বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ক্যাম্পাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২২, ১২:১০ এএম

২৮ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ। ২০০৬ সালে এই দিনে শালবন বিহারের পাদদেশে লাল-সবুজে ঘেরা মধ্য-পূর্বাঞ্চলে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হিসাবে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম ব্যাচে ৭টি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদে ১৯টি বিভাগ রয়েছে।

লাল সবুজের সমারোহ। অমূল্য প্রত্নসম্পদে ভরপুর লালমাই পাহাড়। শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখরিত থাকে পুরো প্রাঙ্গণ। এই সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে ২৮মে প্রতিষ্ঠা বার্ষিক হিসাবে পালন করে আসছে। এই প্রতিষ্ঠা বার্ষিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে লিখছেন শাহীন আলম।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, তবে অনেক না পাওয়ার মাঝেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন যা আমাদের জন্য গর্বের। শিক্ষকতা ছাড়াও আমাদের বড় ভাইয়া বিসিএস, শিক্ষা, প্রশাসন এবং পুলিশ ক্যাডারে সুনামের সাথে চাকরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো আমাদের যোগ্যতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করছে দেশে ও দেশের বাহিরে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম জন্মদিনে দেশের সনামধন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে এই প্রত্যাশা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে জ্ঞান অর্জনে পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করে বিশ্ব র‍্যাংকিং এ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রথম সারিতে থাকবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করি। উঁচু-নিচু টিলার ফাঁকে সুউচ্চ দালান।

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাফসা মিথিলা বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) আমার কাছে একটি আবেগের নাম। ২০১৮ সালের শেষের দিকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেই লাল-সবুজ পাহাড়ের বুকে ভবন ও ক্যাম্পাসে গেইটে পুষ্প শোভিত এই ক্যাম্পাসের প্রেমে পড়ে যাই। চারদিকে লাল-সবুজের ঘেরা সাজানো গুছানো একটি ক্যাম্পাস। কাঁঠাল তলা, ফরেস্ট অব আডের্ন এর সকাল বেলা পাখির ডাক, বাবুই চত্ত্বরে আড্ডা, সান-সেট ভ্যালিতে বসে সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করতাম। এই ক্যাম্পাস বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ দেখা যায়। ক্যাম্পাসের আসার পর তৈরি হলো দৃষ্টিনন্দন গেইট, মুক্তমঞ্চ ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। এই ক্যাম্পাসে প্রতিটি জায়গা আমাকে চেনে তাই তাদেরকে ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হবে। তাছাড়া খুব দ্রুত নতুন ক্যাম্পাসে কাজ শেষ হলে বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয় হবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ভালোবাসার প্রিয় ক্যাম্পাস শত শত বছর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাক, ১৬তম জন্মদিনে এটাই কামনা।

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম, লাল মাটির প্রিয় প্রাঙ্গন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ তম বর্ষে পদার্পন করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জ্ঞান চর্চা থেকে শুরু করে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে প্রিয় এই বিদ্যাপিঠ। একজন শিক্ষার্থী অনেক স্বপ্ন এবং আকাঙ্খা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। সকলে তার লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত করার পেছনে ছুটে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারকদের এখন গুণগত মানের উপর নজর দেওয়া উচিত। নবীন ক্যাম্পাস হওয়ার কারনে অনেক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তারপরেও বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য জ্ঞানগত এবং গুনগত উন্নয়ন করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের গবেষণায় মনোনিবেশ করার জন্য গবেষণাখাত উন্নত করা এখন সময়ের দাবি। সঠিক জ্ঞান চর্চা করার জন্য মানসম্মত একটা লাইব্রেরি এবং ভাষা ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা। আশা করি খুব শিঘ্রই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা গুলো পূরণ করবে এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করবে।

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিমা আফরোজ বলেন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, শহীদ মিনার, কাঁঠাল তলা, মুক্তমঞ্চ, কেন্দ্রীয় মাঠে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা, একাডেমিক ভবন, ইংরেজি চত্ত্বর , বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেইটের বাইরে, বিশ্ববিদ্যালয় বাসের ভেতরে, ক্যান্টিনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আড্ডা এবং দলবেঁধে বন্ধুদের খোশগল্পে এসব মিলে ভরপুর হয়ে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। আমাদের ক্যাম্পাসে লাল-সবুজের ঘেরা। প্রকৃতি এবং পরিবেশগত অবস্থানের দিক বিবেচনায় এখানে পড়ালেখার পরিবেশ অনুকূলে থাকা সত্বেও এখানকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার মান,গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো এখনো কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, সংস্কৃতি চর্চায় যে সংগঠনগুলো আছে সেগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং এন্টারপ্রনারশিপ ডেভেলপমেন্টের মত যুগোপযোগী সংগঠন গঠনে সহায়তা করা, সকলের মতামত পেশ করার সুযোগ সৃষ্টি করা। জ্ঞানচর্চাই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: