যমুনার বিলে-ঝিলে শাপলা ফুটলেই মুখে হাসি ফোটে ওদের

প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:৩৮ পিএম

রোকনুজ্জামান, চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) থেকে: যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জের চৌহালীর বিভিন্ন বিল ও ঝিলের ভাদ্র - আশ্বিন মাসে বিস্তীর্ণ জলাভূমি জুড়ে প্রচুর শাপলা ফোটে। আর এই বিল-ঝিলের শাপলা তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন বেশকিছু দরিদ্র মানুষ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে জীবিকার তাগিদে মানুষগুলো ছুটে যান জলাভূমির বুক থেকে শাপলা তোলার জন্য। শাপলা তুলে ভরদুপুরে সব শাপলা একসঙ্গে করে বাজারে বিক্রি করেন। আর এই আয় থেকেই চলে তাদের সংসার।

বছরের অন্যান্য সময় কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকলেও বর্ষার পর বিলে নদী নালায় পানি থাকায় এসব মানুষের হাতে কোনো কাজ থাকে না। তখন জীবন ধারণ করা কার্যত অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই সময়টাতে শাপলা বিক্রি করে পরিবারের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিন কাটায় কিছু পরিবার।

ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্তও বিলে আর ছোট নদীতে প্রচুর শাপলা ফোটে। আর এ সময়টাতে তারা অন্যান্য সময় থেকে বেশি শাপলা তুলতে পারেন। পানি যত গভীর সেখানকার শাপলা তত ভালো হয়।

চৌহালী উপজেলার বিভিন্ন বিল-ঝিল ঘুরে দেখা যায়, চারপাশে এখন অথৈ পানি। ডিঙি নৌকা দিয়ে কেউ বিলে মাছ ধরছে কেউবা আগাছা পরিষ্কার করে নৌকা নিয়ে বিলের গহীনে যাচ্ছেন শাপলা তুলতে। আবার কেউ বিল থেকে শাপলা তুলে জমা করছেন নৌকায়। নৌকায় করে শাপলা এনে বাজারে বিক্রি করার জন্য মহাসড়কের পাশে স্তূপ করে রাখছেন তারা।

স্থানীয় সামাদ মোল্ল্যা বলেন, তিনি জন্মের পর থেকেই এসব বিলে শাপলা ফুল ফুটতে দেখছেন। শাপলা তুলে স্থানীয় বাজার ও বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে বিলের পার্শ্ববর্তী এলাকার অসংখ্য পরিবার।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, বছরের পাঁচ মাসই এসব বিলে ফুটে শাপলা আর অনেক পরিবার শাপলার ওপর নির্ভরশীল হয়। এদের কেউ শাপলা তুলে, কেউবা বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বিলে আষাঢ় থেকে শুরু করে কার্তিক এবং ভাদ্র ও আশ্বিন মাস পর্যন্তও শাপলা ফুল পাওয়া যায়।

কয়েক বছর ধরে শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করা ময়নুল হক জানান, ভাদ্র- আশ্বিন কাজ না থাকাই শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করি। অন্য সময় থেকে এ সময়টাতে খুব স্বচ্ছলভাবে চলতে পারি। বর্ষার মৌসুমে প্রতিদিন সকালে আমরা কয়েকটা দলে ভাগ হয়ে শাপলা তুলতে যাই। প্রতিটি দলে ১০-১২ জন সদস্য থাকে। প্রতি দল মিলে দুই আড়াইশ কুড়ি (প্রতি কুড়িতে ২০০-৩০০টি) শাপলা তুলতে পারি। আর এতে আমাদের জনপ্রতি দৈনিক ৫শ-৬ টাকা আয় হয়, যা বছরের অন্য সময় থেকে বেশি। বছরের অন্য সময়টাতে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়, কিন্তু এ সময়টা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে।

কোদালিয়া গ্রামের মজনু মোল্যা বলেন, আমাদের মতো গরিব মানুষগুলোর সারা বছর খুব কষ্ট করতে হয়। তিন বেলা খাবার জোটানো খুব কষ্টের হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এ মৌসুমে আমরা খুব ভালোভাবে চলতে পারি। এসব কাজে বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও অংশগ্রহণ করে থাকে।

এ প্রসঙ্গে চৌহালী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ বলেন, শাপলা প্রাকৃতিকভাবে পুরাতন বিল-ঝিলে জন্মে। এর চাষ পদ্ধতি এখনো প্রচলিত হয়নি। শাপলা ফুল সাধারণ সবজি থেকে অনেক বেশি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ক্যালসিয়াম থাকে। এ্যালার্জি, চর্মরোগ, আমাশয়, অ্যাসিডিটিতেও এটা বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মানসিক রোগেও এর ব্যবহার করা হয়। ফলে সবজী হিসেবে বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে অনেক"৷

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: