বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ লাটিম খেলা!

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:৫১ পিএম

সোহাগ মাতুব্বর, (ভাংগা) ফরিদপুরে থেকে: একটা সময় প্রতিটা গাঁয়ে প্রতিটি মহল্লার অলি, গলি, বাঁশ ঝাড়, ভিটে, কিংবা মাঠে সারাদিন লাটিম খেলায় সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করতো দুরন্ত কিশোরেরা। ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রামীণ খেলা এটি। গ্রামীণ এই লাটিম খেলা আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে। দেশীয় যত প্রকার খেলা আছে এর মধ্যে অন্যতম একটি লাটিম খেলা, ছোট ছোট কিশোরেরা নানা কসরত করে খেলতো লাটিম। আধুনিক যুগে দেশ প্রবেশ করার পর দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দেশীও অনেক খেলা। অথচ আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ এই গ্রামীণ লাটিম খেলা।

লাটিম খেলার কৌশল:- প্রতিযোগীদের মধ্যে একজন লাটিম ঘুরিয়ে দেয় আর অন্যরা তাদের লাটিম ঘুরিয়ে ওটাকে আঘাত করার চেষ্টা করে।এভাবে সবাই একবার করে ঘোরায়। আল (লৌহশলাকাকে) কেন্দ্র বানিয়ে কাঠের বানানো গোলকটিকে খেলোয়াড় ২-৩ হাত দীর্ঘ এক টুকরো নেতি (দড়ি বা সূতলি) দিয়ে কেন্দ্র থেকে ক্রমশ গোলকটির নিচ পর্যন্ত ভালোভাবে পেঁচিয়ে হাতের প্রধানত তর্জনী ও বৃদ্ধঙ্গুল ব্যবহার ক'রে উঁচু থেকে ছুঁড়ে মাটির উপর ঘুরায়।

সাধারণত তিন ধরনের লাটিম খেলা হয়:- ১. বেল্লাপার, ২. ঘরকোপ এবং ৩. ঘুরতি কোপ।

১৷বেল্লাপার: বেল্লাপারে একটি দাগ কেটে সীমানা চিহ্নিত করা হয়। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় নির্ধারণী খেলায় যে লাটিম পরাজিত হয় তাকে ঘর থেকে নিজেদের লাটিম দিয়ে আঘাত করে করে প্রতিযোগীরা সীমানা পার করে দেয়। ঘুর্ণায়মান লাটিম হাতে নিয়েও প্রতিযোগী লাটিমকে আঘাত করা যায়। মাটিতে রাখা লাটিমকে আঘাত করতে ব্যর্থ হলে ঐ লাটিমের স্থানে ব্যর্থ লাটিমকে রাখা হয় এবং তাকে বেল্লা পার করা হয়। শর্ত অনুযায়ী সীমানা পার করা লাটিমকে নিজের লাটিম বা দা দিয়ে কোপ দেওয়া হয়।

২|ঘরকোপ: লাটিমের ফিতা ও লাটিম দিয়ে একটি বৃত্ত আঁকার পর বৃত্তের ভিতর বন্দী লাটিমগুলোকে রাখা হয়। বৃত্তের ভিতরের লাটিমগুলিকে বাইরের মুক্ত প্রতিযোগীদের লাটিম দিয়ে আঘাত বা কোপ মেরে ক্ষত করাই এই লাটিম খেলার উদ্দেশ্য।

৩|ঘুরতি: প্রতিযোগীদের মধ্যে একজন লাটিম ঘুরিয়ে দেয় আর অন্যরা তাদের লাটিম ঘুরিয়ে ওটাকে আঘাত করার চেষ্টা করে।এভাবে সবাই একবার করে ঘোরায়।

প্রসঙ্গত কিছু কিছু অঞ্চলে আরো একটি বিশেষ ধরনের লাটিম খেলার প্রচলন আছে যাকে দা কোপ বলা হয়। এই খেলায় প্রতিযোগিদের লাটিম নির্দিষ্ট স্থানে রেখে চোখ বেধে, হাতে দা নিয়ে ঐ লাটিম কে কোপ দিতে হয়। যারা যত লাটিম কেটে ফেলতে পারে তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

এই বিষয়ে কলেজ শিক্ষার্থী মোঃ সেলিম মাতুব্বর বলেন, আমরা ছোট বেলায় অনেক খেলতাম এই ঐতিহ্যবাহী লাটিম খেলা। কিন্তু এখন তো বাচ্চারা ফোনে বিভিন্ন গেমস্ খেলে সময় পার করছেন। আগামী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তোবা জানবে না যে লাটিম খেলা বলতে কিছু আছে। এই বিষয়ে সরকারি কে. এম কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক জাহিদ হাসান বিন মাকসুদ বলেন, একটা সময় গ্রাম অঞ্চলে আগে এই লাটিম খেলা মাঠের কোনে বাড়ির আঙিনায় গাছের শীতল ছায়ার কিশোরেরা মেতে থাকতো।আগে দুরন্ত কিশোরেরা এই খেলা সকালে খেলে স্কুল যেতো, আবার বিকাল বেলা লাটিম খেলায় মেতে উঠতো।

তিনি আরো বলেন, এখন তো কিশোরেরা মোবাইলে গেমস, ব্রাউজিং, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত। অথচ এখন কিশরেরা আধুনিকতার নামে করছে নোংরামী। ইতিহাস কে লালন করে এই ছোট লাটিম খেলা। কিন্তু আধুনিকতার নামে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীন লাটিম খেলা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: