সাগর-রুনি হত্যাকান্ড: ১০ বছরেও রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দশ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। এখনো শেষ হয়নি তদন্ত, উদ্ঘাটিত হয়নি রহস্য। কিন্তু এই দশ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। মামলার তদন্তের কোন অগ্রগতি হয়নি। থানা পুলিশ, ডিবি ঘুরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত করছে এলিট ফোর্স র্যাব। অনেককে ধরপাকড়, অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কোনও আশার বাণী শোনাতে পারেনি মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এককথায়, মামলার তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই। পুরোটাই থমকে আছে তদন্ত। থানা পুলিশ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পর একের রড় এক জোড়া খুনের তদন্ত চালিয়েই যাচ্ছেন।
বহুবার বদল করা হয়েছে তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু কূল-কিনারা হয়নি। অপরাধী চিহ্নিত না হওয়ায় আদালতে দাখিল করা যায়নি অভিযোগপত্র। আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে তদন্ত কর্মকর্তারা এ পর্যন্ত সময় নিয়েছেন জাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো আলামত পরীক্ষা করে ঘটনাস্থলে দুজন পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে। কিন্তু তাদের চিহ্নিত করা যায়নি।
এদিকে অন্তহীন অপেক্ষায় পরিবারের সদস্যরা। ন্যায় বিচারের আশা ছাড়েননি এখনও। আশার প্রহর গুনছেন তারা। পরিবারের সদস্যদের এখনও বিশ্বাস, কোন একদিন হয়তো এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে। খুনিরা ধরা পড়বে। তাদের বিচার হবে। কিন্তু বিচার না পেয়েই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন রুনীর মা। সাগরের মা সালেহা মনিরও একই আশঙ্কা করছেন। তিনি বলেছেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন লোহার সিন্দুকে রেখে দেওয়া হয়েছে। চাবি হারিয়ে গেছে। তাই প্রতিবেদন দাখিল করা যাচ্ছে না। আমি চাই অন্তত মেঘ (সাগর-রুনীর একমাত্র সন্তান) যেন বিচার দেখে যেতে পারে।’ এদিকে সাগর-রুনী হত্যার এক দশকেও বিচার না হওয়ায় খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়েছে। এছাড়া তিন দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ডিআরইউ।
গত ২০১২ সালের এই দিনে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক গোলাম মোস্তফা সরোয়ার ওরফে সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনী রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের নিজ বাসায় খুন হন।এ ঘটনায় রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ওই থানার এক উপপরিদর্শক। চার দিন পর তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওপর ন্যস্ত করা হয়।
দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কয়েকজন কর্মকর্তার হাত বদল হয়ে বর্তমানে র্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করছেন। তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে শফিকুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো আলামতের ডিএনএ পরীক্ষায় ঘটনাস্থলে দুজন পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। ওই দুই অজ্ঞাত আসামিকে শনাক্ত করতে জোর প্রচেষ্টা চলছে। এ মামলায় র্যাব এ পর্যন্ত আট আসামিকে গ্রেফতার করেছে।
এরা হলেন-মিন্টু (বারোগিরা মিন্টু), মো. কামরুল ইসলাম হারুন, বকুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ, এনায়েত আহম্মেদ (হুমায়ূন কবীর), পলাশ রুদ্র পাল ও মো. তানভীর রহমান। এদের প্রথম ছয়জন কারাগারে ও পরের দুজন হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন।
জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বৃহস্পতিবার গনমাধ্যমে বলেন , শিগগিরই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের লক্ষ্যে কাজ চলছে। হত্যাকাণ্ডে সন্দেহজনক হিসাবে যাদের নাম আসছে, তাদের সবার ডিএনএ প্রোফাইল আমরা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছি। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ আলামতের সঙ্গে মেলেনি। তাই দুই অজ্ঞাত পুরুষকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি।
তিনি আরো বলেন, তদন্তভার পাওয়ার পর র্যাব সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করে এ পর্যন্ত ১৬০ সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। আট আসামিকে বিভিন্ন পর্যায়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে উন্নত দেশের সহায়তা নিয়েছি। এদিকে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সবশেষ তারিখ ছিল ২৪ জানুয়ারি। ওইদিন আবারও সময় প্রার্থনা করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এর আগে একইভাবে ৮৪ বার সময় নেওয়া হয়। আদালত সবশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: