বাড়ি ফিরছে মানুষ, তবে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন থেকে চারগুন ভাড়া

প্রকাশিত: ০৮ জুলাই ২০২২, ১১:৪১ পিএম

একদিন পরেই ঈদুল আজহা, নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। এই সুযোগে দ্বিগুন, তিনগুন, এমনকি চারগুন ভাড়াও গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে, চালকদের দাবি যানজটের কারণে বেশি সময় লাগার কারণে ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে। এদিকে, সড়কে আছে ভোগান্তি। শুক্রবার (৮ জুলাই) বেলা ১২ টার দিকে ময়মনসিংহ নহানগরীর পাটগোদাম ব্রীজ মোড়ে ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।

রাজধানীর শফিপুরে গার্মেন্টসে কাজ করেন হুমায়ুন কবির। পাটগোদাম ব্রীজ মোড় থেকে যাবেন নেত্রকোনার জারিয়ায়। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে তিনগাড়ি পাল্টে এখানে এসেছি। এখান থেকে জারিয়ার নিয়মিত সিএনজি ভাড়া ১২০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে মাহিন্দ্রার ভাড়া নিচ্ছে ২৫০ টাকা। হেটে তো আর বাড়িতে যেতে পারব না। তাই, বাধ্য হয়েই গাড়িকে উঠেছি।

নেত্রকোনার জারিয়ার বাসিন্দা জোসনা বেগম। তিনি ঢাকার গুলশানে অন্যের বাসায় কাজ করেন। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে বাসে এখান পযন্ত আসছি ৭০০ টাকায়। এখান থেকে জারিয়া পর্যন্ত যাচ্ছি ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে। এমনিতে ঢাকা থেকে নেত্রকোনার জারিয়া পর্যন্ত যেতে মোট ভাড়া লাগে ৩০০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে এই ভাড়াই লাগল এক হাজার টাকা।রাজধানীর চাষাড়ায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার রাকিব মিয়া। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের পাটগোদাম ব্রীজ মোড় পর্যন্ত আসছি ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে। এখান থেকে নকলার নিয়মিত ভাড়া ১২০ টাকা হলেও ঈদ উপলক্ষে মাহিন্দ্রার ভাড়া নিচ্ছে ৩০০ টাকা।

একই সাথে চাষাড়ায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন শাকিল মিয়া নামে আরেক যুবক। তিনিও যাবেন শেরপুরের নকলা উপজেলায়। তিনি বলেন, এক সাথেই দু'জন আসছি। এখন এক সাথে নকলায় যাব। কিন্তু, যেভাবে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে, এটা আমাদের মত শ্রমিকের উপর নির্যাতন। এসবের সঠিক সমাধান হওয়া প্রয়োজন।ভাড়া বেশি নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পাটগোদাম ব্রীজ মোড় থেকে নকলাগামী মাহিন্দ্রা চালক সাইদুল ইসলাম বলেন, ঈদ ছাড়া একদিন পাটগোদাম ব্রীজ মোড় থেকে নকলা পর্যন্ত তিনবার আসা যাওয়া করা যায়। কিন্তু, এখন একবার নকলার উদ্দেশ্যে এখান থেকে গাড়ি ছেড়ে গেলে যানজটের কারণে দ্বিতীয়বার আসতে সন্ধ্যা হয়।

পাটগোদাম ব্রীজ মোড় থেকে জারিয়াগামী মাহিন্দ্রা চালক খোকন মিয়া বলেন, ঈদ ছাড়া জারিয়ার ভাড়া ১০০ টাকা হলেও এখন ৩০০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
গাজীপুরের একটি কোম্পানীতে চাকরী করেন নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, রাস্তায় অনেক যানজট। গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহের বাইপাস মোড়ে আসছি ৫৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে। বাইপাস থেকে ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে পাটগোদাম ব্রীজ মোড়ে আসছি। এখান থেকে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ভাড়া ১০০ টাকা হলেও ৩০০ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে।

দুর্গাপুরগামী সিএনজি চালক নাইব আলী বলেন, ঈদ উপলক্ষে ভাড়া কিছুটা বেশি নেয়া হচ্ছে। তবে, কাউকেই জোড় করা হচ্ছেনা। যারা যাচ্ছেন, তাদের নিয়েই যাচ্ছি।গাজীপুরে একই গার্মেন্টসে কাজ করেন লিয়াকত আলী দম্পত্তি। তিনি বলেন, পাটগোদাম ব্রীজ মোড় থেকে হালুয়াঘাটের বাস ভাড়া ৬০ টাকা হলেও ঈদ উপলক্ষে ৩০০ টাকা নিচ্ছে। ময়মনসিংহ থেকে ভৈরবগামী শ্যামলা ছায়া বাসের চালকের সহকারী কাজল বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া নির্ধারিত ভাড়া যাত্রীদের কাছ আদায় করছি। তবে, মাঝে মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে।

এবিষয়ে জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালামের নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ময়মনসিংহ ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) জহিরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পেয়েছি। তবে, জেলা প্রশাসনসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পাটগোদাম ব্রীজ মোড় পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে রাস্তার নানা অব্যবস্থাপনার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) খন্দকার ফজলে রাব্বি। এসময় তিনি রাস্তার দুপাশে গাড়ি না দাড়ানো ও ভাড়া বেশি না নেয়ার নির্দেশনা দেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: