ধামরাইয়ে তুচ্ছ ঘটনায় ঝগড়া বাঁধিয়ে যুবককে মারধরের অভিযোগ

প্রকাশিত: ১৩ আগষ্ট ২০২২, ১১:০৯ পিএম

ঢাকার ধামরাইয়ে নিখোঁজ বোনকে খুঁজতে তৎপর হওয়ায় তুচ্ছ ঘটনায় ঝগড়া বাঁধিয়ে শাকিল (২২) নামে এক যুবককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। তাকে মারধরের একটি ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। আহত অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে থানা পুলিশ। গত ৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের মাখুলিয়া গ্রামে ওই যুবককে দলবেঁধে মারধর করা হয়। মারধরের শিকার শাকিল ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের মাখুলিয়া গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে।

মারধরে অংশ নেওয়ারা হলেন, হামলাকারীদের মধ্যে কয়েকজনের নাম বলতে পেরেছেন তিনি। তারা হলেন, মূলহোতা মৃত রাইসার ছেলে বদরুদ্দিন বদু (৪৫), বদুর ছেলে তন্ময় (১৯), মৃত আজমত আলীর ছেলে বদরুল সরদার ওরফে খাস বদু (৪৮), সেকান্দার মৃধার ছেলে মনির (৪২), বাদশা মিয়ার ছেলে আরশাদ (৪৭), মৃত আলেক মিয়ার ছেলে মনসুর (৪২), আক্কাসের ছেলে হানিফ (৩৯), পলান আলীর ছেলে সবুজ (২৪), করম আলীর ছেলে শওকত (৪২), কাকসেদ আলীর দুই ছেলে আনোয়ার আলী (৫০) ও আফসান আলী (৪৫), সালামের ছেলে শাহীনুরসহ (২২) আরো ২৫-৩০ জন। গত শুক্রবার (১৩ আগস্ট) চিকিৎসাধীন যুবক শাকিলের (২২) সঙ্গে কথা হয়।

তিনি বলেন, "আমি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন সে আমাকে বদু আমাকে গালি দিয়ে বলে এনে আইছস কেনো। তখন আমিও প্রতিবাদ করি। সেখানে দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। তারপর আমাকে আমার মা সেখান থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে। এর কিছুক্ষণ পরই বদু ও মনিরসহ আরো অন্তত ২৫-৩০ জন আমাদের বাড়ি এসে ঘরে ঢুকে প্রথমে মারধর করে। পরে ওভাবে টেনেহিচড়ে বাইরে বের করে আনে। সেখান থেকে গ্রামের রাস্তায় এনেও ফেলে মারধর করা হয়। ওই সময় তারা আমাকে রড, লোহার পাইপ দিয়ে পেটায়। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পরে পুলিশ এসে বলে গাড়িতে উঠতে। পুলিশ আসার পর মারধর থেকে রেহাই পাই। এরপর পুলিশ এনে আমাকে হাসপাতালে পাঠায়"।

কেনো এই মারধর এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার বাবা দৈনিক চুক্তিতে মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। আমার বোন ৩ বছর আগে নিখোঁজ হয়। আমাদের ধারণা বদু, মনিররাই তাকে অপহরণ করেছে। ওই সময় তারা আমাদেরকে হুমকি ধামকি দিতো বলে আমার বাবা কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে সাহস পাননি। এখন আমি তো সাবালক হয়েছি। আমি আমার বোনকে ফিরে পেতে আইনী ব্যবস্থা নিতে চাই। এটাই ওরা জানতে পেরে হয়তো এমনভাবে আমাকে মেরেছে।

শাকিলের মা লাইলি বেগম বলেন, ওরা আমার মেয়েকে উধাও করে ফেলেছে। এখন ছেলে বড় হয়েছে। সে ওই ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে চায়। এটা জানতে পেরেই এভাবে ছেলেটাকে মারলো। ৩ বছর বলেছে কোনো মামলা করে কিছু হবে না। আর এখন তারা হাসপাতালে এসে বলে কিছু না করতে। কিছু করলে তারা আমাদের উল্টো মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এলাকায় ফিরলে আবারও মারধর করতে পারে তারা। তবে এবারে আমি বিচার চাই। বিচার না হলে তারা আমার ছেলেকেও বাঁচতে দেবে না।

অভিযুক্ত বদরুদ্দিন বদু বলেন, শাকিল মাদকসেবী। সেদিন সে ওই বাড়িতে মাদকের জন্যে যায়। পরে তাকে আটকে মারধর করা হয়। এরপরে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। মারধরের ভিডিও ফুটেজের কথা জানতে চাইলে বদরুদ্দিন বদু বলেন, আমি তখন আহত ছিলাম। তাই কিছু জানি না।

এ বিষয়ে কুল্লা ইউনিয়নের মাখুলিয়া এলাকার ইউপি সদস্য পলান আলী বলেন, শাকিল এলাকার বিভিন্ন মেয়েকে নানা প্রলোভন দিত। আমার কাছে অনেকেই বিচার দিয়েছে। ওইদিন গৌর কীর্তনের বাড়িতে ওভাবে এক মেয়ের ঘরে ঢুকলে তাকে আটক করা হয়। পরে সে আমাদের মারধর করে।

ইউপি সদস্যের ছেলেও মারধরে যুক্ত ছিল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সে ওইখানে ছিল না। ভিডিও ফুটেজে তাকে দেখা গিয়েছে জানালে তিনি বলেন, আমি তো শুনি নাই। আমি পুলিশে কল দিয়ে বলছি তারা যেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে শাকিলকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

ঘটনার খবর পেয়ে তাকে হামলাকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করেন ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমার আরেকজন সহকর্মী মূলত ডিউটিতে ছিলেন। কিন্তু আমাদের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাকেও সেখানে যেতে বলেন। পরে আমি গেলাম। দেখি অনেক ভিড়। আর তাকে মারধর করা হয়েছে। কারা মারধর করেছে বলতে পারি না। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। ডাক্তারকে বললাম তাকে ভালো মতো চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে। পুলিশ হিসেবে তাকে রক্ষা আমার কর্তব্য। সে যেনো সঠিক বিচার পায়। সেটা আমার কর্তব্য। সেজন্য যা করা দরকার করবো।

আইনি ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ও সুস্থ হোক। মামলা দেওয়া যাবে। সুস্থ হোক। তারপর ও যে ব্যবস্থা নিতে চায়, আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: