রিয়াদে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মহান শহিদ দিবস পালন

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:১৪ পিএম

সাগর চৌধুরী, সৌদি আরব (রিয়াদ) থেকে: যথাযোগ্য মর্যাদায় সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশের জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী পরিচালিত একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে। মহামারী করোনার প্রাদূর্ভাবের কারণে প্রায় দুই বছর পর বিদ্যালয় আঙিনায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজন করায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ছিলো অনেক বেশি প্রাণবন্ত।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য একুশের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি এবং মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এসময় বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি ভিত্তিক দেয়ালিকা প্রকাশ উপস্থিত সকলের মাঝে বেশ উদ্দীপনা জাগ্রত করে।

আয়োজিত অনুষ্ঠানে  একুশের মহান শহিদদের উৎসর্গ করে বিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ দিলওয়ার হসাইনের সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা “নীলশিখা”র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এসমা আইয়ুব হিবা ও নাজনীন আক্তারের  যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার-কনস্যুলার এসএম রাবিকুল্লাহ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ডাইরেক্টর্সের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম, ফাইন্যান্স ডাইরেক্টর মোঃ আব্দুল হাকিম ও কালচারাল ডাইরেক্টর সফিকুল সিরাজুল হক প্রমুখ।

সকালে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফেজ শাহেদ বিন শফিক এর পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়তের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রদত্ত বাণী পাঠ করেন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তামিম মজুমদার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাহা অথৈ। বাণী পাঠের পরে আগত অতিথিদের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোঃ আফজাল হোসেন। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে শিক্ষকদের পক্ষে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন সমাজ বিজ্ঞানের প্রভাষক সানজিদা বেগম, পদার্থ বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মোঃ সরোয়ার জামান। অভিভাবকদের পক্ষে মোঃ মোসলে উদ্দিন মুন্না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিগ্রেডিয়ার এসএম রাকিবুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় কারিকুলাম অনুযায়ী এই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এলে মনে হয়, আমি আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে অবস্থান করছি। তিনি বাংলাদেশ ও বাঙালি সংস্কৃতি চর্চার অনন্য বিদ্যাপীঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের গৃহিত কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তাঁর ছাত্রজীবনে একুশের অনুষ্ঠান আয়োজনের স্মৃতিচারণ করে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ সেবার ব্রত গ্রহণ করার আহ্বান জানান। আমরা সত্যিকার অর্থে এক বীরের জাতি। আমাদের বীরত্ব গাঁথা পুরো বিশ^ময় ছড়িয়ে আছে। সিয়েরা লিয়নে আমাদের দেশীয় ক্সসনিকদের অবদানে বাংলাদেশ সড়ক নির্মিত হয়েছে। তাদেরও দ্বিতীয় মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের মাতৃভাষার গৌরব গাঁথাকে সমুজ্জ্বল করেছে। আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মাতৃভাষার আন্দোলন করতে গিয়ে জাতির পিতা বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। কারাগারে বসেও তিনি আন্দোলনকারী বীর জনতাকে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করে মাতৃভাষার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করে তোলেন। দেশ নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতৃভাষার মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষে আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাঁচটি ভাষায় উপজাতিদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে।

বিশেষ অতিথি জনাব সফিকুল সিরাজুল হক ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্য শাহাদাত বরণকারী সকলের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের অসামান্য অবদানের জন্য সকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের কথা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন।

মোঃ আবদুল হাকিম তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলনে ও স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করার পাশাপাশি জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শি নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন।

তিনি আরও বলেন, শত ত্যাগের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষার অধিকার ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হলেও সর্বস্তরে এখনো বাংলা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: