লামার গজালিয়া ইউনিয়নের স্কুলে সবই আছে, শুধু লেখাপড়া নেই

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২২, ০৬:০৯ পিএম

প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করা হয়েছে। তাই সরকার সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার সকল সমস্যা দূরীকরণে আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করছে। বর্তমানের লামা উপজেলা ৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষক, পয়নিস্কাশন, নিরাপদ পানি, উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষা উপকরণ সহ সকল ধরনের চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। সকল সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এই স্তরের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার করুণ দশা যেন কাটছেই না। তেমনি একটি স্কুল লামা উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ‘বটতলী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।’ এই যেন ‘সবই আছে, শুধু লেখাপড়া নেই’।

জানা যায়, ১৯৯৩ সালে বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ, মানসম্মত ভবন, সুন্দর ও নির্মল পরিবেশে অবস্থিত বিদ্যালয়টি। বর্তমানে স্কুলটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২০ জন, শিক্ষক ৩ জন। স্কুলের শূণ্য পদ পূরণে ৩০ জুলাই ২০২২ইং নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে ৩টি শ্রেণী কক্ষ, ১টি অফিস রুমের একতলা পরিপাটি ভবন এবং ওয়াশব্লক রয়েছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে বিদ্যালয়ের রয়েছে ১২শত ওয়াড সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম। নতুন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে পিডিবি-৪ এর আওতায় এলজিইডি লামার বাস্তবায়নে ৫টি শ্রেণীকক্ষ সম্পন্ন চারতলা ফাউন্ডেশনে দুইতলা ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। এতে করে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিদ্যালয়টি।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সরজমিনে গেলে বিদ্যালয়ের অভিভাবক মোঃ মোজাম্মেল হক, আলী মিয়া, আনোয়ার হোসেন, হাসান আলী সহ অনেকে বলেন, স্যাররা মাঝেমধ্যে বিদ্যালয়ে আসেন। গতকাল বুধবার, আজ বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক শাহেনুর বেগম ও সহকারী শিক্ষক শামীমা আক্তার আসেন নাই। খবর নিয়ে জানা যায়, ৩০ জুলাই শনিবারও প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যাননি।

অভিভাবকরা বলেন, পার্শ্ববর্তী অন্যস্কুল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চললেও বটতলী স্কুল দুপুর ১টা থেকে ২টার পরে আর চলেনা। দুইটার পর স্কুলের শ্রেণীকক্ষে সহকারী শিক্ষক শ্যামল কান্তি দাশ প্রাইভেট পড়ান। তার কাছে বাধ্যতামূলক প্রাইভেট না পড়ালে তিনি ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এদিকে গত তিনমাস যাবৎ স্কুলের নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। তিন মাস ধরে স্কুলের দুইটি শ্রেণীকক্ষে ঠিকাদারের দখলে। এক কক্ষে নির্মাণ সামগ্রী অন্যকক্ষে নির্মাণ শ্রমিকরা থাকে। বাকী একটি কক্ষে গাদাগাদি করে প্রাক-প্রাথমিক সহ ৬টি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়।

অভিভাবকরা আরো বলেন, আমরা ভয়ে এখন শিক্ষকদের কিছু বলিনা। কিছু বললে শিক্ষকরা বলেন, বাড়াবাড়ি করলে থানায় নিয়ে আমাদের পালিশ করাবে। তারা নিজের কাপড় ছিঁড়ে আমাদের নামে মামলা দিবে। তাদের কাছে প্রাইভেট না পড়ালে বাচ্চা পাস করবেনা। আমরা অসহায়। অনেকে তাদের সন্তান অন্য স্কুলে পাঠিয়ে পড়াচ্ছে।

স্কুলের সভাপতি ফজল হক আক্ষেপ করে বলেন, করোনায় স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন বিষয়ে আমাকে আর ডাকেনা শিক্ষকরা। স্কুলের শ্রেণীকক্ষ দুইটি শিক্ষকদের সহায়তায় তিনমাস ধরে ঠিকাদারের দখলে। সরকার স্কুলে সব দিয়েছে কিন্তু লেখাপড়া নাই। সভাপতি কথা বলার সময় সহকারী শিক্ষক শ্যামল কান্তি দাশ এসে রাগান্বিত স্বরে বলেন, স্কুল আমার, আমি রুম দিয়েছি। কে কি করবে?

প্রধান শিক্ষক শাহেনুর বেগম প্রায়সময় স্কুলে যেতে পারেন না এই বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দ্রুত শ্রেণীকক্ষ থেকে ঠিকাদারের লোকজন ও মালামাল বের করে দিব। লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তপন কুমার চৌধুরী বলেন, গত তিনদিন সহ প্রায়সময় বটতলী স্কুলে শিক্ষক অনুপস্থিত, দুইটি শ্রেণীকক্ষে ঠিকাদারকে ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শাহেনুর বেগম কে শোকজ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: