ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারবেন কি না সেটা মেরুদণ্ডের ব্যাপার: কাদের সিদ্দিকী

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২২, ০৮:১৭ পিএম

মেহেদী হাসান হাসিব, নিজস্ব প্রতিবেদক: আমরা আপনাদের মতামত শুনিনি কিন্তু পত্রিকায় দেখেছি। সংলাপে বিএনপির জন্য দুই ঘণ্টা, আওয়ামী লীগের জন্য দুই ঘণ্টা বরাদ্দ, বাকিদের জন্য এক ঘণ্টা। এটা আপনাদের সিদ্ধান্ত কি-না? যদি আপনাদের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনারা আপনাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। বুধবার (২৭ জুলাই) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে এমন ছবক দেন তিনি।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচন কমিশন সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে, আমন্ত্রণপত্রে এটা লেখা। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে কি-না? নির্বাচন কমিশন সকলের জন্য একই রকম কি-না? আমরা আপনাদের মতামত শুনিনি কিন্তু পত্রিকায় দেখেছি। সংলাপে বিএনপির জন্য দুই ঘণ্টা, আওয়ামী লীগের জন্য দুই ঘণ্টা বরাদ্দ, বাকিদের জন্য এক ঘণ্টা। এটা আপনাদের সিদ্ধান্ত কি-না? যদি আপনাদের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে আপনারা আপনাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে যারা ভারতে শাসন করেন বিজেপি, ওনারা যখন দল গঠন করেছিলেন তখন মাত্র দু’টি সিট পেয়েছিলেন। আজকের প্রায় তিনশ সিটের অধিকারী। সেই জন্য নির্বাচন কমিশন যদি আগে থেকেই বড় দল, ছোট দল এটা যদি বিভাজন করেন, তাহলে শুধু ভোটারদের প্রতি কেন, আমাদের প্রতিও একটা বিমাতা সুভব আচরণ হয়। সব দলকে এক মাপে বিচার করুন। ক্ষমতা আজ আছে কাল নেই। ক্ষমতা খুবই ক্ষণস্থায়ী। ক্ষমতার চাইতে ক্ষণস্থায়ী আর কিচ্ছু নাই। আগের সিইসির মতো আপনাকেও আমি ক’দিন যাবৎ দেখছি, আপনি কথা বার্তায় ভাসছেন-বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন নষ্ট হবে, গণতন্ত্র নষ্ট হবে এই ধরণের কিছু কথা শুনতে পাচ্ছি।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমরা বলবো, এইখানে বিএনপি কিছু না, আওয়ামী লীগও কিছু না, এখানে সবকিছু হচ্ছে জনগণ এবং দেশের ভোটার। আপনার যদি ৬৫-৭০ শতাংশ ভোটার তারা না গেলেও (নির্বাচনে অংশ না নিলেও) ভোট দিতে যায় এবং ভোট দেয়, তাহলে আপনার চাইতে চমৎকার নির্বাচন কমিশন আর হতে পারে না। সেজন্য নির্বিবাধে ভোটারদের ভোটে অংশগ্রহণ প্রয়োজন। যেটা যথার্থ বলেছেন, মানুষের উৎসাহ কমে গেছে। সেটা আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে- ভোট যেন দেয় তা নিশ্চিত করতে হবে, ভোটাররা উৎসাহ পায় সে ব্যবস্থাও করতে হবে। বাঁধা অনেক আছে, প্রতিবন্ধকতা অনেক আছে।কিন্তু ঘোরতর কঠিন কোনো কাজ মোটেই নয়।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন যাচাই করার জন্য ইসির আমন্ত্রণে সাড়া না দেওয়ার বিষয়ে তিনি আরো বলেন, আপনাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয়ও হয়নি, আলোচনাও হয়নি। আপনাদের বাড়িতে আসলাম, কন্যা দেখলাম, গভীর আলোচনা হলো, এটা আমাদের কাছে ঠিক সুন্দর মনে হয়নি। তাই আমরা ওখানে (ইভিএম নিয়ে এর আগের সংলাপে) অংশগ্রহণ করিনি।

মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বলেন, এখন যেহেতু দেশটাই ভাগাভাগি হয়ে গেছে, রাজনৈতিক ভাবে হয়েছে, মতামত ভাবে হয়ে গেছে। এই কারণে ধরে নেওয়া হবে আমরা আশার দলে কিংবা নিরাশার দলে। কিন্তু আমরা আশা বা নিরাশা, কোনোটার দলেই না। আমরা অত্যন্ত খোলা মন নিয়ে আপনাদের কাছে এসেছি। কিন্তু আপনাদের কর্মকাণ্ড যতটা সময় পার হয়েছে, ততটা সময় আমাদের মধ্যে একটা দ্বিধা, একটা দ্বন্দ্ব, একটা দৈন্যতা কাজ করছে।

তিনি বলেন, গত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সমস্ত দেশকে ডুবিয়েছে। তার আগের জনও তাই করেছেন। তার আগের জনও কম বেশি তাই করেছেন। আমার দেখা মতে, আবু হেনার মতো শক্তিশালী মেরুদণ্ড ওয়ালা নির্বাচন কমিশনার দ্বিতীয় কেউ হননি।

ইভিএমে ভুল ধরিয়ে দিলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা নিয়েও বঙ্গবীর বলেন, কমিশনের পদে থেকে এই ধরণের বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়। সিইসি তখন বলেন, এটা ভুলে একজন নির্বাচন কমিশনার দিয়ে ফেলেছেন। আমার মুখ থেকে এমন শব্দ আমি উচ্চারণও করিনি। এটা বিভ্রান্তি।

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে এমপি বাহার নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন সিইসি। তিনি সিদ্দিকী বলেন, ক্ষমতা থাকলে কেন নির্দেশনা মানাতে পারলেন না। আর ক্ষমতা না থাকলে তাঁকে সেই নির্দেশনা দিলেন কেন? সিইসি তার জবাবে বলেন, আমরা তাড়াহুড়া করতে গিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে বিরত খাকতে না বলে এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছিল। তার ব্যাখ্যাটা সে সময় দিয়েছি।

তলোয়ার-রাইফেল নিয়ে বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, আপনার ব্যাখ্যা আমি গ্রহণ করেছি যে এটা কথার কথা বলেছেন। নীতির সঙ্গে কখনো বিরোধী হলে সিইসিকে পদত্যাগ করার পরামর্শও দেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, এতে আপনি মাথার মনি হয়ে থাকবেন। দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে পৌরুষের লক্ষণ, মানুষের লক্ষণ। এছাড়া দলগুলোর জন্য যত দরজা খোলা রাখবেন তত মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচে না, তেমনি রাজনৈতিক দল ছাড়া ইসির কোনো অস্তিত্ব নেই। কোনো ভুলের জন্য ছাগলের খুঁট্টি ধরে থাকবেন না। ভুল বুঝতে পারলে স্বীকার করবেন, দেখবেন আপনার মর‌্যাদা বাড়ছে, ক্ষমতা বাড়ছে, আল্লাহও খুশি হচ্ছেন। আল্লাহ খুশি না হলে আপনি সম্মান পাবেন না।

কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, অনেকে বলেন তত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন করবো না। নির্বাচনের সময় সরকার কে? আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন আমি বলবো তফসিল ঘোষণা করার পর সরকার কে? যিনি প্রধানমন্ত্রী তিনি প্রধানমন্ত্রী, যিনি রাষ্ট্রপতি তিনি রাষ্ট্রপতি। কিন্তু আমি মনে করি নির্বাচন কমিশনই রাষ্ট্রপতি, নির্বাচন কমিশনই প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আপনি সেই ক্ষমতার ব্যবহার করতে পারবেন, কি পারবেন না, সেটা মেরুদণ্ডের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী তার গেটের বাইরে বের হবেন কি হবেন না, সেটাও ইসিকে জিজ্ঞেস করতে হবে।

সংলাপে অন্যদের মধ্যে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: