হাওরাঞ্চলে বিধ্বস্ত বসত বাড়িতে বিবর্ণ কোরবানির ঈদ

প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২২, ১১:৫৭ এএম

গতকাল ছিল কোরবানির ঈদ। উৎসব আয়োজন ছিল না হাওরাঞ্চলের পরিবারগুলোতে। সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে বন্যা পরবর্তী ভোগান্তির গোলাজলে বিধ্বস্ত বসত বাড়িতে এবারের কোরবানি ঈদ বিবর্ণ। টাংগুয়ার হাওর, মাটিয়ান, শনি, মহালিয়া হাওর পাড়ের চার দিকে পানি, বানের পানিতে সব শেষ। গত ঈদে হাওর পাড়ের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর পরিবারে অনুন জ্বালালেও এবার তার বেতিক্রম বেঁচে থাকা টাই এখন বড় দায়। সব খানেই শুনশান নীরবতা। কোথাও নেই কোলাহল, ঈদের আনন্দের পরিবর্তে শুনশান নীরবতা আর ভাল খাবার তাও আজ আকাশের তারার মত। তাই ফিকে হয়ে গেছে ঈদ আনন্দ বানভাসী মানুষ জনের।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাওর পাড়ের প্রবল ডেউয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিনত হওয়া বসত বাড়ি, আর আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় সব হারিয়ে নিঃস্ব। তারা এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফলে ঈদের আনন্দ তাদের ছুতে পারছে না, তাদের এখন ঘর গোছানো তেই সময় শেষ। কথা হয় উপজেলা সদর ইউনিয়নের সূর্যেরগাও গ্রামের খালেদ মিয়ার সাথে। তার মনে ঈদের আনন্দ নেই। দুবেলা খেয়ে কোনোভাবে বেঁচে থাকাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ তাদের কাছে। বানের পানি আর হাওরের ডেউয়ের তান্ডবে ঘর তার লন্ড বন্ড। বন্যায় শুরু থেকে ১৫দিন পর পানি কমলে কোন রখমে ঘর মেরামত করে উঠেছেন তার বাড়িতে বৌ ছেলে নিয়ে। কিন্তু ঘর মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নগদ অর্থ না পাওয়ায় মনে কষ্ট তার। তিনি বলেন, এই টাকা টা পেলেও আমার অনেক উপকার হত। ছোট ফলের ব্যবসার অবস্থাও ভাল না। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়।

তিনি আরও বলেন, গত ১৬ জুন আকস্মিক বন্যায় বাড়ি ঘরের আসবাবপত্র ও সঞ্চিত খাদ্যসহ কিছুই বাঁচাতে পারেনি, বেশী ক্ষতিগ্রস্থ। এ ছাড়া ভাঙন থেকে বাঁচতে আরও অর্লধক্ষাধিক পরিবার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। পানি কমলেও এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। গত কয়েকদিন আশপাশের মানুষের কাছ থেকে চেয়ে আধপেটা খেয়ে কোনোভাবে দিন পার করেছেন রংরাজ বেগম। তিনি উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের দলইরগাঁও গ্রামের সুলতান মিয়া স্ত্রী। কথা হয় তার সাথে তখন নিজের বসত বাড়িতে পানি থাকায় তিনি ফরেষ্ট অফিসে আশ্রয় কেন্দ্র অবস্থান করছে।

রংরাজ বেগম বলেন, দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাটাই কঠিন। ঈদ নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই আমাদের। মাটিয়ান হাওর আর পাটলাই নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত বসত বাড়ি। ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি দোকান দিয়ে কোন রখমে সংসার চলত। কিন্তু বানের পানিতে ষ্টল আর ঘর, আসবাব, সঞ্চিত খাদ্য, অর্থ সব ভেসে চলে গেছে বানের পানিতে। এখন মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, ঘরে খাবার ছিল। সব ভেসে গেছে। এখন আত্মীয়-স্বজনের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। ঈদে একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করার সঙ্গতি নেই। এমনি কথা শুধু খালেদ মিয়া, রংরাজ বেগমের নয় হাওরাঞ্চলের ইমাম মিয়া, কালাম মিয়াসহ প্রতিটি পরিবার।

তাহিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুনাব আলী জানান, আমার ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে গুরুত্ব সহকারে চিহ্নিত করে কঠোর ভাবে যাচাই বাচাই করে সরকারী সহায়তা বিতরণ করেছি। সরকারী সহায়তা আর বাড়ানো হলে ক্ষতিগ্রস্থরা উপকৃত হবে। ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতির কারনে এবার কোরবানি ঈদের আনন্দ নেই।

হাওর বেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান, পুনর্বাসনের জন্য ঢেউ টিন ও নগদ টাকা বরাদ্দ পেলে বন্যায় চরম দুর্ভোগের শিকার ও ক্ষতিগ্রস্থ হাওর পাড়ের কৃষক, দিন মজুর পরিবারগুলো পুনর্বাসনের কাজ শুরু করে আবারও মাথা তুলে দাড়াতে পারবে। এখন হাওর পাড়ে ঈদের আনন্দ নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান কবির জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে সরকারীভাবে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রান সহায়তা পেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা। ইতোমধ্যে উপজেলায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৯৯৭টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। এর পরিমান বাড়তেও পারে কমতেও পারে। পুর্নাঙ্গ তালিকা করছি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: