প্রাইভেটকারে শিক্ষক দম্পতির লাশ, যা বলছে স্বজনরা

প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০২২, ০১:৪৫ এএম

গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকা থেকে স্কুলশিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি কারে তাদের উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন, গাজীপুর মহানগরের কামারজুরি এলাকার বাসিন্দা এ কে এম জিয়াউর রহমান (৫১) ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার ওরফে জলি (৩৫)। তারা দুজনই পৃথক দুটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।

জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ জানান, জিয়াউর ও জলি টঙ্গীর পৃথক স্কুলে চাকরি করলেও প্রতিদিন একসাথে নিজস্ব প্রাইভেটকারে যাওয়া-আসা করতেন। বুধবার স্কুলের কাজ শেষে বিকেলের দিকে মামাত ভাইকে গাড়ি তুলে জিয়াউর নিজে গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী জলির স্কুলে যান। সেখান থেকে জলিকে গাড়িতে তুলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথে মামাত ভাইকে রাস্তায় নামিয়ে দেন তারা। তার ছেলে এ কে এম তৌসিফুর রহমান মিরাজ সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বাবার মোবাইলে কল দেন। কিন্তু বাবার মোবাইল রিসিভ না হওয়ায় মায়ের ফোনে কল দিলে তারা বাসায় আসার কথা জানান।

মিরাজ বলেন, মোবাইলে কথা বলার সময় মায়ের কথাবার্তায় ক্লান্তির ভাব ছিল। কথা বলার পর দীর্ঘ সময়েও বাসায় না আসায় পুনরায় কল দিলে রিং বাজলেও কেউ ফোন রিসিভ করেননি। এরপর একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তাদের হদিস না পেয়ে স্বজনরা রাতভর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। এ সময় তারা গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা এবং পূবাইল থানায়ও যোগাযোগ করেন।

মিরাজ জানান, বড় চাচা ও ফুফাকে সাথে নিয়ে পূবাইল থানায় খোঁজ করে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ফেরার পথে বাড়ির কাছে গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে বাবার প্রাইভেটকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। গাড়ির কাছে গিয়ে গিয়ে চালকের সিটে বাবা এবং তার পাশের সিটে (সামনে) মায়ের শীতল ও নিথর দেহ দেখতে পাই। তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে বোর্ডবাজারস্থ তায়েরুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে উত্তরার নস্ট্রাম নামের অপর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের সহোদর বড় ভাই মো: রিপন ও শ্যালিকা আহমিদা আক্তার লিমা বলেন, নিহতদের গলায় কালো দাগ রয়েছে। তাদের মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কেননা তাদের সাথে থাকা স্বর্ণলঙ্কার, নগদ প্রায় দু’লাখ টাকা ও মোবাইল ফোনের কিছুই নেয়নি হত্যাকারীরা। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত না-ই হতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেত। অথচ তার কিছুই তারা নেয়নি।

তারা জানান, জিয়াউরের সাথে সম্প্রতি তার স্কুলের কয়েকজনের সাথে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে বলে জেনেছি। প্রায় দু’বছর আগে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন তিনি। এর আগে দীর্ঘ দিন টঙ্গীর নোয়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়সহ নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের একাধিক স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন।

গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, ঘটনাটি তদন্তে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: