দর্শনার্থী প্রিয় হয়ে উঠেছে দিনাজপুরের শাল কাঠের সেতু
চারদিকে শালবৃক্ষের বনভূমি, মাঝে বিল এবং বনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ভেদ করে গড়ে উঠেছে একটি কাঠের সেতু। পাখির চোখে কাঠ দ্বারা নির্মিত সেতুটি দু’ভাগে বিভক্ত বনকে মিলন রেখাই বেঁধেছে।
দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যানে ৯০০ মিটার দীর্ঘ দৃষ্টিনন্দন শেখ ফজিলাতুন্নেছা কাঠের সেতু জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। গেল ঈদেও দর্শনার্থীদের ছিল উপচেপড়া ভীড়। তবে ২০১০ এর আগে এবং সেতু উদ্বোধনী পূর্ববর্তী সময়েও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই ছিল না। তবে সেতুটি নির্মাণের পরপরই জাতীয় উদ্যানের ভেতরে বিশাল শাল বন ছাড়াও আশুড়ার বিল, সীতার কোট বিহার ও বাল্মিকী মনির থানও ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত পেতে থাকে।
জানা যায়, ২০১০ সালে ২৪ অক্টোবর এ শালবনকে শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষনা করা হয়। যার আয়তন ৫১৭.৬১ হেক্টর বা ১২৭৮.৪৯ একর। ওই বছরই একনেক সভাতেও অনুমোদন লাভ করে এটিকে পর্যটনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য। এর পর থেকেই উদ্যানটিকে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। এই বিশাল বনভূমি এবং বনের মধ্যে আছে সাড়ে ২৫১.৭৮ একর জলাশয়, যেটি আশুড়ার বিল নামে পরিচিত।
অন্যদিকে অন্য আরেকটি উপজেলা বিরামপুর অংশে ১০৯ হেক্টর নিয়ে মোট ৩৬০ হেক্টর এলাকাজুড়ে এই আশুরা বিল। চারদিকে সবুজে ঘেরা মোহনীয় বন, মাঝে আবৃত ছোট বিল। কথিত আছে, কোন এক রাজা বা জমিদার এ অঞ্চলে বাস করতেন। তার নিরাপত্তা ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি করতেই তার বাসভবনের চারপাশে বিশাল এই বিল খনন করা হয়। এ বিলের মাঝখানে আছে একটি টিলা। এ টিলায় থেকে বনে আসার রাস্তা ছিল। এ ছাড়া নৌকায় রাজবাড়ী বা জমিদার বাড়িতে যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল।
পর্যটকদের কাছে এ স্থান আরো বেশি মোহনীয় করতে বিলের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ৯০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সম্পূর্ণ শাল কাঠে নির্মিত হয় ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সেতু’। নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল হতে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ইংরেজি বর্ণমালা জেড আকৃতির আঁকাবাঁকা কাঠের সেতুটি দুই-মাসের বেশি কিছু সময়ের ব্যবধানে নির্মিত হয়। জেড বর্ণটিকে সেতুর বেশ কয়েকটি জায়গায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সেতুটির পশ্চিমে খটখটিয়া কৃষ্ণপুর ও পূর্ব দিকে নবাবগঞ্জ। ফলে এই দুই অংশের বাসিন্দারাও সেতুটি ব্যবহার করতে পারছেন। এর আগে উদ্যানটির সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান। তিনি নিজে আশুড়া বিলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে শাপলা ফুলের বংশবিস্তারে চারা রোপণ, বিলের ধারে প্রজাপতির জন্য ফুলের চারা রোপণ, পাখির অভয়াশ্রমের জন্য শাল গাছে মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে উদ্যান ও বিলটি আনুষাঙ্গিক সংস্কারের পর পহেলা জুন সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। যা বর্তমানে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ বিএডিসি অর্থায়নে রাবার মিনি ক্রস ড্যাম, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে হেয়ারিং বন্ড রাস্তা নির্মাণ, এলজিইডির অর্থায়নে রাস্তা কার্পেটিং, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দে আধুনিক গণশৌচাগার, পর্যটকদের বসার জন্য ৩টি স্থানে গোল ঘর নির্মাণ, উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল হতে ১২ লাখ টাকা ব্যায়ে আঁকাবাঁকা কাঠের সেতু নির্মাণ, বন বিভাগের উদ্যোগে জাতীয় উদ্যানে আশুরার বিলের ধারে বিভিন্ন প্রজাতির শোভাবর্ধনসহ বিভিন্ন ফুলের গাছের চারা রোপন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর দিনাজপুরের পক্ষ থেকে উন্নতমানের শৌচাগার, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাসহ বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
শাপলা আর পদ্মে ফুলে ভরা বিলে অতিথি পাখির কলকাকলি সেই সঙ্গে বিলের উপর নির্মিত শাল কাঠে নির্মিত সেতু যেন দর্শনার্থীদের মনোমুগ্ধতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এদিকে দর্শনার্থী বৃদ্ধি পাওয়াতেই শেখ ফজিলাতুন্নেছা কাঠের সেতুকে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্র ব্যবসারও প্রসার হয়েছে। এদিকে দর্শনার্থীদের অতিরিক্ত ভার সইতে না পেরে গেল ঈদুল ফিতরের সেতুটির ভেঙে যাওয়ার খবরও পাওয়া যায়, পরে ঘণ্টা খানেক ব্যবধানে স্থানীয় প্রশাসন তা মেরামতের উদ্যেগ নেয়।
স্থানীয়রা মনে করেন, নিয়মিত সংস্কারের প্রয়োজন সেতুটির। কারণ দিনে এখানে অনেক মানুষের আনা-গোনা ঘটে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা নিয়মিত সংস্কার ও অত্যাধুনিক কিছু সংযোজন ঘটালে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: