টাঙ্গাইলের মধুপুরে ঐতিহ্য ফেরাতে বিষমুক্ত আনারস চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা
মো. রাশেদ খান মেনন, টাঙ্গাইল থেকে: প্রকৃতিতে চলছে আনারসের ভরা মৌসুম। বাগান থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত আনারসের মিস্টি ঘ্রাণে সুভাষিত। টাঙ্গাইলের মধুপুরের আনারসের স্বাদ ও সুনাম সারাদেশেই প্রথম অবস্থানে। কিছুদিন পূর্বে রাসায়নিকের অত্যাধিক ব্যবহারের কারনে আনারসের বিক্রি ও সুনামে কিছুটা ভাটা পড়ে। কিন্তু বর্তমানে কৃষকরা আবার বিষমুক্ত আনারস চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। ফিরে আসতে শুরু করেছে সেই হারানো ঐতিহ্য। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এবছর ৬ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে চাষকৃত আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এতে আনুমানিক আয় ধরা হয়েছে ২২০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা।
আনারসের রাজধানী হিসেবে খ্যাত মধুপুরে জমে উঠেছে রসালো ফল আনারসের বাজার। এখন ভরা মৌসুম। এবার আবহাওয়া ভাল থাকার কারণে ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষকরা, মুখে ফুটেছে হাসি। তবে বর্তমানে আনারসের দাম কিছুটা কমেছে। গড়াঞ্চলের চাষী, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা মহা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে কাজকর্ম। গড় এলকার জলছত্র, মোটের বাজার, গারোবাজার, সাগরদিঘী ও আশ্রাবাজারে জমে উঠেছে আনারসের কেনাবেচার হাট বাজার। সকাল থেকেই সাইকেল, ভ্যান, রিক্সা, অটো বাইক ও ঘোড়ার গাড়ীতে করে বাজারে আনারস নিয়ে আসেন কৃষকরা। সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয় আনারস ভর্তি যানগুলো। দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা কৃষকদের সাথে দর কষাকষি করে আনারস ক্রয় করেন। ক্রয়কৃত আনারস ট্রাকভর্তি করে সারাদেশে সরবারহ হয়। আনারস উৎপাদন ও ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত শ্রমিকরা মজুরি ভালো পাচ্ছে। বাজারগুলো আনারসের ব্যবসার কারনে জনার্কীর্ন। স্থানীয় খাবার হোটেল ও চায়ের দোকানীদের বিক্রি বেড়েছে।
মধুপুরের আনারসের স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ করতে গিয়ে বেশি লাভের আশায় চাষীরা আনারসের আকার, রং উজ্জল ও অসময়ে বাজারে উঠানোর জন্য নানা ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করছেন। এতে সুনাম হারাতে বসেছে মধুপুরের আনারসের।
আনারসের সবচেয়ে বড় হাট জলছত্রে দেখা এলাহি কান্ড। দম ফেলার যেন সময় নেই ক্রেতা বিক্রেতা, শ্রমিকদের। কথা হয় কৃষক সোলায়মান মিয়ার। তিনি বলেন আমি ২০ বছর ধরে আনারসের চাষ করি। আমার বাবাও চাষ করতেন। কিছুদিন আগে বাগান থেকে যে ফল ৪০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন সেটা ২২ টাকা। এবার ফলন ভালো ও নষ্ট কম হয়েছে। অরণখোলার আফাজ আলী বলেন প্রচন্ড গরমে আনারসের চাহিদা বেশি থাকায় দাম মোটামুটি ভালো। প্রতি আনারসে ৫/৬ টাকা লাভ হয়। ইসমাইল হোসেন বলেন খরচা অনুয়ায়ী লাভ পাই না। পাইকারদের বেশি লাভ হয়। ফুলবাগচালার কৃষক সবুজ মিয়া বলেন বিষমুক্ত আনারস চাষ করছি। তবে দাম সেহারে পাই না। জলছত্র কাঁচামাল ও সংরক্ষণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন কৃষকদের চেয়ে আগত পাইকাররা এবং খুচরা ব্যবসায়ীরাই বেশি লাভবান হন।
হবিগঞ্জ থেকে আসা পাইকার আব্দুল মালেক বলেন আনারস ভেদে ২০,২৫,৩০,৪০ থেকে ৫০ পর্যন্ত কিনি। তারপর আড়তে দেই। সেখান থেকে নিয়ে আবার খুচরা বিক্রেতারা পাবলিকের কাছে বিক্রি করে। প্রতি আনারসে ৪/৫ টাকা লাভ থাকে। বেশি লাভ করেন খুচরা দোকনদাররা। তারা ৮০,৯০,১০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি আনারস বেচে থাকেন। মধুপুর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় ঢাকা, কুষ্টিয়া, বগুড়া, সিলেট, নাটোর, রাজশাহী, খুলনা, হবিগঞ্জ, নীলফামারী, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নারায়নগঞ্জ ও দিনাজপুরসহ সারাদেশেই আনারস যায়।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, চলতি বছর উপজেলায় আনারসের চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় বেশি। উপজেলা ছাড়াও গড় এলাকার ঘাটাইল, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ও মুক্তাগাছা এবং জামালপুর সদরে আনারস চাষ হয়েছে। এখানে হানিকুইন, জায়ান্ট কিউ এবং ফিলিপাইনের এমডিটু জাতের আনারস চাষ হয়ে থাকে। বিষাক্ত কেমিকেল ব্যবহার থেকে কৃষকরা সরে আসতেছেন। মধুপুরের আনারস দেশের বাইরেও প্রসেসিং করে রপ্তানি হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন আনারসের জমিতে আদা, হলুদ, কলা, কচু ও পেঁপে চাষ করা যায়। আনারস বেশির ভাগই জলছত্র পাইকারি হাটে বিক্রি হয়ে থাকে। জুন মাসের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গরমে আনারসের চাহিদা থাকে। গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর বেশি দাম ও পাচ্ছে কৃষকরা। প্রতিপিট আনারস ২০/৫০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভবান হন।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: