আজও তিনি আদালত চত্বরে এলেন, তবে মেলেনি রিকশার সন্ধান

প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২২, ০৭:১০ পিএম

আজও এসেছিলেন হারানো রিকশার খোজে, না পেয়ে হতাশায় চলে গেলেন আর বললেন এখন আমাকে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে, কি হবে আমার আমার পাশে কেউ নেই। একমাত্র উপর্জন করার বাহনটি নিয়ে গেলো চোরে। এমনই ভাবে বিলাপ করছিল প্রতিবন্ধী আলী মোল্লা আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজবাড়ীর আদালত চত্বরে।

এনজিও থেকে ৪৬ হাজার ঋণ নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা বানিয়েছিলেন প্রতিবন্ধী আলী মোল্লা (৩৪)। সেই রিকশা চালিয়ে যা আয় করতেন তা দিয়ে চলছিল তার পাঁচজনের সংসার। গতকাল সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে ব্যক্তিগত কাজে রিকশা নিয়ে রাজবাড়ী কোর্ট চত্বরে গিয়েছিলেন তিনি। কাজ শেষ করে বাইরে এসে দেখেন রিকশাটি নেই। এ সময় কোর্ট চত্বরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

এ ঘটনায় তিনি রাজবাড়ী সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। ভুক্তভোগী আলী মোল্লা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার দুই পা খোঁড়া। তিনি রাজবাড়ী পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের লক্ষ্মীকোল রাজারবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। সংসারে তার অসুস্থ মা, স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন।

জানা গেছে, সোমবার সকালে আলী মোল্লা ব্যক্তিগত কাজে নিজেই রিকশা চালিয়ে রাজবাড়ী আদালতে যান। এ সময় তিনি আদালতের সামনে রিকশাটি রেখে নিচ তলায় মুহুরির সঙ্গে কথা বলে তিনি দোতলায় ওঠেন। কাজ শেষ করে আধাঘণ্টা পর নিচে নেমে দেখেন তার রিকশাটি নেই। এ সময় তিনি আদালত চত্বর এলাকায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রিকশাটি খুঁজে পাননি। পরে তিনি রাজবাড়ী সদর থানায় জিডি করেন।

আলী মোল্লা জানান, বছর খানেক আগে এনজিও থেকে ৪৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি রিকশাটা বানিয়ে নেন। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী হওয়ায় তেমন ভারী কাজ করতে পারেন না। তাই তিনি রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। রিকশা চালিয়ে দিনে তিনি ৬০০-৭০০ টাকা উপার্জন করেন। সেই টাকা দিয়ে তিনি সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়েকে পড়ালেখা করান। কিন্তু তার একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম রিকশা হারিয়ে তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। উপার্জন না করলে কীভাবে সংসার চলবে, কী খাবেন, কীভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবেন, ছেলে-মেয়েকে কীভাবে পড়ালেখা করাবেন তা নিয়ে তিনি চিন্তায় পড়েছেন।

আলী মোল্লা বলেন, ৪৬টা কিস্তির মধ্যে মাত্র ৬টি কিস্তির টাকা দিয়েছি। সপ্তাহে ১৪০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। রিকশা চালিয়ে আমি কিস্তির টাকা পরিশোধ করতাম। আমার রিকশাটি চুরি হয়ে গেছে। এখন কীভাবে আমি আমার কিস্তির টাকা পরিশোধ করব। কীভাবে সংসার চালাব। আমাকে এখন পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। আজও তিনি আদালত চত্বরে আসেন তবে কেউ তার রিকশার সন্ধান দিতে পারেননি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: