমি অদুরে অবস্থান। নৌকাই তখন মানুষের একমাত্র বাহন। শুস্ক মৌসুমে ১৮ কিঃ মিঃ পায়ে হেটে মানুষকে আসতে হয়েছে উপজেলা সদরে। টাকার অভাবে, চিকিৎসার অভাবে জ্বরে বাবা মারা যাবার পর সংসারের বড় ছেলে হিসেবে হাল ধরেন তিনি। বর্ষার সময় নৌকায় উপজেলা সদর কিংবা তাড়াশ উপজেলার বারুহাস থেকে মালামাল কিনে আনতে হয়েছে। শুস্ক মৌসুমে অন্যের বাড়িতে কাজ না করলে পেটে ভাত জুটেনি। এভাবেই জীবন শুরু। এলাকার মানুষ মজিদ ফকির নামেই ডাকে। বাবা মারা যাবার পর সংসারের হাল ধরেছিলেন ছোট্ট বয়সে কাজ করতেন অন্যের বাড়িতে। তারপর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর বাসনায় ৫ হাজার টাকায় শুরু করেন ব্যবসা। ১৫০০ টাকায় নৌকা কিনে কিছু সওদাপাতি কিনে বাড়ি বাড়ি ফেরি করে কেনাবেচা শুরু। তারপর থেকে কেটে গেছে ৩১ টি বছর। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ের মধ্য বহুদিন কেটে গেছে তবুও জীবনের তাগিদে ছুটে চলা। ১ দিন দোকান বন্ধ থাকলে বাজার হয় না, মাছ কেনার সামর্থ্য থাকেনা তখন ডাল ভাত খেয়ে কাটাতে হয়। আঃ মজিদের দিন শুরু হয় হাকডাক দিয়ে। নৌকায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাড়ি বাড়ি তাঁর ছুটে চলা। শুধু নিজ গ্রাম নয় পাশের গ্রাম পাড়িল, বেড়াবাড়ি গ্রামেও নৌকা ঠেলে চলে যান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর জীবন সংগ্রাম। তবুও হাসিমুখে আঃ মজিদ। চাল, ডাল, তেল সহ হরেক রকম পসরা সাজিয়ে নৌকায় ব্যবসা আঃ মজিদের। কোনো কোনো দিন অসুস্থ হয়ে পড়লে আঃ মজিদের বৃদ্ধ মা মারিয়াম বেওয়া ঘাটে গিয়ে জিনিসপত্র বিক্রয় করেন।   জানা যায়, সংসারে মা, স্ত্রী, ২ মেয়ে এবং ১ ছেলে। ছেলের বয়স ৫ বছর। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে বাড়িতেই থাকে। বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু অর্থের অভাবে শশুরবাড়িতে পাঠাতে পারেননি। আঃ মজিদ নিজেও ডায়াবেটিস, প্রেসার সহ নানা রোগে আক্রান্ত। তাই জীবনের এই পথে ক্লান্ত, অবসান্ত। কিন্তু উপায় নাই। ছেলের বয়স সবেমাত্র ৫ বছর। সে থেমে গেলে হাল ধরবে কে? অজানা আশংকা আর দুঃ চিন্তায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। জীবনের প্রায় তিন যুগ নৌকায় জীবন যৌবন কেটে গেছে, পরিবর্তন আসেনি জীবন সংসারে। কুড়ে ঘরই রয়ে গেছে। একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। বিডি২৪লাইভ প্রতিবেদনকে আঃ মজিদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে ঘর দিচ্ছে, আমাকে যদি একটা ঘর করে দিতো। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপির কাছে তাঁর অনুরোধ স্টিলের বড় নৌকা করে দিলে ভাড়া খাটিয়ে জীবনের বাঁকি সময় কাটিয়ে দিবেন। ডাহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম আবুল কালাম বিডি২৪লাইভকে বলেন, খুব পরিশ্রমী মানুষ সে। সারাদিন নৌকায় গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি ফেরি করে জিনিসপত্র বিক্রয় করেন। হার না মানা পরিশ্রম করে আসছে সে। একজন সংগ্রামী মানুষ হিসেবে সে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: