দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৩৮ এএম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন মাঠে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ, সর্বব্যাপী অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান।

এর মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপে ইভিএমে ভোট গ্রহণ ও নির্বাচনকানলীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক মহলে পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) চূড়ান্ত করছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি (ইসি)। মূলত এ রোডম্যাপে মূল ৭টি বিষয়কে ধারণ করে চলতি মাসে চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রকাশ করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ধাপে ধাপে নির্বাচন কমিশন একটি আইনি কাঠামো প্রস্তুত করেছে। নির্বাচন কমিশনের যে প্রাতিষ্ঠানিক ও দাপ্তরিক সক্ষমতা রয়েছে তার মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। প্রয়োজনে বিধিমালায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশোধনী আনয়নের মাধ্যমে তা আরো কার্যকর করার সুযোগ রয়েছে বলে কমিশন মনে করে।

রোড ম্যাপের পরিকল্পনায় আছে, সংসদ নির্বাচন সমানে রেখে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন এলাকা পূর্ণনির্ধারণের জন্য আগের নীতিমালা পর্যলোচনা করে একটি নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করা। ২০২৩ সালের মার্চে নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ৩০০ আসনে সীমানা পূর্ণনির্ধারণ করে খসড়া করবে ইসি।

নির্বাচনী আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা হবে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এছাড়া একই বছরের আগস্টে খসড়া ভোট কেন্দ্রর তালিকার উপর দাবি- আপত্তি নিস্পত্তি করবে ইসি।

অন্যদিকে ২০২৩ সালের জুন মাসে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।

কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার। নির্বাচন প্রক্রিয়া সময়োপযোগীকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের পরামর্শ গ্রহণ। সংসদীয় এলাকার সীমানা র্নিধারণ। নির্ভুল ভোটর তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ। বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক ভোটকেন্দ্র স্থাপন। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ। নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহার। দক্ষ নির্বাচনি কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি ও প্রশিক্ষণ। ভোটার সচেতসতা বৃদ্ধি কার্যক্রম। পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধন ও নবায়ন কার্যক্রম। নির্বাচনী কার্যক্রমে গণমাধ্যমকে আইনী কাঠামোর আওতায় সম্পৃক্তকরণ।

জানা গেছে, নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে জিআইএস পদ্ধতিতে ভোট কেন্দ্রের তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার প্রণয়ন। নির্বাচনী ক্যালেন্ডার, অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল ও গ্রহণ, প্রার্থীর তথ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ ব্যববস্থাপনা কার্যক্রম, বোট গ্রহণ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডাটাবেজ তৈরি, কেন্দ্রের তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং কেন্দ্র গতে নিরাপদ ও দ্রুতসময়ে নির্বাচনী ফলাফল প্রেরণ সংক্রান্ত সিস্টেমের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার প্রণয়ণ। নির্বাচন বিষয়ক তথ্য সংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার প্রণয়ন। সফটওয়ারের মাধ্যমে অডিট ও বিভিন্ন রিপোর্ট প্রস্তুত করা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, কমপ্লেইন্ট এবং কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার প্রণয়ন। প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার প্রণয়ন।

এছাড়া আছে ভোটার সংখ্যা, জনশুমারী ও ভৌগলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিআইএস পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়ার প্রণয়ন। এক্ষেত্রে আগামী জানুয়ারিতে আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটটা নতুন নীতিমালা প্রস্তুতবরণ।

ফেব্রুয়ারিতে জিআইএস সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা কওে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। মার্চে নীতিমামলার আলোকে বিশেষজ্ঞদেও সহায়তায় ৩শ আসেনর নীমানা পুননির্ধারণ করে খসড়া প্রস্তুত।

কর্মপরিকল্পনার মধ্যে আরো আছে, আগামী মাসে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও নির্বাচদের সঙ্গে সংলাপ। একই মাসে নির্বাচান পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইসির সংলাপ। আগামী নভেম্বর মাসে নারী নেতৃন্দের সঙ্গে সংলাপ। একই মাসে সুপারিশমালার খসড়া চূড়ান্তকরণ। ডিসেম্বরে সুপারিশমালার চূড়ান্তকরণ।

ফাইল ছবি

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনার বিষয়গুলো নির্বাচনের মূল অংশীজন এবং উপকারভোগী সংগঠন-রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের সমীপে উপস্থান করে সবার মতামতের আলোকে কর্মপরিকল্পনার বিষয়গুলো চূড়ান্ত করে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সামগ্রিক কর্মকান্ড তদারকি এবং তা চূড়াকরণের

এছাড়া আরও জানা যায়, কর্মপরিকল্পনার দেখভাল করার জন্য মাননীয় কমিশনারগণের নেতৃত্বে বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। সবার মতামতের আলোকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে নির্বাচন কমিশন।

এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা শুধু দলকে নয়, সরকারকেও সংলাপ থেকে আসা মতামত জানিয়েছি। কেননা, দলগুলো কী বলছে তা সরকারেরও জানা উচিত। সরকার কিন্তু কোনো দলের নয়। সেই বিভাজনটাকে মাথায় রেখে আমরা সরকাকে জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেছিলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বিরোধী দলগুলো। সেটা আমরা দলগুলোকে জানিয়েছি। ভোটার তালিকা আগামী বছর মার্চ মাসে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করবো। রোডম্যাপ সপ্তাহ দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্তভাবে অবহিত করতে পারবো।

এর আগে সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর বলেছিলেন,সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপে টোটাল নির্বাচনি ম্যানেজমেন্ট থাকবে। ভুল থাকলে কেউ ধরিয়ে দিতে পারবে। রোডম্যাপ চূড়ান্ত। এখন প্রকাশের অপেক্ষা। প্রিন্ট হলেই প্রকাশ হবে। সচিবালয় বিষয়গুলো দেখছে।

এ নির্বাচন কমিশনার আরও বলেছেন, ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। সেই হিসেবে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়, যদি এটি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে সিডিউল দিতে হবে। আর যদি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হয় তাহলে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ঘোষণা হবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: