রসুন আবাদে ঝুঁকছে কৃষক

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১১:১২ পিএম
আখলাকুজ্জামান, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে: বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় নরম কাদা মাটিতে চলছে বিনাচাষে রসুনের আবাদ। আমন ধান কাটার পর উপেক্ষাকৃত জমিগুলোতে কম খরচে বাড়তি লাভের আশায় প্রায় দেড় যুগ ধরে কৃষকরা প্রতি মওসুমে রসুনের আবাদকেই বেছে নিচ্ছেন। তবে এ বছর রসুনের বাজারে দরপতন ঘটলেও কৃষকরা রসুনের বীজ রোপনে মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, এবারো পুরুষ ও নারী শ্রমিকের পাশাপাশি স্কুল কলেজের খরচ, হাত খরচ, প্রাইভেট পড়ার টাকা ও পরিবারের আর্থিক জোগান দিতে অনেক দরিদ্র ছাত্রছাত্রী ব্যস্ত সময় পার করছেন রসুনের জমিতে। বাড়ির গৃহিণীরাও রসুন ভাঙ্গার কাজ করছেন। অনেকে আবার বাড়তি শ্রমিক নিয়োগ করছেন। এক মণ রসুন ভাঙ্গতে সময় লাগছে দুই দিন। তাদের দিতে হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। গুরুদাসপুর পৌরসদরের কৃষক তারিকুল ইসলাম তারেকসহ অনেকেই বলেন, এবার বাজার থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে রসুনের বীজ কিনেছি। গত বছরে উৎপাদিত রসুন ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। কিন্তু বাজার দর কমে যাওয়ায় এবার ভালো রসুনও ১ হাজার ১০০ টাকা মণ বিক্রি করতে হয়েছে এবং ছোট রসুন বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকায়। তবে ভালো ফলন এবং লাভবান হওয়ার আশায় রসুনের আবাদ করছি। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, সিধুলি গ্রামের কৃষক বিমল কুমার নামে একজন কৃষক প্রায় দেড়যুগ আগে আমন ধানের আবাদে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আর্থিক অনটনের কারনে রবিশস্য আবাদ করতে পারছিলেন না। ঘরে থাকা সামান্য রসুন নরম কাঁদা মাটিতে পুঁতে রেখেছিলেন। ফসল ওঠার পর দেখেন রসুনের ভাল ফলন হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হন তিনি। তার চাষ পদ্ধতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তিনি উপজেলার সেরা কৃষকের পুরস্কার পেয়েছেন। উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের সিধুলি গ্রামের রসুন চাষি বিমল, সালাম, আজাদ, শাহীন, রুহুলসহ অনেকে জানান, এক বিঘা জমিতে রসুন চাষের জন্য বীজবাবদ ৮ হাজার, সার-কীট নাশক বাবদ ৪ হাজার ৫০০ টাকা, জমি প্রস্তুত ও রোপন বাবদ শ্রমিক খরচ ৬ হাজারসহ আনুসাঙ্গিক মিলিয়ে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে যে সকল চাষি অন্যের জমি বর্গা (লিজ) নিয়ে আবাদ করেন তাদের ব্যয়টা বেড়ে যায়। এ বছর রসুনের দরপতন ঘটায় চাষিরা আবাদ করছেন ভেবেচিন্তে। এদিকে গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ জানান, এবার উপজেলায় ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হচ্ছে। রসুনের বীজ মণ প্রতি ১৯শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। রসুন আবাদকে ঘিরে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গড়ে উঠেছে শ্রমিকের হাট। এসব হাট থেকেই শ্রমিক ছড়িয়ে পড়ে খেত-খামারে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: