শারীরিক সম্পর্কের পর লঞ্চের কেবিনে বাচ্চুকে খুন করেন আরজু

একাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক, প্রতারণা করে বিয়ে, একপর্যায়ে বিচ্ছেদের পরও সেই সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাধ্য করার ক্ষোভ থেকেই ভোলার বোরহানউদ্দিনের কথিত জিনের বাদশা জাকির হোসেন বাচ্চুকে খুন করেন তার তালাকপ্রাপ্ত দ্বিতীয় স্ত্রী আরজু আক্তার। গ্রেফতারের পর আসামি আরজু মঙ্গলবার (২ আগস্ট) হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মিশকাত শুকরানার কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।
বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে ধানমন্ডির পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম।
আরজু ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ভারটিকটা গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের মেয়ে। নিহত জাকির হোসেন বাচ্চু একই উপজেলার পূর্ব রাজি বাড়ির মো. সিদ্দিক ফরাজির ছেলে। তিনি জিনের বাদশা সেজে লোকজনের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। এর মাধ্যমে আয় করা টাকা তিনি বিভিন্ন নারীর পেছনে খরচ করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, গত ২৯ জুলাই রাত সোয়া আটটার দিকে সদরঘাটে এমভি গ্রীন লাইন-৩ লঞ্চের কেবিনে খাটের নিচ থেকে বাচ্চুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার প্রথম স্ত্রী সুরমা আক্তার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, জাকির হোসেন ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আরজু আক্তারকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর কিছুদিন আরজুর সঙ্গে বসবাস করেন। চলতি বছরের এপ্রিলে আরজুকে তালাক দেন বাচ্চু। আর সুরমা তার বড় ভাসুরের স্ত্রী মিনারার বাসায় থাকতেন।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই জানায়, চলতি বছরের ২৯ জুলাই সকাল ৭টার দিকে সুরমার স্বামী বাড়িতে আসবে বলে জানান। পরে একাধিক ফোন দিলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। যথাসময়ে বাচ্চু বাড়িতে না যাওয়ায় সুরমার সন্দেহ হয়। বিষয়টি তিনি স্বজনদের জানান। পরে সদরঘাট নৌথানার মাধ্যমে খবর পান, বাচ্চুর লাশ পাওয়া গেছে। লঞ্চের কর্মচারীদের মাধ্যমে সুরমা জানতে পারেন, কেবিনে তার স্বামীর সঙ্গে কফি রংয়ের বোরকা পরা মুখ ঢাকা অবস্থায় একটি মেয়ে ছিল। বাচ্চুর মৃত্যুর পর তাকে আর দেখা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃত আরজু আক্তারের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বলেন, জাকির হোসেন বাচ্চু দুই বছর আগে জিনের বাদশা পরিচয়ে আরজু আক্তারকে ফোন দেন। সেই সূত্রে পরিচয়, প্রেম ও পরে বিয়ে হয়। জাকির হোসেন বাচ্চু আরজু আক্তারকে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করেন। তাকে এই কাজে পারদর্শী করে তোলেন। আরজুর সঙ্গে বিয়ের পরেও জাকির হোসেন একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। জীনের বাদশা পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে জাকির হোসেন বাচ্চু যে টাকা আয় করতেন তার সবই অনৈতিক কাজে খরচ করতেন। এসব বিষয় নিয়ে আরজু আক্তারের সঙ্গে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। পাঁচ মাস আগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেন বাচ্চু। এর পরও জাকির হোসেন তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখেন। এছাড়াও আরও একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের কথা ধরা পড়ে। এতে আরজু আরও ক্ষিপ্ত হন।
পুলিশ সুপার জানান, জাকির হোসেন ২৯ জুলাই ঢাকা থেকে লঞ্চে গ্রামের বাড়ি যাবেন বলে জানতে পেরে আরজুও তার সঙ্গে যেতে কেবিন ভাড়া করেন। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী দুধের সঙ্গে পাঁচটি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে লঞ্চে উঠেন। জাকির হোসেন এক বাটি রসমালাই কিনে লঞ্চে ওঠেন। কেবিনে ওঠার পর তারা শারীরিক মেলামেশা করেন। অনুমান এক ঘণ্টা পর আরজু আক্তার ঘুমের ওষুধ মেশানো দুধ জাকির হোসেনকে খাইয়ে দেন। দুধ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে জাকির অচেতন হয়ে পড়লে ওড়না দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে আরেকটি ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর কেবিনের স্টিলের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন লাশ। লঞ্চটি ইলিশা ঘাটে পৌঁছালে আরজু আক্তার নেমে যান। ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে লঞ্চটি ইলিশা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। লঞ্চের কর্মচারীরা ওই কেবিনটি তিনজন বাচ্চা সহ দুই জন মহিলাকে ভাড়া দেন। লঞ্চটি ছেড়ে আসার প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর একটি বাচ্চা খাটের নিচে প্রবেশ করে। তখন একজন মহিলা ঘাটের নিচ থেকে বাচ্চাটিকে আনতে গেলে লাশ দেখতে পান।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: