দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে কুষ্টিয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস

প্রকাশিত: ০৬ মার্চ ২০২২, ০৭:২৬ পিএম

শৈবাল আদিত্য, কুষ্টিয়া থেকে: শবে বরাতের দুই সপ্তাহ বাকি৷ এরই মধ্যে কুষ্টিয়ার বাজারগুলোতে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা৷ অপরদিকে রমজান আসতে এখনো মাসখানেক বাকি৷ আসন্ন শবে বরাত ও রমজানকে ঘিরে বাজারে লেগেছে আগুন৷ কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটি মার্কেট, বড় বাজার সহ অন্যান্য কাঁচাবাজারগুলোতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাঁচামরিচসহ সব ধরনের শাকসবজির দাম৷ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ থেকে ৪৫ টাকার কাঁচামরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা৷ অর্থাৎ গত সপ্তাহের তুলনায় দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা৷ অপরদিকে হু হু করে বাড়ছে অন্যান্য সবজির দামও৷

রবিবার (৬ মার্চ) শহরের বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩ টাকা, দেশি পিঁয়াজ গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ টাকা, বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, দেশি আদা গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ টাকা কেজি, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়, দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা৷ সবজির দোকানগুলোতে যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লাউ, কাঁচা পেপে, লাল শাক, বেগুন, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, করলা, কচুর লতি, ঢেঁড়স সহ অন্যান্য সবজির৷ তবে দামের ক্ষেত্রে কোন সবজিই গত সপ্তাহের বাজারদরে নেই৷ গত সপ্তাহের তুলনায় সব সবজির দামই বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা৷

এছাড়া বেড়েছে মুদি পণ্য ও মসলার দামও৷ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭৫ টাকা, সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা লিটার, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা৷ মুগডাল ১৩০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহে যা ছিল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ৭৫ টাকা কেজি, যা ছিল ৭০ টাকা কেজি, মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা, গত সপ্তাহে যা ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০ টাকা৷

এছাড়া জিরা প্রতি কেজি ৪২০ টাকা, বড় এলাচ কেজি ২৫০০ টাকা, ছোট এলাচ কেজি ১৮০০ টাকা, দারুচিনি ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ১০০০ টাকা, কিসমিস ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে৷ মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ৬৩ টাকা, কাজল লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে, গত সপ্তাহে যা ছিল ৫৪ টাকা, মোটা স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি, যা ছিল ৪৫ টাকা৷ খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৩ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা, প্যাকেট আটা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, যা ছিল ৩৮ টাকা৷

কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটি মার্কেট, বড় বাজার, মঙ্গলবাড়িয়া বাজার ঘুরে দেখা যায় মুরগী, গরু ও খাসির মাংসের দাম আরেক দফা বেড়েছে৷ ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩৫ টাকা, সোনালি মুরগী কেজি ২৭০ টাকা, যা ছিল ২৪০ টাকা এবং দেশি মুরগী ৪০০ থেকে ৪১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা৷ এছাড়া গরুর মাংস ৬২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, গত সপ্তাহের তুলনায় যা বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা৷ গত সপ্তাহে খাসির মাংসের দাম ছিল ৮০০ টাকা কেজি, এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা কেজি দরে৷ ফার্মের মুরগীর ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকা হালি (৪টি), যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৪ টাকা৷

নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যম আয়ের মানুষের পক্ষে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে৷ তারা বাজারে গিয়ে চাল কিনলে তেল কিনতে পারছেন না, তেল কিনলে ডাল কিনতে পারছেন না এমন দশায় পড়েছেন৷ বলা যায় মানুষের এক দুর্বিসহ অবস্থা যাচ্ছে৷ নিম্ন আয়ের মানুষের তো আরো করুণ অবস্থা! তাদের খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে৷

পৌর এলাকার চাউলের বর্ডার এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মতিউল ইসলাম৷ তিনি বাজার করতে এসেছেন কুষ্টিয়া মিউনিসিপ্যালিটি কাঁচাবাজারে৷ তিনি বলেন, 'অনেকদিন যাবত বাজারে চালের দাম খুব বেশি৷ বর্তমানে ৪০ টাকায়ও মোটা চাল পাওয়া যাচ্ছে না৷ এরই মধ্যে তেল, চিনি, ডাল, আটার দামও বেড়েছে৷ এছাড়া তেলের দাম তো নাগালের বাইরে চলে গেছে৷ আমার এখন স্বল্প বেতনের টাকায় সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে৷'

কুষ্টিয়া বড় বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, 'আমদানি কম তাই দাম বেশি৷' তিনি আরো বলেন, 'শীতকালীন সবজি শেষের দিকে তাই দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷' ভূক্তভোগীরা বলছেন, বাজারে সরকারের তেমন নজরদারি নেই৷ তাদের অভিযোগ, মাঝে মধ্যে কোথাও কোথাও ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে দু'চারজন কে জরিমানা করে সেটা মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করা হয়৷ বাস্তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কোথাও তদারকি নেই৷

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: