নিহত জাওয়াহিরির মাথার দাম ছিল দুই হাজার কোটি টাকা!

প্রকাশিত: ০২ আগষ্ট ২০২২, ১২:১৬ পিএম

আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে আমেরিকান বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন জাওয়াহিরি। এ খবর টুইট করে জানিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, গত রোববার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পরিচালিত ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হন। অবশ্য এই খবর এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।

একজন শল্য চিকিৎসক ছিলেন আল-জাওয়াহিরি। মিশরে ইসলামি জিহাদ নামে জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালের মে মাসে মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর আল-জাওয়াহিরি আল-কায়েদার দায়িত্বগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায় ছিল তার নাম। তাকে ধরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পুরস্কারও ঘোষণা করে। যা টাকার অঙ্কে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

টুইট বার্তায় বাইডেন লিখেছেন, ‘যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তাদের থেকে আমেরিকার মানুষকে রক্ষা করার সঙ্কল্প ও ক্ষমতা প্রদর্শন জারি রেখেছে আমেরিকা।’ অন্য একটি টুইটে বাইডেন লেখেন, ‘ন্যায়বিচার দেওয়া গেল।’

আল কায়দা জঙ্গি দলে কীভাবে অভিষেক ঘটল জাওয়াহিরির? শল্য চিকিৎসক থেকে কী ভাবে বিশ্বের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি তালিকায় নাম উঠল তাঁর? ১৯৫১ সালে মিশরের রাজধানী কায়রোয় এক বর্ধিষ্ণু পরিবারে জন্ম জাওয়াহিরির। ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ আল আজহারের প্রধান ইমামের পৌত্র ছিলেন তিনি।

জাওয়াহিরির যখন ১৫ বছর বয়স, তখন প্রথম তিনি ইসলামি মৌলবাদ গ্রহণ করেন। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনে পড়াশোনা করেছিলেন জাওয়াহিরির। পড়াশোনায় বরাবরই ভাল ছিলেন। ১৯৭৪ সালে স্নাতক হন তিনি। মিশরের সেনাবাহিনীতে শল্য চিকিৎসক হিসাবে তিন বছর কাজ করেছিলেন জওয়াহিরি। পরে মাদি এলাকায় নিজের ক্লিনিক খোলেন। ১৯৭৮ সালে শল্য চিকিৎসায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

১৯৮১ সালে জাওয়াহিরির সম্পর্কে প্রথম শিহরিত হয়েছিল বিশ্ব। মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল-সাদাতের হত্যা- পরবর্তী ঘটনায় যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন জওয়াহিরি। তাঁর আইনজীবী দাবি করেছিলেন, সেই সময়ে জেলের মধ্যে জওয়াহিরির উপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়েছিল। এরপর থেকেই একের পর এক হামলার ঘটনায় নাম জড়ায় তাঁর। বেআইনি ভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগে তিন বছর জেল হয় জওয়াহিরির।

জাওয়াহিরির ছদ্মনাম ছিল ‘ডাক্তার’। মুক্তি পেয়ে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত আফগানিস্তানে জখম ইসলামি মুজাহিদিন গেরিলাদের চিকিৎসার জন্য ‘রেড ক্রিসেন্টে’র সঙ্গে কাজ করেছিলেন জাওয়াহিরি। ১৯৮৫ সালে হজ করতে সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছিলেন জাওয়াহিরি। পরের বছর জেদ্দায় ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। পরবর্তী সময়ে লাদেনের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা ও চিকিৎসক ছিলেন তিনি। মুসলিম ব্রাদারগুড সংগঠনের হাত ধরে আল কায়দায় যোগ দিয়েছিলেন জওহাহিরি।

১৯৯৩ সালে মিশরে ইসলামিক জিহাদের নেতৃত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন জাওয়াহিরি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সে দেশে সরকার ফেলে ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করার কর্মসূচির পুরোধা ছিলেন তিনি। ১৯৯৫ সালের জুন মাসে প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তার পরই ইসলামিক জেহাদিদের ধরপাকড় শুরু করেন মিশর কর্তৃপক্ষ। ১৯৯৯ সালে জাওয়াহিরিকে মৃত্যুদণ্ডের সাজার নির্দেশ দেয় মিশরের সামরিক আদালত। তবে তাঁকে ধরা যায়নি।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় জঙ্গি হামলায় লাদেনের পাশাপাশি অন্যতম চক্রী ছিলেন তিনি। এরপর বহু বছর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত এলাকায় তিনি গা-ঢাকা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিল বিভিন্ন মহল।

২০১১ সালে আমেরিকার হানায় লাদেনের হত্যার পর আল কায়দার রাশ যায় জাওয়াহিরির হাতে। সে সময় থেকে আবারও চর্চায় উঠে আসে তাঁর নাম। লাদেনের হত্যার প্রতিশোধ নিতে পশ্চিমী দেশে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেন তিনি। তাঁর মাথার দাম ধরা হয়েছিল আড়াই কোটি ডলার।

চার বার বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন জাওয়াহিরি। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে আমেরিকার বিমানহানায় পুত্র মহম্মদ ও কন্যা আয়েশার মৃত্যু হয়। তথ্যসুত্র: দ্যা ইকোনমিক টাইমস ও জি নিউজ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: