জ্বিন তাড়ানোর নামে ঝাড়-ফুঁক, মাদ্রাসা ছাত্রীর মৃত্যু

প্রকাশিত: ৩০ আগষ্ট ২০২২, ১১:২৫ পিএম

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জ্বিন তাড়ানোর জন্য কবিরাজের দেয়া ঝাঁড় ফুকে লিমা আক্তার তামান্না (১৪) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মৃত লিমা আক্তার তামান্না ওই গ্রামের মো. আব্দুর রশিদের মেয়ে। স্থানীয় একটি মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে।

অভিযুক্ত কবিরাজ আমেনা বেগম (৪৫) নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি বাঁশহাটি গ্রামে মেয়ের জামাই মো.রমজান মিয়ার থেকে কবিরাজি করতেন। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন জালাল ও কাশেম। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা জাটিয়া ইউনিয়নের বাঁশহাটি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

নিহতের বাবা রশিদ মিয়া জানান, বেশ কিছু দিন যাবত তামান্নার কোমর ব্যথা করে বলে জানায়। পরে তাকে ওষুধ খাওয়ালে ভাল হয়ে যায়। কয়েক দিন পর আবার কোমর ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়ে তামান্না। এসময় কোমড় ব্যথা ছাড়াও শরীর দুর্বল ছাড়াও মাথা, শরীর ব্যথা ও খিচুনি হতো। পরে ওই কবিরাজ আমেনা বেগমের দুই সহযোগী জালাল ও কাশেম তার মেয়ের চিকিৎসা করবে বলে জানায়।

তিনি আরও বলের, প্রথম দিন তামান্নাকে নিয়ে কবিরাজের বাড়িতে প্রায় চার ঘণ্টা ঝাড়-ফুঁক দেওয়ানো হয়। এতে তামান্না আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। পরে সোমবার রাতে দুই সহযোগী নিয়ে বাড়িতে এসে চিকিৎসা চালান ওই কবিরাজ।

রাতভর তার মুখ চেপে ধরে নাক দিয়ে আগরবাতি ও কাপড় পোড়া ধোঁয়া দেওয়া হয়। এতে তামান্না জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এসময় জিন চলে গেছে বলে কবিরাজ ও তার দুই সহযোগী চলে যায়। তামান্নার জ্ঞান না ফেরায় বেলা ১২ টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেছে কর্তব্যরত চিকিৎসক তামান্নাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসক। সেখানে নেওয়ার জন্য হাসপাতাল বের করলেই সে মারা যায়।

এ বিষয়ে স্থানীয় জাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান আকন্দ হলুদ বিডি২৪লাইভকে বলেন, নারী কবিরাজ আমেনা বেগম নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি বাঁশহাটি গ্রামে মেয়ের জামাই মো. রমজান মিয়ার থেকে কবিরাজি করতেন। এই কাজে তাকে সহায়তা করতেন স্থানীয় জালাল ও কাশেম।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন সারারাত ওই মেয়ের মুখ বন্ধ রেখে নাক দিয়ে আগরবাতি, ধোপ, নেকরা পুরে ধোয়া দেয়। এতে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। সকালে মেয়ের বাবা আমাকে মোবাইলে বিষয়টি জানালে হাসপাতালে নেয়ার পরার্মশ দেই। তবে, স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)শেখ মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, ঘটনাটি সাংবাদিকরা ফোন করে জানানোর পর আমি নিজেই ঘটনাস্থলে এসেছি। অনেক আগেই দাফন করা হয়েছে। তবে, তার পরিবারের সাথে কথা বলছি। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: