পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, কবি মোহন রায়হানের সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২২, ১২:৫৩ পিএম

মরহুম বাবা সিরাজগঞ্জের কৃতিপুরুষ ফরহাদ হোসেন ও বোন সমাজসেবিকা ফরিদা ইয়াসমিনসহ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমুলক মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ, মামলা, হামলা ও মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দেশের প্রগতিশীল কবিদের প্রধান সংগঠন জাতীয় কবিতা পরিষদ এবং জাতীয় কবিতা উৎসব-এর প্রধান প্রতিষ্ঠাতা কবি মোহন রায়হান। রবিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, আমার বাবা আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নে ৩০ বছররের চেয়ারম্যান ছিলেন। বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা রৌমারী ক্যাম্পের প্রশিক্ষক ছিলেন। আমার বোন ফরিদা ইয়াসমিন একজন সমাজসেবিকা ও সানলাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের সিরাজগঞ্জ জেলা কো-অর্ডিনেটর। গত ১৩ জুলাই সকাল ১১টায় বোন ফরিদা ইয়াসমিন সানলাইফ ইন্সুরেন্সের গ্রাহকদের সাড়ে তিন কোটি আত্মসাত করেছে ভুয়া ভিত্তিহীন উস্কানিমুলক অভিযোগ তুলে সিরাজগঞ্জ জনতা ব্যাংকের ম্যানজার আরাফাত শাকিল ও তার স্ত্রী শিক্ষিকা তানজুরম আরা রুকু প্রায় ৪০-৫০জন ইন্সুরেন্সের গ্রাহক, সাংবাদিক ও পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে বোন ফরিদা ইয়াসমীনের বাড়ীতে হামলা চালায়। এমনকি গ্রাহকদের ভুল বুঝিয়ে বোন ফরিদা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও ফেসবুকে আমার বাবা, মা, অন্যান্য ভাইবোন এবং আমাকেসহ গোপা পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। আমাদেরকে ভন্ড, প্রতারক, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ চাঁদাবাজ এবং আমাকে কুকুর বলা হয়।

তিনি সংবাদ সম্মেলনে প্রকৃত ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, আজ থেকে প্রায় ১০ বছর পুর্বে আমাদের নিকটাত্মীয় জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার আরাফাত শাকিল আমাদের গ্রামের এক হতদরিদ্র নারী ও তার বাসার গৃহপরিচারিকা নুরজাহান খাতুন তুকির্কে নির্যাতনের অপরাধে গ্রেফতার হন। ওই মামলায় আমার বোন ফরিদা স্বাক্ষী হন এবং বোনের স্বামী এ্যাড. গোলাম মোস্তফা মামলাটি পরিচালনা করেন। আর এক্ষোভ থেকেই শাকিল ও তার স্ত্রী আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তিনি জানান, নারী নির্যাতন মামলা থেকে রেহাই পেতে আরাফাত শাকিল আমার বোন এবং আমাকে মুরুব্বী মেনে মামলাটি মিমাংসার কথা বলেন। একপর্যায়ে মামলাটি মিমাংসার জন্য বৈঠক করা হয় এবং ওই নির্যাতিতা নারীকে কিছু টাকা ও শালিসনামা জমা দিয়ে মামলা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আরাফাত শাকিল শালিস বৈঠক ছাড়া মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। কিন্তু সে সফল হয় না। এ জন্য আরাফাত ও তার স্ত্রী আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে।

ধুর্ত শাকিল আমার বোন ফরিদা ইয়াসমিনকে আত্মীয়তার অভিনয় করে তাকে মায়ের মতো বলে পুনরায় মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং এক পর্যায়ে ধুরন্ধর আরাফাত শাকিল বোন ফরিদা ইয়াসমিনকে তার ব্যাংকে একাউন্ড খুলে লেনদেন করতে বলেন। বোন ফরিদা ব্যাংকে একাউন্ড খুলে আমার প্রবাসী ভাই মুকুলের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে লেনদেন শুরু করতে থাকেন। চতুর ও কুটবুদ্ধি সম্পন্ন শাকিল বোন ফরিদাকে কস্ট করে ব্যাংকে যাতে আসতে না হয় এজন্য কয়েকটা সই করা চেক রেখে যেতে বলেন। বোন সরল বিশ্বাসে সই করে চেক তার কাছে রেখে যায়। এর কিছুদিন পর হঠাৎ শাকিলের স্ত্রীর কাছে দশ লাখ টাকা ধার নিয়েছে মর্মে বোন ফরিদার স্বাক্ষর নকল করে জাল দলিল তৈরী এবং তার কাছে রাখা চেকের একটি তার স্ত্রীর নামে দশ লাখ টাকা লিখে চেক বাউন্স করে বোন ফরিদার নামে এনআই অ্যাক্ট মামলা দায়ের করে। এর কিছুদিন পর শাকিলের স্ত্রীকে হত্যা প্রচেস্টায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। সবশেষ লাইফ ইন্সুরেন্সের গ্রাহকদের ভুল বুঝিয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করান। এভাবেই বোন ফরিদার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে চলেছে শাকিল ও স্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, সানলাইফ লাইফ ইন্সুরে›ন্স কোম্পানীটির মালিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেকের পরিবারের সদস্যরা। তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, ফরিদা ইয়াসমিন কোম্পানির কোন টাকা আত্মসাত করেনি। করোনা ও অন্যান্য কারণে কোম্পানির ফান্ড ক্রাইসিসের কারনে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে ফরিদা ইয়াসমিনের কোন দোষ নেই। আমরা দ্রুত ফরিদা ইয়াসমিনের তালিকার ভিত্তিতে টাকা পরিশোধ করে দিবো।

তিনি জানান, ফরিদার ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের যে মামলা করা হয়েছে তা ভুয়া ও মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মুলত ২৪জন গ্রাহককে দিয়ে যে মামলাটি করা হয়েছে তাদের পাওনার পরিমান মাত্র ৩ লাখ টাকা। আর সেই টাকার এক টাকাও ফরিদা ইয়াসমিন আত্মসাত করেনি। সব টাকাই আ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করেন, মামলার দায়েরের পর বাদীদের সাথে নিয়ে বৈঠক করা হলে তারা জানিয়েছেন, আমাদের গ্রামের আল-আমিন নাম একজন বলে ঢাকা থেকে লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর লোকজন টাকা দিতে এসেছে। সবাইকে ফরিদার বাসায় যেতে হবে। আমরা সেখানে গিয়ে আরাফাত শাকিল ও তার স্ত্রীসহ বেশ কিছুলোকজনকে ফরিদার বাড়ীতে দেখি এবং তারা ফরিদাকে এবং তার স্বামীকে গালিগালাজ ও নানা হুমকি দিচ্ছে। মামলার বাদী বিলকিস জানিয়েছে, ফরিদা ফুপুর নামে কোন মামলা করি নাই। আমাকে বলা হয়েছে টাকা পাওয়ার জন্য কাগজে সই করতে হবে, আমি তাই সই করেছি।

কবি মোহন রায়হানের বোন ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সানলাইফ ইন্সুরেন্সে সিরাজগঞ্জে ১০ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে মেয়াদউর্ত্তীন হয়েছে এক হাজারের মতো। কিন্তু আমার বাসায় হামলা করেছে মাত্র ২৪জন। এর মধ্যে ৩জন কোন টাকাই পাবে না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সানলাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর শাখা ব্যবস্থাপক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ফরিদা ইয়াসমিন কোন টাকা আত্মসাত করেনি।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সানলাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর ডিএমডি আসলামুল হক মোবাইল ফোনে বলেন, জেলা কো-অর্ডিনেটর ফরিদা ইয়াসমিন কোন টাকা আত্মাসাত করেনি। সব টাকা তিনি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের ফান্ড ক্রাইসিসের কারনে বীমা মেয়াদ উর্ত্তীনদের টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। তবে সব টাকা পরিশোধ করে দেয়া হবে। ফরিদা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে যে সংবাদ প্রচার হয়েছে তা অসত্য।

সংবাদ সম্মেলনে কবি মোহন রায়হান এই ঘৃন্য ষড়যন্ত্রনকারী, দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান। একই সঙ্গে সরকারী কর্মচারী হয়ে আরাফাত শাকিল ও তার স্ত্রী শিক্ষিকা রুকুর এই ধরনের কর্মকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় গ্রহনের দাবী জানান। সংবাদ সম্মেলনে জেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক আবু বকর ভুইয়া, সরকারি রাশিদাজ্জোহা কলেজের অধ্যক্ষ আক্তারুজ্জামান, কবি মোহন রায়হানের বোন ফরিদা ইয়াসমিন, ভাই মঞ্জুর রহমান বকুল ও এ্যাড. গোলাম মোস্তফা সহ প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: