নিজের বেতনের টাকায় বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ করেন প্রধান শিক্ষক

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২২, ০৩:৩৪ পিএম

চারদিকে ফসলের মাঠ, দুর থেকে দেখলেই মনে হবে বাগানের ভিতরে একটি বিদ্যালয়। শিশুরা মাঠে খেলাধুলা করছে। স্কুলে ঢুকতেই চোখে পড়বে বাংলাদেশের মানচিত্র ও সৃতিসৌধ। দেয়ালে দেয়ালে চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে জাতীয় ফুল শাপলা, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ইলিশ, কাঁঠাল, দুয়েল পাখিসহ বিভিন্ন প্রকার ছবি। বিদ্যালয়ের বারান্দা সাজানো হয়েছে ফুলের টব দিয়ে। শ্রেণী কক্ষের চার দিকের দেয়ালে আঁকা হয়েছে মানচিত্র, ফুল, ফলের ছবি। এতে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়েছে বিদ্যালয়ের কোমল মতি শিক্ষার্থীরা।

এমনই সাঁজানো গোছানো ২৪নং ডেকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার অচিন্তপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। ১৯৭১ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা হয়। বিদ্যালয়ে সাত রঙের সারিবদ্ধ প্যানেল লাইট ও মাঠজুড়ে সাত রঙের অনেকগুলো পতাকা। ভবনের সামনে দেয়ালে ডিজিটাল লাইটিং সাইনবোর্ড। তাতে ভেসে ওঠে বিদ্যালয়ের নাম, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামসহ তাদের বিভিন্ন উক্তি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের প্রধান দরজার ডান পাশে স্থাপন করা করা হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র এবং তার পাশেই সৃতিসৌধ।

ছবি: প্রতিনিধি

লাল সবুজ রঙে স্কুলের নতুন ও পুরনো ভবনের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি সাহিত্যিক, মুক্তিযুদ্ধ ও বিভিন্ন শিক্ষামূলক চিত্রকর্ম। স্কুলের সামনে গড়ে তুলা হয়েছে ফুল, ফল ও সবজির বাগান। বিদ্যালয়ে রয়েছে ছাঁদ বাগান। শ্রেণিকক্ষ, দাপ্তরিক রুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিপাটি করে সাজানো গোছানো। ওয়াস রুমগুলোও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।

বিদ্যালয় সুত্র জানায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ অলি উল্লাহ মাত্র চার বছরে সরকারী সহায়তা ও নিজের বেতনের একাংশ ব্যয় করে প্রতিষ্ঠানটিকে আধুনিক মডেল বিদ্যালয় রূপান্তর করেন। এমন কাজে মুগ্ধ অভিভাবক, এলাকাবাসী, শিক্ষকসহ শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাও।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ফয়সাল বলেন, আমাদের সার'রা অনেক ভাল। আমাদের আদর করে। নিয়মিত ক্লাস নেয়, পিটি করায়। আমরা আনন্দের সাথে স্কুলে এসে লেখাপড়া করি একই শ্রেণীর কাওসার বলেন, স্যার আমাদের স্কুলটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছেন। সামনে বাগান করেছেন। সারদের সাথে আমরাও ওই বাগান পরিস্কার করি। আমাদের স্কুলটা এতই সুন্দর যে, আমাদের স্কুলে আসতেই অনেক ভাল লাগে।

স্থানীয় আনুয়ার হোসেন তালুকদার ওরফে আলমগীর বিডি২৪লাইভ কে বলেন, ডেকুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মত এমন সাজানো গোছানো বিদ্যালয় গৌরীপুর এমনকি ময়মনসিংহ জেলার কোথাও নেই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরকারী সহায়তা ও নিজের বেতনের একাংশের টাকায় আমাদের এমন এমন একটি বিদ্যালয় উপহার দিয়েছেন। এতে বিদ্যালয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে।

এছাড়াও দিন দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যাও বাড়ছে। মোশাররফ হোসেন তালুকদার ওরফে জাহাঙ্গীর আলম বিডি২৪লাইভকে বলেন, আমাদের এই বিদ্যালয় দীর্ঘদিন যাবত কোন কমিটি নেই। আহব্বায়ক কমিটির মাধ্যমে চলছে, সরকারী সহায়তা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ অলি উল্লাহ'র একান্ত প্রচেষ্টাই আজ আমাদের বিদ্যালয় গৌরীপুর এমনকি ময়মনসিংহের মাঝে সেরা।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বিডি২৪লাইভ কে বলেন, আমাদের স্যার প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করার পর থেকে বিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি নিজের মত বিদ্যালয়টিকে পরিপাটি করে নিয়েছেন। তবে, বিদ্যালয়ের কিছু সমস্যা আছে। সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করা প্রয়োজন। যেমন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যাঞ্জ নেই। অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে দাড়িয়ে থাকে এতে শিক্ষার্থীর খুবই কষ্ট হয়।তাছাড়া, বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল। এগুলো সমাধান হলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কিছুটা কমবে।

ছবি: প্রতিনিধি

এবিষয়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই (আহাম্মদ উল্লাহ্) বিডি২৪লাইভ কে বলেন, এই বিদ্যালয়ের জমি দিয়েছিলেন,মরহুম আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মাস্টার। ওই জমিতে আমার বাবা মরহুম আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মাস্টার ১৯৭১ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।প্রয়াত স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অব: মজিবুর রহমান ফকির এমপি'র সহযোগিতায় বিদ্যালয়টিকে ভবনে রূপান্তরিত করে ছিলাম।এই বিদ্যালয় নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে,যা বলে শেষ করা যাবে না। তবে, ২০১৮ সালে মোহাম্মদ অলি উল্লাহ প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই স্কুলের উন্নয়ন শুরু হয়। তিনি বিদ্যালয় ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য যা করেছেন,তিনি প্রশংসার দাবিদার।

তিনি আরও বলেন, স্কুলের আধুনিকায়নকল্পে শিক্ষক ও জনবলের পদ বৃদ্ধিকরন, শ্রেণি কক্ষে বেঞ্চ ও বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ ও উপজেলা সদরের সাথে স্কুলের যোগাযোগের স্থানীয় ইছুলিয়া গ্রাম থেকে ডেকুরা পর্যন্ত প্রায় দুই কিঃ মিঃ রাস্তা পাকাকরনের দাবি করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ অলি উল্লাহ বিডি২৪লাইভকে বলেন, মুলত শিশুদের স্কুলমুখী ও শিক্ষাগ্রহণে মনযোগী করে তুলার জন্য চার বছর আগে বিদ্যালয়টিকে সুন্দর, পরিপাটি করে সাজানোর পরিকল্পনা করি। কিন্তু সরকারি সামান্য উন্নয়ন বরাদ্দের টাকায় এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। পরে সরকারী বরাদ্দ ও নিজের বেতনের কিছু টাকা দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা শুরু করি। এভাবে চার বছরের চেষ্টায় বিদ্যালয়টিকে একটি দৃষ্টিনন্দন আধুনিক স্কুলে রূপান্তর করার চেষ্টা করেছি।

তবে, সরকারী সহায়তা আরও বেশি পেলে আরও সুন্দর করে সাজানোর পরিকল্পনা আছে। তিনি আরও বলেন, আমার বিদ্যালয়ে ৩২২ জন শিক্ষার্থী আছে। ৩২২ জন শিক্ষার্থীর চাহিদায় শিক্ষক প্রয়োজন ৭ জন। কিন্তু, আছে মাত্র ৫ জন। এর মাঝে একজন ছুটিতে, আরেকজন আইনী ঝামেলায় আছেন। যে কারণে বর্তমানে শিক্ষক মাত্র তিনজন। তিনজন শিক্ষক দিয়ে কোন ভাবেই স্কুল পরিচালনা করা সম্ভব না। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাঞ্চের অভাব রয়েছে। যে কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে দাড়িয়ে থাকে। এছাড়াও বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার রাস্তার অবস্থা খুব বেহাল।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন বিডি২৪লাইভকে বলেন, ওনার ইচ্ছা আছে, যখন আমি প্রথম ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি টিন সেডের ঘরটা ছিল একেবারেই ব্যবহার অনুপযোগী। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়, টিন সেড ঘরটা ঠিক করার। পরে তিনি নিজেই এলাকাবাসীর সহায়তায় টিন সেড ঘর ঠিক করে ফেলেন।

তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ অলি উল্লাহ অনেক ভাল মনের একজন মানুষ। বিদ্যালয়ের জন্য সরকারী অনুদান পেলে তার সাথে তিনি নিজের বেতনের কিছু টাকা যোগ করে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করেন। যে কারণে ওই বিদ্যালয় আজ সবার মুখে মুখে। পরিকল্পনা আছে ওই বিদ্যালয়ে একটি সুইমিংপুল ও একটি রিডিং রুম করার। যেসব শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় দুর্বল, তারা যেন আগে এসে পড়ার সুযোগ পায়। তবে, ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতা ও ব্যাঞ্চের অভাব রয়েছে। এগুলোর আবেদন করা হয়েছে। অচিরেই এসব সমস্যা সমাধান হবে বলেও জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: