দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২২, ০৬:০২ পিএম

মেহেদী হাসান হাসিব, নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে ভোট হবে না-কি ব্যালটে এ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌছাতে চাই নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইভিএম নিয়ে রাজৈনিতক দলগুলো পক্ষে-বিপক্ষে সমান- সমান মত দিয়েছে। যা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন বিশ্লেষণ করছে। প্রথম ডাকেই দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি দলের সাড়া পেয়েছে। সব কিছু বিশ্লেষণ করে কোন পদ্ধতিতে কতটি আসনে কীভাবে ভোট করবে তা মাস দুয়েকের মধ্যেই চূড়ান্ত করতে চায় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

আগামী বছরের শেষেরদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা করে সব ধরনের প্রস্তুতির লক্ষ্যে এগোচ্ছে কমিশন। ইভিএমে ভোট, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে ইসি মতামত নিচ্ছে, সঙ্গে করণীয় বিষয়ে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি নিজেদের এখতিয়ারও তুলে ধরছে।

তবে ইসির এ কাজে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বড় একটি অংশের সাড়া পেলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো আমন্ত্রণে সাড়া দেয় নি। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার চার মাসের মধ্যে ইভিএমে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউপির দেড় শতাধিক এলাকায় ভোট করেছে।

এরই মধ্যে পেশাজীবী বিশিষ্টজন, সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, পযবেক্ষক সংস্থা, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, সাবেক সিইসিসহ অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করেছে। ইভিএমের কারিগরি বিষয় যাচাই বাছাই নিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামতও পেয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান বলেন, “ইভিএম নিয়ে ইসির আমন্ত্রণে রাজনৈতিক দলের মতামত, অধিকাংশ দলের কারিগরি বিশেষজ্ঞদের অনুপস্থিতি, তাদের আগ্রহ-অনাগ্রহ ও সাম্প্রতিক নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহারে কমিশনের অভিজ্ঞতা- সার্বিক বিষয় নানা ধাপে আমরা বিশ্লেষণ করছি। জুলাই মাসে ইভিএম নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে। সব কিছু পযালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো কোন পদ্ধতিতে, কত টি আসনে ও কিভাবে যাবো।” ঈদের পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বিষয়ে সংলাপ শুরু হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

“দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা দলগুলোর সঙ্গে জুলাই মাসে বসতে চাই। ঈদের পরেই সংলাপ শুরু করতে হবে। ইভিএম-এর কারিগরি বিষেয়ে একসঙ্গে ১৩টি করে দলকে নিয়ে তিন ধাপে বসেছিলাম; এবার ৩৯টি দলের সঙ্গে এবার আলাদা আলাদা বসবো ” বলেন এ নির্বাচন কমিশনার।

ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মতামত এসেছে যেসব দলের: আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি।

ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দিয়েছে জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক অন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ কংগ্রেস, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।

আসে নি ইসিতে : বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি।

ইসির ডাকে বিএনপিসহ কিছু দলের সাড়া না পাওয়ায় হতাশ নয় নির্বাচন কমিশন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মত বিশ্লেষণে ইসি রাজনৈতিক দলগুলো কতটুকু সাড়া দিল, তাদের আন্তরিকতা, সংশয়, বিরোধিতা বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখছে নির্বাচন কমিশন।

চার জনের প্রতিনিধি আনার অনুরোধ করলেও অধিকাংশ দলই বেশি সংখ্যক নেতা সভায় যোগ দেন। কিন্তু ইভিএম যাচাইয়ে দলগুলোকে ‘টেকনিক্যাল এক্সপার্ট’ আনার অনুরোধ জানালেও বেশির ভাগ দলই প্রযুক্তিবিদ আনে নি। ২৮টি দলের মধ্যে ৫টি দল টেকিনক্যাল পার্সন এনেছিলেন।

কিছু দল ইভিএমে সম্পূর্ণ একমত, কিছু দল প্রযুক্তিকে আরও সংযোজন-পরিমার্জনে মডিফাই করতে চায়, কিছু দল নেগেটিভ অবস্থান জানিয়েছে। মত বিনিময় সভা কয়েকটি ধাপে বিশ্লেষণ করবে কমিশন। এরমধ্যে কত টি দল এসেছে, ক’টি দল আসে নি, সংসদে ক’টি দল প্রতিনিধিত্বকারীরা কি বলেছে, টেকনিক্যাল টিম কারা নিয়ে এসেছে বা আনে নি কেন; দেড় শতাধিক ইভিএমের ভোটে গোলযোগাল, জালভোট, কেন্দ্রদখল, সহিংসতা না ঘটা ও ভোটারের আস্থার বিষয়গুলো যাচাই বাছাই করা হবে।

এর আগে একাদশ সংসদে মাত্র ছয় টি আসনে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। আগামী বছরের ভোটের ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শিগগির। কারণ, প্রযুক্তিটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিতে বেশ সময় লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সবশেষ ২৮ জুন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালও বলেছেন, ইসির মত বিনিময়ে ইভিএমের পক্ষে এবং বিপক্ষে কথাবার্তা হয়েছে। সব আলোচনা্ লিপিবদ্ধ করেছি। আমাদের সামর্থ্য কতগুলো তা দেখবো। এরপর সিদ্ধান্ত নেব। সম্পূর্ণ বা ফিফটি ফিফটি করবো কি-না সে সিদ্ধান্ত নেবো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অগাস্টের মধ্যে আসন্ন সংলাপে নির্বাচনের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানান সিইসি।

সূত্র জানান, যেহেতু হাতে সময় আছে, তাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছিল। সেটিকে বেইজ ধরে সবকিছুর সময় বা পরিকল্পনা একটু এগিয়ে নিয়ে আসার কথা ভাবছে কমিশন।

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির কর্মপরিকল্পনার মধ্যে ছিল- আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার; নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ; সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ; নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ; বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক ভোটকেন্দ্র স্থাপন; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে।

নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়ার শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা বলা হয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: