অভিনব কায়দায় এটিএম বুথের টাকা লুট, ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২১, ০১:২৮ এএম
হাসান আল সাকিব, রংপুর থেকে: রংপুরের প্রাইম ব্যাংকের গোপন পাসওর্য়াডধারী এক কর্মকর্তার মাধ্যমেই লাখ লাখ টাকা লোপাট হয়েছে। অতিমারি করোনা ও নিজের বদলি আদেশকে কাজে লাগিয়ে অভিনব কায়দায় এটিএম বুথের ভল্ট থেকে টাকা লুট করেছেন আবু রায়হান। এ ঘটনায় শনিবার (২০ নভেম্বর) রাতে রংপুর নগরীর ডিসির মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে রংপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিকেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের রংপুর জেলা পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন জানান, গত গত বছরের ৬ অক্টোবর প্রাইম ব্যাংক রংপুর শাখার অ্যাসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট পীষুয কুমার রায় লিখিতভাবে জানান যে, রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকার কোতোয়ালি থানাধীন প্রেসক্লাবের বিপরীত পাশে রংপুর ভবনের নিচতলায় অবস্থিত তাদের ব্যাংকের এটিএম বুথ হতে ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা অজ্ঞাত হ্যাকার/চোর ই-ট্রাঞ্জেকশন, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে চুরি করেছে। ফলে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু হয়। মামলাটির তদন্তভার রংপুর পিবিআই গ্রহণ করে এবং তদন্তভার এসআই ওয়াহেদুজ্জামানের উপর অর্পন করা হয়। পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন আরও জানান, বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারদ্বয় মতামত প্রদান করেন যে, কোনো অস্বাভাবিক আঘাত কিংবা কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ভোল্টের লোহার পার্ট থেকে দুটি ক্যাসেট সরানো হয়েছে। এছাড়াও তারা আরোও মতামত প্রদান করেছেন যে, এটিএমটিতে কোনো প্রকার আঘাত কিংবা কোনো ক্ষতের এমনকি বাইরে থেকে কোনো প্রকার বল প্রয়োগ ছাড়াই ভল্ট থেকে টাকার ক্যাসেট সরানো হয়েছে। তাই এটি শুধুমাত্র পাসওয়ার্ড ও সেফডোর কি (চাবি) অপব্যবহারের ফলে সংঘটিত হয়েছে। জাকির হোসেন জানান, তদন্তে জানা যায় যে, এটিএম বুথে টাকা লোড দেয়ার সময় ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ২ জন পাসওয়ার্ডধারী অফিসার উপস্থিত থাকেন। একজন কাস্টমার সার্ভিস অফিসার মো. মোস্তাফিজ এবং অপরজন অফিসার আবু রায়হান। প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের রংপুর শাখা কর্তৃক তারাই নির্ধারিত গোপন পাসওর্য়াডধারী অফিসার এবং তারাই র্দীঘদিন হতে ভল্টে টাকা লোড দিয়ে আসছেন। তথ্য প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে তদন্তের একপর্যায়ে জানা যায় যে, আবু রায়হান বগুড়ায় বদলি হওয়ার পরেও তিনি গত বছরের ২০ আগস্ট তারিখ পর্যন্ত প্রাইম ব্যাংক রংপুর শাখায় কর্মরত ছিলেন। উক্ত এটিএম বুথ গত বছরের ১৭ জুন বিকল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মোট ৩ বার উক্ত ভল্টে টাকা লোড দেয়া হয়। এরমধ্যে প্রথম দিন টাকা লোড দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন পাসওয়ার্ড বহনকারী অফিসার মো. ফরহাদ ও আবু রায়হান। ২য় বার উপস্থিত ছিলেন আবু রায়হান ও ব্যাংকের ফ্যাসিলিটিজ স্টাফ মিলন মিয়া। তিনি এটিএম বুথে উপস্থিত হয়ে উক্ত মিলন মিয়ার মোবাইল ফোন থেকে সিনিয়র অফিসার ফরহাদের সাথে কথা বলে ফরহাদের নিকট রক্ষিত পাসওয়ার্ডটি নেন এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ভল্ট এর ডোর খুলে টকা লোড দেন। সর্বশেষ ৩য় বার ওই বছরের ৩ জুন ভল্টে টাকা লোড করার পূর্বে অফিসার আবু রায়হান ব্যাংকের অভ্যন্তরে সিনিয়র অফিসার ফরহাদের নিকট থেকে চিরকুটে পাসওয়ার্ড লিখে নিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা বুথে নিয়ে যান এবং ভল্ট লোড দেন। পুলিশ সুপার পিবিআই রংপুর এবিএম জাকির হোসেন জানান, গোপন দুটি পাসওর্য়াডই উক্ত ব্যাংকের একমাত্র অফিসার আবু রায়হান জানতেন। অতিমারী করোনা এবং নিজ বদলি আদেশের সুযোগ নিয়ে তিনি তার নিকটে থাকা ২টি গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সুকৌশলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এটিএম বুথের ভল্টে থাকা মোট ৯ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যান। জড়িত আরো ব্যক্তি ও টাকা উদ্ধারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: