সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই ছাড়ছেন পেশা, হারিয়ে যাচ্ছে নবাবগঞ্জের হস্তচালিত তাঁতশিল্প
এক সময় যে মাকুর খট খট শব্দে মুখর থাকতো নবাবগঞ্জের জনপদ। সেই হাতে টানা তাঁত এখন ইতিহাস। সময়ের সাথে সাথে হাতে টানা তাঁতের জায়গা দখল করে নিয়েছে পাওয়ার লুম বা বিদ্যুৎ চালিত তাঁত। সেই সাথে তাঁত বোর্ডের ঋণ বিতরণে বৈষম্য, সুতার মূল্য বৃদ্ধি এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বন্ধ হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁত শিল্প।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় নবাবগঞ্জের অনেকে পরিবারেই তাঁত ছিল। কালের বিবর্তনে এখন তা হারিয়ে যাচ্ছে। এখনও পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া তাঁতশিল্প ধরে রাখার চেষ্টা করছে পরিবারগুলো। একটি তাতে একটানা ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে পারলে (এক থান) ৫ পিস লুঙ্গি তৈরি করা সম্ভব। এখানকার কিছু তাঁতি পরিবারকে কাপড় বুনার কাজে পাইকাররা সুতা, রঙসহ প্রয়োজনীয় সবই দিয়ে থাকেন। তাঁত কারিগররা শুধু কাপড় বুনার মজুরি পায়। আর যারা নিজেরাই পুঁজি খাটিয়ে এসব কাপড় বুনছেন তারা বেশি লাভবান হচ্ছেন। এখানে ভালোমানের দেশি সুতার ব্যবহার বেশি করা হচ্ছে। তাঁতি পরিবারগুলো জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের একটু সুদৃষ্টি থাকলে তাঁত শিল্পটি টিকে থাকতে পারে। তা না হলে এক সময় একেবারেই বিলুপ্তির পথে যাবে তাঁতশিল্পটি।
উপজেলার বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর ও নয়নশ্রী ইউনিয়নের কিছু গ্রামে এখনো কিছু পরিবার তাঁত শিল্পকে আঁকড়ে ধরে জীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন। বাড়ির কাজের পাশাপাশি মহিলারাও তাঁতের কাজে যোগান দিয়ে থাকেন। তবে কয়েক বছর ধরে সুতোর দাম বাড়ার কারনে অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। বাপ দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে কিছু মানুষ এখনো তাঁত বুনে সংসার চালানোর স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন তারা।
জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শংকরদিয়া এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ১০/১২ পরিবার তাঁতের কাজ করছেন। এ কাজে আগের মতো লাভ না থাকায় লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। তবুও বাপ দাদার পেশায় টিকে থাকতে চান। কিন্তু হঠাৎ করে সুতোর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লুঙ্গি তৈরি করেও লাভবান হচ্ছেন না। ঈদের পর সুতোর দাম কমানোর কথা বলে জানান তারা।
শংকরদিয়া গ্রামের সদর আলী বেপারী বলেন, ‘ছোটবেলা থিকা এই কাজ করি। কোনদিনও কইবার পারুম না সরকার কোনো সাহায্য দেয়। তাঁত বোর্ড থেকে লোকজন আইসা খালি লেইখা নিয়া যায়। পরে কিছুই দেয় না।’ একই এলাকার হোসেন আলী বলেন, ‘সকাল থিকা রাইত ১০টা পর্যন্ত কাজ কইরা লুঙ্গি বুনাই। আমরা কোনো লাভ পাই না জাগো কাছে বেচি তারাই লাভবান অয়। হুনছি আমাগো বুনা লুঙ্গি এহন বিদেশে যায়। আমাগো খবর কেউ নেয় না।’
প্রথমে চরকায় নলিতে সুতা তুলেন মহিলারা। তারপর ড্রাম নামে চরকায় সুতা তুলা হয় ভিমে। সেই ভিম হাতে তুলে বোনা হয় শাড়ি, লুঙ্গি কিংবা গামছা। তবে এখন আর আগের মত হাতে শাড়ি বোনা হয় না। তাঁতিদের অভিযোগ, বৈদ্যুতিক তাঁতের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে হস্তচালিত এই তাঁতকে। তার ওপর মহাজনের সুদ-দাদন আর কাপড়ের দামের চেয়ে কাঁচামালের উচ্চমূল্য অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে এ শিল্পকে।
আজ থেকে ২০ বছর আগে মনের যে উৎফুল্য চিত্বে তাঁত শিল্পীরা শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, গায়ের চাদর, বিছানার চাদরসহ নিত্য ব্যবহার্য কাপড় তৈরি করতেন এখন সে উৎফল্যতা আর নেই। এখন জীবন-জীবিকার তাগিদে হাতে গোনা কিছু তাঁিত তৈরি করছেন লুঙ্গি। আর শুধু মাত্র মহিলাদের শীতকালীন চাঁদর। আবার অনেকেই তা বন্ধ রাখছেন। সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই এখন পেশা ছাড়ছেন।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: