হেনোলাক্স দম্পতির কাছে পাওনা ছিল তিন কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬ জুলাই ২০২২, ০৫:২৩ পিএম

জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে গাজী আনিসের চাঞ্চল্যকর মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত প্ররোচনার মামলায় আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন ও পরিচালক ফাতেমা আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, ১৯৮১ রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় কাদের হোমিও হলের সামান্য কর্মচারী নুরুল আমিন। চাকরি করতে করতেই মাথায় এলো ব্যবসার চিন্তা। ১৯৯১ সালে হেনোলাক্স নামে খুললেন একটি কোম্পানি। চাকরির পাশাপাশি শুরু হলো ব্যবসা। আরও চার বছর পর ১৯৯৬ সালে অবশেষে দীর্ঘ ১৫ বছরের চাকরিটি তিনি ছাড়লেন। এরপর বেশ পরিচিতি পায় তার হেনোলাক্স কোম্পানি।

সফল উদ্যোক্তার অনন্য উদাহরণ হতে পারতেন হেনোলাক্সের কর্ণধার নুরুল আমিন। কিন্তু ব্যবসায় আর্থিক সাফল্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা তার নাম, সততা ও সৎ ইচ্ছা। তার 'অভাবে' আমিন আজ সস্ত্রীক গ্রেপ্তার। গ্রেপ্তার হয়েছেন তারই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা এক ব্যবসায়ী নিজের গায়ে আগুন দিয়ে মারা যাওয়ার পর। এই মৃত্যুতে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে অভিযুক্ত তিনি।

আজ বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে কারওয়ার বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য অবহিত করেন র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

ওই ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৯। এ প্রেক্ষিতে র‌্যাব জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নুরুল আমিন (৫৫) এবং ফাতেমা আমিন (৪৫) কে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলা ও অন্যান্য সূত্রের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, ২০১৭ সালে আমিন গ্রুপের কর্ণধার নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে ভিকটিমের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সাথে ভিকটিমের সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। গ্রেপ্তাররা ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য পাশ্ববর্তী একটি দেশে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে গাজী আনিসকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করেন। প্রথমে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে রাজি হয় এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। পরবর্তীতে তাদের প্ররোচণায় ভিকটিম আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।

অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিল। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোন চুক্তিনামা করা হয়নি। বিনিয়োগ পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদনে গড়িমসি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রতিমাসে লভ্যাংশ প্রদানও বন্ধ করে দেন। কয়েকবার হাজী আনিসকে হেনস্তা-ভয়ভীতিও প্রদর্শন করা হয়।

ওই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন গাজী আনিস। এছাড়াও ঐ টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য গত ২৯ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। গত ৩১ মে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্তে মামলা দায়ের বিষয়টি পোস্ট করেন। বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাক্ষীদের নিকট সহায়তা চান।

গাজী আনিস ছাড়াও অন্য কেউ আসামিদের কাছ থেকে টাকা পান কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন জবাব দেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা এমন কোনো তথ্য পাইনি।

পাওনা টাকা প্রকৃতপক্ষে কত, আর কেনইবা পরিশোধ করা হচ্ছিল না জানতে চাইলে জবাবে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গাজী আনিসের সঙ্গে লেনদেনে টাকার পরিমাণ নিয়ে আসামীদের আপত্তি আছে। লেনদেন হয়েছে তা তারা স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন সময়ে চেকে ও নগদে ৭৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে গাজী আনিসের লভ্যাংশসহ ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকা। এটা নিয়েই মূলত তাদের মধ্যে একাধিকবার বাকবিতন্ডাও হয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: