সীতাকুন্ড অগ্নিকান্ড: লাশ শনাক্তে শেষ স্মৃতি ছবি নিয়ে স্বজনদের ছোটাছুটি

কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বিপর্যস্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড। ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২১ ঘণ্টা পার হলেও এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন। এখনো ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। ইতিমধ্যে এই মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরো দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ যে যার মতো করে অগ্নিদগ্ধদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। কেউ পুড়ে অঙ্গার হওয়া দেহগুলো বের করে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসছেন। এরমধ্যেও দিনভর কিছু মানুষ ছুটছেন এদিক থেকে ওদিকে। এরা কেউ খুঁজছেন প্রিয় সন্তানকে, কেউ আবার ভাই, কেউ খুঁজছেন তার বাবাকে। কারো প্রিয় স্বামীর খোঁজ না মেলায় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন।
মর্মান্তিক এই ঘটনায় শহরের হাসপাতালে চলছে যমে-মানুষে টানাটানি। আহতদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের বাতাস। ওষুধ, চিকিৎসক, রক্তদাতা ও স্বজনদের ছুটোছুটি নগরীর প্রতিটি হাসপাতালে। কারো হাত শেষ স্মৃতি হিসেবে ছবি, কারো আবার মোবাইলে ধারণ করা ছবি নিয়ে পাগল প্রায় হয়ে ছুটতে দেখা গেছে তিনভর। যদিও আগুনের তাপে বেশিরভাগেরই চেহারা চেনা দায় হয়ে গেছে। এমন ভাগ্যবরণ যাদের করতে হয়েছে তাদের লাশ ডিএনএ পরীক্ষা করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিছু সময় বাদে বাদে স্বজনরা বলছেন জীবিত অথবা মৃতু যেভাবেই হোক তারা সন্তান, ভাইদের খুঁজে বের করে দেয়া হোক।।
এদিকে নিহতদের লাশ শনাক্তে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়ে পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মো. মনির হোসেন। তিনি বলেন, আঙুলের ছাপের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ১৭ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। যাদের আঙুলের ছাপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না তাদের ডিএনএ পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে শনাক্ত করা হবে।এখন পর্যন্ত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪ জনের পরিচয় মিলেছে। অন্যান্যদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার-স্বজনরা হাসপাতালে এখনো আসেননি। আবার শরীরের অধিকাংশ পুড়ে যাওয়ায় অনেক মরদেহ শনাক্ত করার মতো অবস্থায় নেই। ফলে এখনো অনেকের পরিচয় মেলেনি।
প্রাথমিকভাবে নিহতদের মাঝে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন- কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মনিরুজ্জামান, ভোলার দক্ষিণ বালিয়ারার হাবিবুর রহমান, বাঁশখালীর রবিউল আলম, মুমিনুল হক, মহিউদ্দিন, তোফায়েল আহমেদ, নোয়াখালীর চাটখিলের আলাউদ্দিন, মো. সুমন, যশোরের ইব্রাহীম হোসেন, রানা মিয়া, নিপুন চাকমা, শাকিল, আফজাল হোসেন ও নয়ন। বিএম কনটেইনার ডিপোর মুখপাত্র শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতরে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কন্টেইনার থেকে অন্য কন্টেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একটি কন্টেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, স্থানীয় শ্রমিকসহ অনেকে হতাহত হন। পরবর্তী সময়ে ইউনিট আরও বাড়ানো হয়। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের ১৮৩ কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। এছাড়া নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: