আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যা; কে এই শুটার মাসুম

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২২, ১০:২৬ পিএম

রাজধানীর শাহজাহানপুরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও বদরুন্নেসা কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ। ডিবির দাবি, গ্রেফতার মাসুম একজন শুটার। মাসুম দেশ ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলেন বলে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন জাহিদুল ইসলাম টিপু। একই ঘটনায় নিহত হন যানজটে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন প্রীতি। গুলিতে টিপুর গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্নাও আহত হন। তবে প্রীতি হত্যার টার্গেট ছিলেন না বলে জানা গেছে।

রবিবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, বগুড়া থেকে গ্রেফতার হওয়া মাসুমের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। গ্রাফিক আর্টস ও ডিজাইনে পড়াশুনা করা মাসুম নিজে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৪ থেকে ৫টি মামলা রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা টিপুকে হত্যার জন্য মাসুমের কাছে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল সরবরাহ করা হয় গত বুধবার। তবে কে বা কারা অস্ত্র সরবরাহ করেন এবং ঘটনার নেপথ্যে মাস্টারমাইন্ড কারা তা জানা যায়নি।

এছাড়া গ্রেফতারের পড় আকাশের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। হত্যার আগের দিনই টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ স্বীকার করে সে। রোববার (২৭ মার্চ) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার জন্য ঘটনার ৫ দিন আগে ‘কন্ট্রাক্ট’ (চুক্তি) করে মাসুম মোহাম্মদ আকাশ নামে এক পেশাদার খুনি। তিন দিন আগে সে নাম পায় কাকে খুন করতে হবে। ঘটনার আগের দিন টিপুকে কমলাপুরে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সে। হত্যাকাণ্ডের জন্য টাকা নয়, আগের কয়েকটি মামলা তুলে নেওয়াসহ বিশেষ সুবিধার নিশ্চয়তা দেওয়া হয় তাকে।

তিনি আরো জানান, ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শুটার মাসুম জানিয়েছেন, ঘটনার আগের দিন ২৩ মার্চ জাহিদুল ইসলাম টিপুকে তার কমলাপুরের রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় যাওয়ার রাস্তা অনুসরণ করে গুলি করার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু লোকজনের উপস্থিতির কারণে সেদিন তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এসময় ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শুটার আকাশ জানিয়েছে, ঘটনার আগের দিন ২৩ মার্চ জাহিদুল ইসলাম টিপুকে তার এজিবি কলোনির রেস্টুরেন্ট থেকে বাসায় যাওয়ার রাস্তায় অনুসরণ করে গুলি করার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু বেশি লোকজন থাকায় সে ব্যর্থ হয়। আসামির বরাত দিয়ে তিনি জানান, পর দিন আবার সে টিপুকে অনুসরণ করে। টিপুর গাড়ি শাহজানপুরে রাস্তায় যানজটে দাঁড়ালে টিপুকে লক্ষ্য করে এলাপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যান আকাশ।

ডিবির এই মুখপাত্র আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানান, হত্যাকাণ্ডের তিনদিন আগে শুটার মাসুম ও তার এক সহযোগী হত্যা করার জন্য টিপুর নাম পান। আর তখন থেকে তিনি তার সহযোগীকে নিয়ে রেকি শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডের আগের দিনও তারা মোটরসাইকেল নিয়ে এজিবি কলোনির ভেতরে অবস্থান করছিলেন টিপুকে হত্যার জন্য। সেদিন সুযোগ না পাওয়ায় পরদিন হত্যা মিশন শেষ করেন তারা। কিলিং মিশনে ছিলেন মাসুম এবং তার সহযোগী ছিলে মোটরসাইকেল চালানোর দায়িত্বে। ঘটনার পরদিন একটি গাড়ি নিয়ে মাসুম জয়পুরহাট চলে যান। এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, তদন্তে নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ওই গাড়ির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করার পর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (২৬ মার্চ) রাতে জয়পুহাট থেকে শুটার মাসুমকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: