অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে আদালতে বৃদ্ধা, কারণ দর্শানোর নির্দেশ

প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০২২, ০৯:০৭ এএম

নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষকের পছন্দের প্রার্থীদের বাছাই করা, নয় ছয় করে তফসিল ঘোষণা, নিজের স্ত্রীকে মহিলা অভিভাবক সদস্য মনোনীত করা, গোপনে দাতা সদস্য সৃজনসহ নানা অনিয়ম করার অভিযোগে কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন ঘিরে ৭ দিনের মধ্যে জবাব দিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত।

সম্প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক কতিপয় স্বার্থনেষী ব্যক্তিবর্গের যোগসাজশে গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে মনগড়া ম্যানেজিং কমিটির তালিকা তৈরি করে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের চেষ্টা করতেছে বলে নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (১৭ আগষ্ট) কক্সবাজার সিনিয়র জজ আদালতের সহকারি জজ সুশান্ত চাকমা এ আদেশ দেয়। আগামী ২০ আগষ্ট এ নির্বাচনের তারিখ ধার্য রয়েছে। আবেদনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট দিলরুবা। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মিজান।

খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচন স্থগিত চেয়ে দাতা সদস্য হাফেজা খাতুন রিট করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেয়। বিবাদীদের বিরুদ্ধে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ কেন প্রচার করা হবে না তা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে আদালত। খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সদর উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার রাশেদুল হাসান মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে জবাব দিতে বলা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আগামী ২০ আগস্ট খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন ঘিরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বির্তকিত প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক। ইতিমধ্যে তিনি তার ঘনিষ্ঠজনদের নির্বাচিত করার আয়োজন সম্পন্ন করেছে। নিজের স্ত্রীকে করেছেন একমাত্র মহিলা অভিবাবক সদস্য। বিদ্যালয় প্রতিষ্টার প্রথম জমি দাতা হাফেজা খাতুনকে পরিচালনা কমিটিতে আসার পথ রুদ্ধ করার কুমানসে রহিম উদ্দিন সিদ্দিকি, যুবায়ের মুহাম্মদ এহসান ও আব্দুল মান্নান ভুট্টো নামে তার তিনজন নিকট আত্মীয়দের দাতা সদস্য হিসেবে সৃজন করে।

অথচ তারা কেউই নিয়ম অনুযায়ী দাতা সদস্য নয়। শুধু তাই নয়, নানান বির্তকিত এই জহিরুল হক বিদ্যালয়ে টিকে থাকতে শিক্ষক নামধারী স্থানীয় একটি লাঠিয়াল বাহিনীকে ব্যবহার করছেন প্রতিনিয়ত। যাতে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস না দেখায়। এছাড়াও পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্যদের খসড়া ভোটার তালিকা গত জুন মাসের ২২ তারিখ প্রস্তুত করলেও প্রধান শিক্ষক ইচ্ছেকৃতভাবে তা প্রকাশ করেনি। নিয়মিত নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দেন নি। তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে প্রধান শিক্ষক পদে তিনি এখনো টিকে রয়েছে তা সবাইকে বিস্মিত করেছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী বৃদ্ধা হাফেজা খাতুন মুঠোফোনে আবেগাপ্লুত কন্ঠে বলেন, প্রধান শিক্ষক জহির আমার পুত্র তুল্য। সেই ১৯৯২ সন থেকে সন্তানতুল্য স্কুলের জন্য যখন যা চেয়েছে তা ই দিয়েছি। তাকে অনেক বিশ্বাস করতাম। কিন্তু আমার সাথে এভাবে প্রতারনা করবে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আমার। তার কোন আত্মীয় কোন দিন কোন জমি দান করেনি। তবুও তাদের নাম কিভাবে আসল তা আমার বোধগম্য নয়। তার সেচ্ছাচারিতার চরম সীমা অতিক্রম করার কারণে (ভারি গলায়) এই বৃদ্ধ বয়সে সুবিচারের আশায় আদালতে পর্যন্ত যেতে হয়েছে! বিজ্ঞ আদালতের আদেশের পর ও নাকি প্রধান শিক্ষক জহির প্রশাসনের কর্তাদের হাত করে আদালতের কথা অমান্য করছে! আমি আর কোথায় যাব? আল্লাহর কাছে তিনি এইসবের বিচার দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই বৃদ্ধা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়টি একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষা বিস্তার ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ছিল। তবে প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকের কারণে ঐতিহ্যবাহী স্কুলটির সুনাম নষ্ট হতে শুরু করে। প্রধান শিক্ষকের একক স্বেচ্ছাচারিতা, অযোগ্যতা এবং ভয়াবহ রকমের দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়টি আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে। জহিরুল হকের ব্যাপক দুরভিসন্ধির দুর্নীতিতে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তার সঙ্গে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, অকারণে চাকরিচ্যুত করার হুমকি, শিক্ষার্থীদের নম্বরপত্র ও সনদ বিতরণে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ, অষ্টম ও নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন বাবদ অতিরিক্ত ফি আদায় এবং এই টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন অভিবাবকরা। তিনি প্রতিবারই এ ধরনের আজ্ঞাবহ নির্বাচনী দাতাদেরই কৌশলে নিয়মিত কমিটিতে আনেন। তাই এলাকাবাসী এ ধরনের কমিটিকে প্রধান শিক্ষকের পকেট কমিটি বলে থাকেন! স্থানীয় শিক্ষানুরাগী, অভিভাবকসহ স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন!

এ বিষয়ে খরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার রাশেদুল হাসান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ৭ দিনের মধ্যে জবাব দিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত। নির্বাচন বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: