বউভাতে মাংসের পিস ছোট, দুই হাজার টাকা ও ৫ বোতল মদ জরিমানা

প্রকাশিত: ২০ আগষ্ট ২০২২, ০৯:৫৩ এএম

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় হরিজন (বাঁশফোড়) সম্প্রদায়ের বউভাতের অনুষ্ঠানে মাংসের পিস ছোট হওয়ায় পঞ্চায়েত বসিয়ে একটি পরিবারকে ২ হাজার টাকা ও ৫ বোতল বাংলা মদ জরিমানা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ জরিমানার আদেশ দেন। জরিমানার টাকা ও মদ পরিশোধ না করায় ওই পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শ্রী চন্দন বাবু চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

শ্রী চন্দন বাবু দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুর হল্ট স্টেশনপাড়ার শ্রী রামু বাঁশফোড়ের ছেলে। ভুক্তভোগী শ্রী চন্দন বাবু জানান, গত ২০ এপ্রিল নিজেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোর্ট থেকে বিবাহ রেজিস্ট্রি করি। এরপর দুই পরিবার মেনে নেওয়ায় গত ১২ অক্টোবর বরযাত্রী নিয়ে শ্বশুরবাড়ি খুলনার খালিসপুর যাই। পরদিন আমাদের বাসায় বউভাতের আয়োজন করা হয়। সেখানে বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের সমাজ প্রধান মিন্টু বাঁশফোড়, দিতেন বাঁশফোড়, রাজু বাঁশফোড়, আকবার বাঁশফোড়, রংলাল বাঁশফোড়সহ সম্প্রদায়ের নেতাকর্মীরা মাংসের সাইজ ছোট বলে গন্ডগোল করেন। তাদের দাবি মাংশের পিচ ছোট হয়েছে।

বিষয়টি আমার বাবা জানতে পেরে তাদেরকে বলে যে যার মতো পেট ভরে খেতে, তারা তা না খেয়ে চলে যান। ঘটনার দুদিন পর গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সালিস ডেকে আমার বাবাকে পাঁচ বোতল কেরু অ্যান্ড কোম্পানির বাংলা মদ ও দুই হাজার টাকা জরিমানা করে। বিষয়টি আমরা না মানায় তারা আমাদের একঘরে করে দেওয়ার হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় আমার পরিবার অপমান, অপদস্তসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সঠিক বিচারের জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের দর্শনার সমাজ প্রধান মিন্টু বাঁশফোড় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সম্প্রদায়ের রীতিনীতি অনুযায়ী সামাজিক নিয়ম না মানার কারণে পাঁচ বোতল মদ ও দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছি। তারা এখনো পরিশোধ না করে উল্টো প্রশাসন ও সংবাদকর্মীদের কাছে বিচার দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বউভাতে মাংসের পিস ছোট হয়েছিল। আমাদের নিয়ম অনুসারে এক কেজি মাংস ১০ টুকরো করতে হবে এবং তা প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে কাটতে হবে। তারা এসব মানেনি। আর আগেও তার মেয়ের বিয়েতে সামাজিক নিয়ম না মানার কারণে পাঁচ হাজার টাকা ও ১০ বোতল মদ জরিমানা করা হয়েছিল।

বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের খুলনা বিভাগীয় প্রধান জিতেন বাঁশফোড় বলেন, বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের ছেলে কিংবা মেয়ে বিয়ে দিলে প্রতিটি পরিবার থেকে একজন সদস্যকে খাওয়াতে হবে। এ রীতি গত ৫০ বছর ধরে চলে আসছে। কিন্তু গত ১৩ তারিখে বৌভাত অনুষ্ঠানে আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষজনকে রেখে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে আগে খেতে দেই। পরে আমাদের বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের মানুষদের খাওয়ার সময় ছোট ছোট দুটো পিচ মাংশ খেতে দেই। আমাদের দর্শনা বাঁশফোড় সম্প্রদায়ের ৫ সদস্য বিশিষ্ট পঞ্চায়েত বসিয়ে প্রথমে ৫ বোতল কেরুর বাংলা মদ ও ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরবর্তীতে ৫ বোতল মদ বাদ দিয়ে শুধু দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত সিংহ রায় বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এই ধরনের নিয়মকানুন মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, এ ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: