বাঘ বেড়েছে সুন্দরবনে

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২২, ০৯:৩৩ পিএম

‘বাঘ আমাদের অহংকার, রক্ষার দায়িত্ব সবার’ প্রতিপাদ্যে ঢাকাসহ বিশ্বের ১৩টি দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাঘ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে বন বিভাগসহ বিভিন্ন সংস্থা। এ ছাড়া বাগেরহাটে ভিন্ন আয়োজনে বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে এ দিবসের সূচনা হয়। সে থেকে শুরু করে প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। এ বছর বিশ্ব বাঘ দিবসে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও বিভিন্ন সময় সুন্দরবনে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ থাকায় বাঘের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সুন্দরবন-পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, বাঘ সুরক্ষায় সুন্দরবন বিভাগের উদ্যোগে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হিসেবে প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রবেশ বন্ধ থাকে। এর ফলে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি অনেক ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। করোনা মহামারি থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক বার সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় বাঘ ও বাঘের বাচ্চা দেখেছেন বনরক্ষী, স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা। এসব কারণে আমরা মনে করছি—সুন্দরবনে এবার বাঘের সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, বন বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে সুন্দরবনে টহল জোরদার করা হয়েছে। এতে সুন্দরবনে চোরাশিকারিদের তৎপরতা কমেছে। সর্বশেষ করোনা মহামারিতে লকডাউনে সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ ছিল। তখন সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি নিজেদের মতো করে বেড়ে উঠেছে। তখন বাঘ ছিল মাত্র ১১৪টি। এবার আবার গণনা শুরু হয়েছে।

গতকাল সকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষে বন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন বলেছেন, সুন্দর বনের বাঘ রক্ষায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাঘ হত্যা ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বহাল থাকবে। বাঘের চলাচলের এলাকায় পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে অচিরেই। এ ছাড়া অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ফের বাঘ গণনা শুরু হবে সুন্দরবনে।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা। পাশাপাশি বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন তীর প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বাগেরহাট) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, ২০০১ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৪৬টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক (বয়স্কজনিত রোগ) মৃত্যু হয়েছে ৮টি বাঘের। চোরা শিকারি ও দুষ্কৃতকারীদের হাতে ১৩টি ও লোকালয়ে এসে মানুষের আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে পাঁচটি বাঘের। ২০০৯ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে মৃত্যু হয়েছে একটি বাঘের। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে দুষ্কৃতকারীসহ ১৯টি বাঘের চামড়া উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।

বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২২ মে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে এক জরিপের পরে বন বিভাগ নিশ্চিত হয়েছিল বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। কিন্তু কী পরিমাণ বাঘের সংখ্যা বেড়েছে তার সঠিক তথ্য নেই বন বিভাগের কাছে। বর্তমানে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ রয়েছে। তারপরও বন বিভাগ ও সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগের তুলনায় বনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।

সুন্দরবনে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব চিরাচরিত। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে সুন্দরবন সংলগ্ন জনগণ নিয়ে গঠন করা হয়েছে ৪৯টি ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম’। এতে বাঘ হত্যা কমেছে কিছুটা। এখন সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতেও দেখা মিলছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। পর্যটকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ছে সেই দৃশ্য। আর তা ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: