খামার থেকে গরু বিক্রির আশা খামারিদের
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকার নবাবগঞ্জে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত রয়েছেন গো-খামারিরা। এ বছর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৭ হাজার ৫৬২টি খামারে ৬ হাজার ৯৩২টি গরু-মহিষ এবং ১ হাজার ২৯৮টি ছাগল ও ভেড়াসহ পারিবারিকভাবে ১৭ হাজার ৫৭৯টি গবাদিপশু মোটাতাজা করা হচ্ছে। প্রতিবছর ঈদে দেশীয় গরুর চাহিদা ভাল থাকায় খামারিদের পাশাপশি পারিবারিকভাবে পালন করছেন কৃষকরাও। প্রতি বছর এসব সুস্থ গরু নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ আশেপাশের জেলাগুলোর হাটে বিক্রি করা হয় বলে জানিয়েছেন খামারিরা। তবে এবার খামার থেকেই গরুগুলো বিক্রির চিন্তা ভাবনা করেছেন খামারিরা।
স্থানীয় প্রাণী সম্পদ বিভাগের মতে, দেশীয় পদ্ধতির মোটাতাজাকরণ পশুর চাহিদা বেশি থাকায় এ খামারগুলো গড়ে উঠেছে। এছাড়া ক্ষতিকর হরমোন ও ইনজেকশন প্রয়োগে গরু মোটাতাজাকরণের কুফল প্রসঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশীয় পদ্ধতি গ্রহণ করছে খামারি ও কৃষক।
উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকার ভাই ভাই, হযরতপুর এলাকার শাহরিফ ভূঁইয়া, অনিক ডেইরি ফার্ম ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পশুর যত্ম নিচ্ছেন খামারিরা। পশুগুলোকে রাখা হয়েছে শুষ্ক জায়গায়। ঘরের ভেতরে রয়েছে ফ্যান। খাওয়ানো হচ্ছে ঘাস, খড়, ভুসি ও খৈলসহ দেশিয় খাবার। গরু মোটাতাজাকরণে কোনো প্রকার রাসায়নিক দ্রব্য খাওয়ানো হচ্ছে না বলে জানান খামারিরা।
বেশির ভাগ খামার সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতির ঘাস, লতাপাতা, খড়, গুড়সহ বিভিন্ন ধরনের ছোলা, ডাল, খৈল, ভূষি ও ভাতের মাড় খাওয়ানোর মাধ্যমে ও সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য সম্মতভাবে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। তবে খামারীরা জানিয়েছেন গরুর খাদ্যের দাম বেশি থাকায় ন্যায্য মূল্য নিয়ে শঙ্কায় তারা। এ দিকে খামার থেকেই গরু বিক্রির প্রত্যাশা করছেন খামারীরা।
কৃত্রিমতা ছাড়াই গরু হৃষ্টপুষ্ট করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অনিক ডেইরি ফার্মের মালিকরা। উপজেলার কান্দামাত্রা এলাকায় অবস্থিত অনিক ডেইরি ফার্মটির মালিক মায়া রানী বাউল জানান, ‘আমরা গরুর খাবারের ব্যাপারে অত্যন্ত যত্মশীল। এখানে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ দেশিয় খাবার গরুকে খাওয়ানো হয়। সাধারণত গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খেসারি, মাসকলাই, মটরের ভুষিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। এ নিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে ক্রেতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন না এবং এ ধরনের গরুর মাংস খেয়েও মানুষের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। মোটাতাজা করার জন্য কোন প্রকার রাসায়নিক খাবার দেয়া হয় না।’
এছাড়াও উপজেলার বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর, বারুয়াখালী ও শোল্লা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক হারে গড়ে উঠেছে এ ধরনের পশু খামার। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে খামারি ও পারিবারিক পর্যায়ের গরু পালনকারীদের মধ্যে ততই আশা দানা বাঁধছে। এ বছর দেশীয় গরুর চাহিদা ও দাম ভালো পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকার ভাই ভাই এগ্রো ফার্মের মালিক মজুন বেপারী বলেন, তাদের খামারে মোট ২৫টি গরু রয়েছে। যার মধ্যে গাভি ১টি, ষাড় ২৩টি ও বকনা ১টি। এসব গরুর আলাদা চাহিদা রয়েছে জানিয়ে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন। এবার গরুগুলো বাড়ি থেকে বিক্রি করা হবে। ইতোমধ্যে বেশ সাড়াও পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
উপজেলার বান্দুরা ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামের ‘শাহরিফ ভূইয়া ডেইরী ফার্ম’ নামের খামারের মালিক কালু ভূইয়ার জানান, ‘তার খামারে এবার ছোট বড় মিলে ২৫টি উন্নত মানের ষাঁড় গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে দেশী ও শাহিয়াল জাতের নানা বয়সের গরু সংগ্রহ করে লালন পালন করে বড় করেছে এ খামারি। ছোট, মাঝারি ও বড় সব সাইজের গরু রয়েছে এ ফার্মে। একেকটা গরুর ওজন সর্বনিম্ম ৩ মণ থেকে সর্বোচ্চ ১৩ মণ পর্যন্ত। সাড়ে তিন লাখ থেকে শুরু করে নব্বই হাজার টাকার মধ্যে এ খামারে গরু বিক্রি করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ভালো দামে গরুগুলো বিক্রি করার প্রত্যাশা তার’।
প্রাণিসম্পদ মাঠ সহকারী মো. লিটন মিয়া জানান, গরু মোটাতাজাকরণ খামারে যাতে ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার না করে সে ব্যাপারে খামারি ও কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও এর ব্যবহার বন্ধে পর্যাপ্ত নজরদারি রাখা হচ্ছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ফারহানা জাহান বলেন, বছর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ৭ হাজার ৫৬২টি খামারে ৬ হাজার ৯৩২টি গরু-মহিষ এবং ১ হাজার ২৯৮টি ছাগল ও ভেড়াসহ পারিবারিকভাবে ১৭ হাজার ৫৭৯টি গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এতে উপজেলার কোরবানির গরুর চাহিদা পূরণ হবে। খামারী ভালো লাভবান হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়াও এবছর উপজেলায় গরু মোটাতাজাকরণে অ্যান্টিবায়েটিক, গ্রোথ হরমোন, স্টেরয়েড ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ বন্ধে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: