ফেজবুকে কু-রুচিপূর্ণ স্টাটাস, স্কুল ছাত্রী উপমার রহস্যজনক আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২২, ০৯:৪৫ পিএম

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে দশম শ্রেনী স্কুল ছাত্রী উপমা মিস্ত্রী (১৫)’র অবশেষে আত্মহত্যা করেছে। বখাটেদের ফেজবুকে কু-রুচিপূর্ন স্টাটাস, পরিবারকে হুমকিসহ বিভিন্ন ক্ষোভে অতিষ্ট হয়ে অবশেষে বিষপানে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। একেবারে নিঃশে^স হয়ে গেলো অদম্য মেধাবী উপমার সকল স্বপ্ন। পিতা মাতাকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে গেল বখাটেদের কারনে নিস্পাপ মেয়েটি। পিতা মাতার কাছে মেয়ের স্বপ্নগুলো এখন শুধু স্মৃতিময় হয়ে কাদিয়ে বেড়াচ্ছে।

জানাগেছে, মোড়েলঞ্জ উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের বিষখালী গ্রামের কৃষক সুব্রত মিস্ত্রীর বড় কণ্যা বিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী উপমা। গত শুত্রুবার বিকেলে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে ঢলে পড়লে চিকিৎসার জন্য প্রথমে পার্শ্ববতী কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবনতি হলে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথিমধ্যে ওই স্কুল ছাত্রী মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে সহপাঠিরা। এলাকাবাসি এ মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

নিহত স্কুল ছাত্রীর পিতা সুব্ধসঢ়্রত মিস্ত্রী (৪২) কান্না জনিত কন্ঠে বলেন, ওরা আমার মেয়েকে বাঁচতে দিলোনা। ফেক আইডি থেকে এলাকার বখাটে একটি চক্র কু-রুচিপূর্ন কথা বার্তা লিখে যা ফেজবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে আমার মেয়ে উপমাকে কয়েকদিন ধরে হুমকি-ধামকি দেয়। আমার মেয়ের মৃত্যুর ৪/৫ দিন আগে রাতে স্থানীয় বখাটে তমাস দাশ(২০) ও শিশির বিশ্বাস(২৫) আমাকে মোবাইলে ফোন দেয়। তারা আমাকে বলে তোমার মেয়ের অনেক খারাব ছবি আমাদের কাছে আছে। তারা আমার কাছে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ফেসবুকে শেয়ার করে দেবে বলে হুমকি দেয়। এখনও আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে প্রভাবশালী ওই চক্রটির লোকজন কোথাও কোন অভিযোগ মামলা না করার জন্য।

মাতা সিমা রানী মিস্ত্রী (৩৫) বলেন, আমার মেয়ে ১০/১৫ দিন ধরে খাবার খাওয়া ছেড়ে দিয়ে মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে চলে গেলো আমাদের ছেড়ে। আমাদের মত আর কোন মা-বাবার বুক এ রকম যেনো খালি না হয়। আমি আমার মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে পাশ^বর্তী মিলটন হালদার বলেন, সুব্ধসঢ়্রত মিস্ত্রী আমাকে তার মেয়ের বিষয়ে জানালে আমি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে সকলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা স্থানীয় তমাস দাস, শিশির বিশ^াস ও সেীরভ দাসকে নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের অফিসে ও মহিষপুরা পুলিশ লাইনে বসা হয়। তারা সকলের সামনে ক্ষমা চায় ও এধরনের কাজ না করবার প্রতিশ্রুতি দেয়। তার ২/৩

দিনের মধ্যে ফেসবুকে ছেড়ে দেয় এই তিন বখাটে। এটা সহ্য করতে না পেরেই উপমা আত্মহত্যা করে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র গাইন বলেন, উপমা আমার বিদ্যালয়ের একজন ভাল ছাত্রী ছিলো। বিভিন্ন সময় তাকে উক্তাক্ত করা হতো অভিভাবকরা ইতোপূর্বে কখনও আমাদেরকে অবহিত করেনি।

এ সর্ম্পকে বনগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান রিপন চন্দ্র দাস বলেন, স্কুল ছাত্রী উপমার মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক দুঃখ্যজনক ঘটনাটির সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার হওয়া প্রয়োজন। মোড়েলগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সাইদুর রহমান বলেন, স্কুল ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় মরদেহ উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত করা হয়েছে। একটি অপমৃত্যু মামলাও দায়ের হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে মামলা নেওয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: