নারায়ণগঞ্জে গ্যাস সঙ্কট, তিতাসকে শামীম ওসমানের চিঠি

প্রকাশিত: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:৪৩ পিএম

মাসখানেক ধরে গ্যাস সংকটে ভুগছে নারায়ণগঞ্জবাসী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা প্রকট আকারে ধারণ করছে। দিনের ২৪ ঘন্টায় দুই-তিন ঘন্টাও গ্যাস পাচ্ছে না এই জেলার সাধারণ মানুষ। ফলে বিকল্প পদ্ধতির দিকে হাঁটছেন তারা। আর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সঙ্কট নিরসনের দাবিতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

জানা গেছে, গত কিছুদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জের শহর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় চরম গ্যাস সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আগে গ্যাস সঙ্কটের সময়ে রাতের বেলায় গ্যাসের দেখা মিললেওেএখন দিনে রাতে কখনোই দেখা মিলছে না গ্যাসের। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের চাষাঢ়া, বাগে জান্নাত, মিশনপাড়া, খানপুর, মেট্টো হল, তল্লা, বাবুরাইল, পাক্কারোড, দেওভোগ আখড়া, পালপাড়া, ভূইয়ারবাগ, নন্দীপাড়া, আমলাপাড়া, গলাচিপা, কলেজ রোড, জামতলা, মাসদাইর, ফতুল্লা স্টেডিয়াম-সংলগ্ন রামারবাগ, লামাপাড়া, নন্দলালপুর, দেলপাড়া, ভুঁইগড়, কাশীপুর, দোওভোগ মাদরাসা এলাকা, ফতুল্লার নরসিংহপুর, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজিসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র গ্যাসের সংকট।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পূর্ণ বিল পরিশোধ করেও পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। আগে দিনের বেলায় গ্যাস না থাকলেও রাতের বেলায় গ্যাস পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে দিনে রাতে কখনোই গ্যাসের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সঙ্কটের কারণে অনেকে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আর উপায় না দেখে অনেকে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মাটির চুলো কিংবা স্টোভ দিয়ে রান্নার কাজ করছেন। অনেকেই আবার ইলেকট্রিক চুলা কিংবা গ্যাস সিলিন্ডার কিনছেন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের দামও বাড়িয়ে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বাসিন্দা গৃহবধূ নাসিমা বলেন, সকাল বিকেল রাত কোনো বেলাতেই গ্যাস পাচ্ছি না। রাত ১২ টার পরে একটু আকটু গ্যাস আসলেও সেটাও দুই এক ঘন্টার বেশি থাকছে না। আর সারাদিনে তো গ্যাসের দেখাই মেলে না। এখন রান্নাবান্নার জন্যও বসে থাকতে হচ্ছে সেই রাত ১২টা বাজে একটু গ্যাস আসবে সেই আশায়।

এদিকে শুধু আবাসিক নয়, শিল্পকারখানাতেও বিরাজ করছে গ্যাস সঙ্কট। অনেক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সঙ্কটের কারণে অনেক কারখানা উৎপাদন বন্ধও রেখেছেন। নারায়ণগঞ্জের শিল্প কারখানাগুলো চালু রাখার জন্য প্রায় ১০০টি ক্যাপটিভ পাওয়ার রয়েছে, যা গ্যাস সঙ্কটের কারণে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকছে। ক্যাপটিভ পাওয়ারগুলো বন্ধ থাকায় চরম সঙ্কটে পড়ে যাচ্ছে পুরো পোশাক খাত। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও তিতাস গ্যাস অফিসে লিখিত আবেদন দাখিল করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শাকির আহমেদ জানান, বর্তমানে আমাদের যে পরিমান গ্যাসের চাহিদা সে পরিমান গ্যাসের সাপ্লাই আমরা দিতে পারছি না। নারায়ণগঞ্জে আমাদের যে চাহিদা তার অর্ধেকেও বর্তমানে সরবরাহ নেই। বরং দিন দিন সরবরাহের পরিমাণ কমছে। যে কারণে একের পর এক বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস থাকছে না। গ্যাস সঙ্কট নিরসনের দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার প্যাডে আমাদের কাছে চিঠি দিয়েছেন। আমাদের এই সংকটটা যে শুধু নারায়ণগঞ্জে তা কিন্তু নয়। এটা সারা দেশেই চলছে। আমি যে এলাকায় বাস করি, সেখানেও গ্যাস নেই। এই সঙ্কটের অন্যতম কারণ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। ওই যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম যেমন বেড়েছে তেমনি আমদানিকৃত জ্বালানিও চাহিদা মোতাবেক পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন। যদি এটা চালু হয়ে যায় তাহলে গ্যাস চালিত যে পাওয়ার প্লান্ট আছে সেগুলোর ওপর চাপ কমবে। এর আগেও বেশ কিছু গ্যাস ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে পাওয়ার প্লান্ট চালু হয়েছে। এতে আমরা আশা করছি গ্যাস ডিজেলের ওপর চাপ কমবে। চলতি মাসের শেষের দিকে সরকারের আমদানি করা জ্বালানি পাইপলাইনে ঢুকবে বলে জানতে পেরেছি। তখন গ্যাসের সরবরাহ আরো বাড়বে। দুর্ভোগে পড়া নারায়ণগঞ্জবাসীকে ধৈর্য ধরার আহবান জানান তিনি।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: