সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট-চুরি ইসির শতাধিক ইভিএম-মনিটর

প্রকাশিত: ০২ আগষ্ট ২০২২, ০৬:৩৬ পিএম

সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট- চুরি হচ্ছে ইসির শতাধিক ইভিএম-মনিটর।সম্প্রতি বেশকিছু ইভিএম আগুনে পুড়ে এবং চুরি গেয়ে নষ্ট হয়েছে প্রায় ১২০ টি ইভিএম-মনিটর বলে নিশ্চিত করেছেন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান। আজ মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ইভিএম পিডি রাকিবুল হাসান বলেন,' কয়েকদিন আগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কিছু ইভিএম আমাদের নষ্ট হয়েছে। যেখানে রাখা হয়েছিল সেই গোডাউনে আগুন লেগে যায়।নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে ফায়ার বিগ্রেড পানি দেয়। যেহেতু এটা ইলেকট্রনিক মেশিন পানি দিয়ে আগুন নিভানোর ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে ইভিএম নষ্ট হয়। সেখানে ২০০ ইভিএম রাখা হয়েছিল বেশ কিছু নষ্ট হয়েছ। ' এখানে ৫০ থেকে ৭০ টার মতন নষ্ট হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ব্রাক্ষ্মবাড়িয়া কসবায় একটা চুরির ঘটনা ঘটে। উপজেলা অডিটরিয়ামের স্টোর রুমে সে ইভিএম রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে যেটা হয় সেটা হলো আমাদের মনিটর চুরি হয়। এছাড়া ঝিনাইদাহ বয়েজ স্কুলে রাখা ছিল কিছু ইভিএম। সেখানে প্রাথমিকের বই রাখা ছিল। বই চুরি হয়। সাথে মনিটর চুরি হয়ে যায়।' কসাব থেকে মনিটর ব্যাটারি চুরি হয়ে যায় বলে যোগ করেন তিনি। দুইটা মিলিয়ে চুরি যাওয়ার সংখ্যা প্রায় ৫০ এর বেশি।

তিনি আরো বলেন,'এ ব্যাপারে নির্বাচনী কর্মকর্তারা থানায় মামলা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী নির্দেশনা সচিবলায় থেকে থানাকে দেয়া হয়েছে। ইভিএম চুরির কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,' স্টোরেজ বা ওয়্যার হাউজ যেটা দরকার সেটা না করে বিভিন্ন জায়গা যেটা পাওয়া যাচ্ছে সেটাতে রাখছে। সেটার প্রোপার সিকিউরিটি বলতে যা বুঝায় সে ধরনের সিকিউরিটি আসলে কোথাও নাই। 'যার ফলে এই জিনিসগুলো ঘটছে বলে যোগ করেন তিনি। মনটির ব্যাটারি সেটসহ হারাইছে বলে জানান তিনি।

ইসির এই কর্মকর্তা বলেন,পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫০০ করে ইভিএম সেট রাখার চিন্তা ছিল কমিশনের। নির্বাচন কমিশনের কাছে ১ লাখ ৫০ হাজারের মতন ইভিএম সংরক্ষণ রয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৯৩ হাজার মতন ইভিএম রাখা হয়েছে। যেখানে যখন ইলেকশন হয় ওখান থেকে পাঠানো হয়। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) প্রায় ৫৫ হাজারের মতন ইভিএম সংরক্ষিত রয়েছে।

চুরি এবং নষ্ট ঠেকাতে কি ধরণের ব্যবস্থা নেয়া যায় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,' সঠিক গুদাম থাকতে হবে। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান যেভাবে রাখছে ওখানে কোনো সমস্যা হয় নাই। পাঁচ বছর ধরে তারা রাখছে। চার্জ দিয়ে স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে যদি ১০ টা গুদাম করা যায় তাহলে সেটা নিরাপদে রাখা সম্ভব।না হলে এটা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে রাখা সম্ভব না। বাসা বাড়িতে রেখে এটা সম্ভব না।

নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে কনসার্ণ জানিয়ে তিনি বলেন,'কমিশন জানে। তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছে এটাকে ভালোভাবে রাখার। ত্রিশটা জেলায় বাসা বাড়িতে রাখা হচ্ছে। এসব জেলায় ঝুঁকি নিয়েই রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বর্তমানে যে ইভিএম রয়েছে তা দিয়ে ৭০ থেকে ৮০ টি সংসদীয় আসনে ভোট করা সম্ভব বলে জানান তিনি। মাঠে যে ইভিএম রয়েছে তার কন্ডিশন যাচাই করলে আরো সঠিকভাবে বলা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

ইভিএম কেনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,' এটা আসলে কমিশনের প্ল্যান। কমিশন ডিসিশন দিলেই বলা সম্ভব। প্রায় ৯০ হাজার ইভিএমের কোয়ালিটি কন্ট্রোল করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,' লাখ খানেকের উপরে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া যে সব ইভিএমে ত্রুটি আছে সেগুলো মেরামত করা যাবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।

দেড়-লাখ ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন,' কিছু ইভিমে আছে ভোটের জন্য। কিছু ইভিএম রিজার্ভ রাখতে হয়। কিছু ইভিএম ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠাতে হয়।

এর আগে সদ্য সমাপ্ত ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংলাপে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে৷ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে ইভিএম চায়৷ তবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ দল ইভিএমে আস্থা রাখেনি। তারা ইভিএমের ঘোর বিরোধ করেছে। ইভিএম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় বলেও জানিয়েছে বিএনপি।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর সাংবাদিকদের দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ১০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনার রয়েছে৷ তবে ধারাবাহিক সংলাপের শেষ দিনে সমাপনী বক্তব্যে সিইসি বলেন, সংলাপে কিছু বিষয় ওঠে এসেছে। সেটা হলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন পেয়েছি। অধিকাংশ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কি জানি একটা আছে। ইভিএম নিয়ে আমাদের যে অনুভূতি আমরা ব্যবহার করেছি। ফলাফল ৭১ শতাংশ পর্যন্ত ভোট কতাস্ট করেছে। কিন্তু কথা বলেছি আমরাও অনেককেই আস্থায় আনতে পারছি না। না কিছু একটা আছে। ইভিএম একটা সহযোগিতা চাইবো, যে একটা সংকট থাকবে। আমরা সিদ্ধান্ত নেবো স্বাধীনভাবে।

বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) ইভিএম মেশিন প্রস্তুত করেছে৷ গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন মাত্র ৬টি সংসদীয় আসনে ইভিএম ব্যবহার করে। তবে বিএমটিএফের কাছে থেকে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা করে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম মেশিন ক্রয় করে তারা। এখন এসব মেশিন কমিশনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সংরক্ষণ করতে গিতে বেগ পোহাতে হচ্ছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটিকে।

২০১০ সালে এটিএম শামসুল ‍হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: