২৭ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করে সংসার চলে বিলকিসের

প্রকাশিত: ২৩ আগষ্ট ২০২২, ১১:১৩ পিএম

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালী ইউনিয়নের ছোট নবগ্রাম এলাকার বিলকিস বেগম-জিন্দা সরদার দম্পতির তিন ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অভাব-অনটনে সংসার চালানো হয়ে পড়ে দায়। অবশেষে তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে ২৭ বছর আগে শুরু করে বারুয়াখালী বাজারে চিতই পিঠা বিক্রি। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করে চলছে তার সংসার। শুধু বিলকিস দম্পতি নয়, নবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তাদের মতো অনেক নারী পুরুষের সংসার চলছে বিভিন্ন সুস্বাদু পিঠা বিক্রি করে।

পিঠা আর পুলির আয়োজন বহুকাল আগে থেকেই করা হয় ঐতিহ্যগতভাবেই। কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছে থাকলেও এখন অনেকেই ঘরে ঘরে পিঠা বানিয়ে খেতে পারে না। বাড়িতে পিঠা বানানোর ঝামেলা এড়াতে অনেকেই পিঠার দোকান থেকে পিঠাক্রয় করে স্বাদ মিটাচ্ছে। তাই নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে জমে ওঠে বাহারি পিঠার দোকান। সন্ধ্যার পর থেকে এক প্রকার সিরিয়াল দিয়ে কিনতে হয় পিঠা। রাস্তার দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে অনেককেই দেখা যায় পিঠা খেতে। আর পিঠা খাওয়ার তৃপ্তি মেটাতে গিয়ে নবাবগঞ্জের অর্ধশতাধিক পরিবারের উপার্জন হচ্ছে এখান থেকেই।

যা দিয়ে চলছে তাদের সংসার, যা তাদের জীবনযাপনে সাহায্য করছে। শুধু যে সাধারণ মানুষই এই পিঠা খেয়ে থাকেন তা নয়। নবাবগঞ্জের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ রাস্তার ধারের পিঠার দোকানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে দিন দিন। খোঁজ নিয়ে যায় গেছে, প্রতিটি চিতই পিঠা বিক্রি করেন ১০ টাকায়। বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পিঠার দোকানে ভিড় করেন ক্রেতারা। শীত ছাড়াও গরমের মৌসুমেও এখন চিতই পিঠার চাহিদা বেশ। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয় এখানে। পিঠা বিক্রি করে শুধু পরিবারের খরচই যোগার করেন না। এই উপার্জিত অর্থ সঞ্চয়ও করেন বিলকিস বেগম। ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে পিঠা। আর পিঠাই এখন আয়ের একমাত্র অবলম্বন। নবাবগঞ্জের বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা গুলোতে প্রতিদিন বিকেল থেকে ভাপা পিঠা ও চিতই (চিতি) পিঠা বিক্রি হয়। চিতই পিঠার সঙ্গে সরিষার ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, মরিচের ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা দেওয়া হয়। ডিম দিয়েও বানানো হয় চিতই পিঠা। ভাপা পিঠা ৫-১০ টাকা, ডিমচিতই ৫-১০ টাকা করে প্রতি পিচ বিক্রি হয়।

বারুয়াখালী গরুর হাটে পিঠা বিক্রি করা বিলকিস-জিন্দা দম্পতি জানান, ‘খেজুর গুড় ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি ভাপা আর চালের গুঁড়া পানি দিয়ে বানানো হয় চিতই পিঠা। শীতের পিঠা হলেও বছরের প্রায় সব সময়ই তিনি পিঠা বিক্রি করেন। পিঠা বিক্রি করেই চলছে তাদের সংসার। পিঠা বিক্রির টাকা দিয়ে দুই মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন করেছেন ।’ নবাবগঞ্জের বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, বান্দুরা ও নয়নশ্রী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট এমন পিঠা তৈরির দোকান চোখে পড়ার মতো। ভাপা, চিতই সহ নানান স্বাদের পিঠা এখন হাতের কাছে মিলছে। বিকেলে হলেই দোকানিরা তাদের পসরা সাজিয়ে বসছে। বিভিন্ন স্থানে এখন রকমারি পিঠার দোকান পিঠাপ্রেমিদের আকৃষ্ট করছে। বিকেল থেকেই এসব পিঠা বিক্রির দোকানে ক্রেতা ভিড়। পিঠার স্বাদের জন্য বিভিন্ন রকমের ভর্তা তৈরি করেন। এছাড়াও প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচা কেনা।

২৭ বছর ধরে শীতের পিঠা বিক্রি করা নারী বিলকিস বেগম (৪৫) জানান, ‘শীতকালের মতো এখন সারাবছরই পিঠার চাহিদা আছে। প্রতিদিন গড়ে ৩ শতাধিক পিঠা বিক্রি করেন তিনি। চালের গুঁড়া, গুড়, লাকড়ি ও অন্যান্য খরচ বাদে ৫০০-৬০০ টাকা লাভ হয় দিনে। মূলত বিকেল ও সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি হলেও তুলনামূলক সন্ধ্যায় দোকানে পিঠার চাহিদা বেশি থাকে। সন্ধ্যার সময় পিঠা কিনতে দোকানে সিরিয়াল দেন ক্রেতারা। তা ছাড়াও অনেকে বেশি পিঠা প্রয়োজন হলে ২/১ দিন আগে অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়ে যান।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: