শতবর্ষে পা রাখলো বিয়ানীবাজারের পিএইচজি স্কুল

ডি এইচ মান্না, সিলেট থেকে: শতবর্ষে পা রাখলো ইতিহাসের তিনকালের সাক্ষী সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার ‘পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়’। যা সমগ্র দেশে- পি এইচ জি স্কুল নামে সুপরিচিত। পূর্ব সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠ ব্রিটিশ শাসন, পাকিস্তানের শোষণ আর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় দেখেছে। এই প্রতিষ্ঠানটি যেন ভারতীয় উপমহাদেশের শিক্ষা-দীক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রাম, এবং ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক।

তথ্যসূত্রে জানাযায়, ১৯১৭ সালে বৃটিশ শাসনামলের পবিত্র নাথ দাসের অক্লান্ত পরিশ্রম আর সাহসী মনোভাবে ফল আজকের এই শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান। অনেক বাধাবিপত্তি পরও তিনি পরিকল্পিত নগরী পাকশীর অপরুপ নৈসর্গিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত করেন বিদ্যালয়টি। ১৯১৭ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির প্রথম শিক্ষার্থীদের তালিকায় যার নাম ওঠে আসে তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী দার্শনিক অধ্যাপক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব (শহীদ ড. জি.সি দেব)। শতবর্ষ পূর্বের প্রতিষ্ঠানের গুণী শিক্ষার্থী গোবিন্দ চন্দ্র দেব আজ প্রাক্তন শিক্ষার্থীর তালিকায়। তার সাফল্য ও কৃতৃত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানটির সুনামও সাফল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারতীয় উপমহাদেশে যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছিল এর মধ্যে বিয়ানীবাজারের পি এইচ জি স্কুলের নাম প্রথম সারিতে। প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী আজ দেশ-বিদেশে নানা জায়গায় সু-প্রতিষ্ঠিত। শতবর্ষের এই বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব (প্রায়) ১৫ জন শিক্ষাগুরু পালন করেছেন। প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন শ্রী হেমাঙ্গ লাল ব্যানার্জী আর বর্তমান (২০২২) প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক আব্দুল হেকিম।

দেশবরেণ্য অনেক বুদ্ধিজীবী, বিচারপতি, মন্ত্রী, সচিব, কবি, ডক্টর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গের শৈশব-কৈশোর কেটেছে এই স্কুলের আঙ্গিনায়। এ প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র খ্যাতিমান পন্ডিত, গবেষক আর জ্ঞানতাপসীদের ছোঁয়া লাগায়নি বরং তাদের আলোয় আলোকিত করেছে সমগ্র দেশকে।

এখানেই পড়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ (এম.পি), বিচারপতি ব্যারিস্টার আব্দুল হাসিব, সাবেক সচিব ড. আইয়ুবুর রহমান, বিচারপতি ড. আবু তারিক, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর মক্তদির আলি, আশির দশকের শক্তিমান কবি ফজলুল হক, সরকারের মন্ত্রী পরিষদের সহকারী সচিব আব্দুল ওদুদ, বাংলাদেশ রেলওয়ের (সাবেক) প্রকৌশলী তমিজ উদ্দিন লোদী, বাংলাদেশ ব্যাংকের (সাবেক) পরিচালক ইরফান আলী, সাবেক ব্রিগেডিয়ার মালেক আহমদ, রাজনীতিবিদ সরওয়ার হোসেন, লোকমান আহমদ, ডাঃ মতিন উদ্দিন আহমদ, সহ অসংখ্য সাবেক শিক্ষার্থী জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন দেশবিদেশে। শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন আয়োজক কমিটি। যথাক্রমে আজ রবিবার ও আগামীকাল সোমবার (২৭ ও ২৮ মার্চ) দুইদিন ব্যাপী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, শতবর্ষে উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আজ রবিবার (২৭ মার্চ) সকালে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক বিশাল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ (এমপি) ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন।শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখরিত সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। বিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিদেশ থেকে এসেছেন সাবেক অনেক শিক্ষার্থী। সকলের আবেগ আর ভালোবাসার ক্যাম্পাস এক মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে।

আজ রবিবার (২৭ মার্চ) উৎসব উদ্বোধনী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী। আগামীকাল সোমবার (২৮ মার্চ) সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। গতকাল শুক্রবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যায় উৎসব অনুষ্ঠানের সূচী প্রকাশসহ ব্যাপক আয়োজন নিয়ে বিয়ানীবাজারের কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের দায়িত্বশীলরা।

পরিষদের প্রধান সম্মনয়ক সাহেদ আহমদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন উদযাপন কমিটির আহবায়ক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। বক্তব্যকালে তিনি অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরে উৎসব সফল করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল হাসিব জীবন বলেন, শত বছরের এ উৎসব ঘিরে ব্যিালয় প্রাঙ্গন নবীন প্রবীনদের মিলন মেলায় পরিণত হবে। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও উপজেলার সবাইকে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করার আহবান জানান। পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূতি উদযাপন অনুষ্ঠানের দেশ বরণ্য ব্যক্তিদের পাশাপাশি সমাপনী দিনে সঙ্গীত পরিবেশন ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ এবং উদ্বোধনী দিনে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন আশিক।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্ণ করেছে। বিভিন্ন কারণে উৎসব আয়োজন বিলম্বিত হলেও শেষ পর্যন্ত শতবর্ষপূতি উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ায় উচ্ছাসিত সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।