ডিভোর্সের ১০ মাস পরেও শেষ রক্ষা হয়নি রুমা আক্তারের

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২২, ১০:৪৭ পিএম

সাভারের আশুলিয়ায় সাবেক স্বামীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছে রুমা আক্তার (৩২) নামে এক পোশাক শ্রমিক। এ ঘটনায় থানা পুলিশে গিয়ে কোনো আইনি সহযোগিতা পাইনি বলে এমনটি অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার।

রবিবার (২৩ জুলাই) বিকালে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী রুমা আক্তার। এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যায় আশুলিয়া ইউনিক এলকায় এই ঘটনা ঘটে।

আহত রুমা আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার কুমুরিয়া গ্রামের মৃত মুসলিম উদ্দীনের ছোট মেয়ে। দুই ছেলেকেসহ সে আশুলিয়ার ইউনিক এলাকায় ভাড়া থেকে একটি পোশাক কারখানায় চাকুরী করেন। অন্যদিকে সাবেক স্বামী সিরাজ আলী ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার তেঘুরী গ্রামের আব্দুর গফুরের ছেলে।

ভুক্তভোগী পোশাক শ্রমিক রুমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ১৫ বছর আগে সাবেক স্বামী সিরাজ আলী সাথে গ্রামের বাড়ীতে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের লগ্ন থেকে শুরু ৩বছর ধরে গ্রামের বাড়িতেই অভাব আর অনাটনে চলছিলো তাদের সংসার।

এর ফলে স্বামীর সাথে পাড়ি জমাতে হয় ব্যস্ত শহর ঢাকাতে। সেখানে এসে কখনো মানুষের বাসায় ঝিয়ের কাজ করতে হয় আবার কখনো গার্মেন্টসে চাকরি করে সংসার চালাতো রুমা আক্তার। অভাব আর অনাটনের কষাঘাতের মধ্যেও তাকে সইতে হয় সাবেক এই স্বামীর শারীরিক ও মানুষিক অত্যাচার। এরই মধ্যে দুই ছেলে সন্তানের জননী হন তিনি। কিন্তু নেশাগ্রস্থ স্বামী সন্তান হওয়ার পরেও বিভিন্ন নেশার সাথে জড়িয়ে পড়ে। কখনো গাঁজা আবার কখনো মদসহ ইয়াবা সেবন করতেন।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, শেষে কোন উপায় না পেয়ে গত ১০মাস আগে সিরাজ আলীকে ডিভোর্স দেন। এরপরে সিরাজ রুমাকেসহ তার দুই ছেলেকে বিভিন্ন সময় মোবাইল ফোনে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। এরই জের ধরে গত শনিবার আমাকে ডেকে নিয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে ছুরি দিয়ে আমার ঘাড়ে পোঁচ দেয়। আমার আর্তচিৎকারে সে পালিয়ে যায়।

পরে লোকজনের সহায়তায় আমাকে বাসায় নিয়ে আসে। পরে আমার বাড়িওয়ালা সাভার গণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঘাড়ে ক্ষত বেশি হওয়ায় ২০টি সেলাই দিতে হয়েছে। এরপরে আজ সকালে থানায় গিয়েছিলাম মামলা করার জন্য। পুলিশ বলেছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আজ সারাদিন পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তদন্ত করতে আসেনি পুলিশ। তাই আমি প্রশাসন মহলের সু-দৃষ্টি কামনা করছি যাতে করে পুলিশ যেন আমার মামলা দায়ের করে তাকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করেন।

ভুক্তভোগীর মা মিছিরন বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার মেয়ে দশ মাস হইছে তার স্বামীকে তালাক দিয়েছে। তারপরও সে রাস্তাঘাটে আমার মেয়েকে মারধর করে। আমি গুলশানে বাসাবাড়িতে কাজ করে খাই। আমাকে ফোন দিয়ে একজন বলে যে আমার মেয়েকে ছুরি দিয়ে ঘাড় কেটে ফেলেছে। এখানে এসে দেখি আমার মেয়ের ঘাড়ে ২০টা সেলাই দেওয়া হয়েছে। সে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমি কি বিচার পাবো না। এর সুষ্ঠ বিচারের দাবী জানান ভুক্তভোগীর মা।

এব্যাপারে শ্রমিক নেতা তুহিন আহাম্মেদ বলেন, সমাজে যখন বার বার বলা হচ্ছে নারীরা নির্যাতিত। এখানে যারা গার্মেন্টেসে চাকরি করতে আসে তারা কোন না কোনভাবেই তারা স্বামীর কাছে নির্যাতিত অথবা গার্মেন্টসের ম্যানেজমেন্টের কাছে নির্যাতিত।

যার কারণে এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার এবং যারা সমাজের মান্যবর্গ ব্যাক্তি তাদেরও এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার। এইযে পুরুষ শাষিত সমাজ সেই সমাজের যে৷ অবস্থা এই মেয়েটাকেই দেখলেই বুঝা যায়। স্বামী কিভাবে এই মেয়েটাকে নির্যাতন করেছে যার সুস্পষ্ট হত্যা করার মত অবস্থা। তাই আমাদের এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে হবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, এইরকম ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং ডিউটি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: