বিরল রোগে আক্রান্ত শিশুরা মাঝ-বয়সে হারাবে চোখের দৃষ্টি, তাই বিশ্ব ভ্রমণ

কানাডীয় সাধারণ দম্পতি এডিথ লিমে এবং সেবাস্তিয়ান পেলেতায়ার। তাদের সংসারে রয়েছে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রথম মেয়ে মিয়ার বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন তারা লক্ষ্য করেন, তাদের মেয়ে দৃষ্টিশক্তি সমস্যায় ভুগছে। প্রথমবার একজন বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার কয়েক বছর পর মিয়ার চোখে রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা রোগ শনাক্ত হয়। রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা এক ধরনের বিরল জেনেটিক রোগ; যা সময়ের সাথে সাথে রোগীকে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস বা একেবারে দৃষ্টিহীন করে ফেলে।
রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসার কারণে কারো কারো ফ্লুইড জমে রেটিনার ওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার কারো রেটিনার ওয়ালে পিগমেন্টেশন তৈরি হয়। এভাবে যাদের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের ফটো রিসেপ্টর উল্লেখিত সেলদ্বয় সম্পূর্ণভাবে দেখা জিনিসের তথ্য মস্তিষ্কে পাঠাতে পারে না। ফলে রেটিনার ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ব্যতিত মস্তিষ্ক যেটুকু তথ্য পায় চোখ শুধু সেটুকুই দেখতে পারে। বিরল এই রোগে আক্রান্ত একজন মানুষ শিশুবেলায় এই রোগে আক্রান্ত হলে মাঝ-বয়সে গিয়ে তার দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এক পর্যায়ে ১২ বছরের বিবাহিত এই যুগল তাদের সন্তানদের মধ্যে দুই ছেলে কলিন (বর্তমান বয়স ৭ বছর) এবং লরেন্টেরও (৫) একই ধরনের উপসর্গ দেখতে পান ২০১৯ সালে তাদের আশঙ্কা সত্য হয়, চিকিৎসক এই দুই ছেলেরও একই ধরনের জেনেটিক সমস্যার ব্যাপারে নিশ্চিত হন। তবে তাদের অন্য ছেলে লিও (৯) এখন পর্যন্ত সুস্থ আছেন।
আর তাই তাদের এই ৩ সন্তানদের জন্য সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রমী এক সিদ্ধান্ত নেন এই কানাডীয় দম্পতি। অন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে তাদের স্মৃতিতে এমন কিছু বিষয় গেঁথে দেওয়া দরকার; যা তাদের বাকি জীবন চলার পথে দরকার হবে রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসাকে ধীরগতি করার জন্য বর্তমানে কোনও নিরাময় বা কার্যকর চিকিৎসা নেই বলে জানান এডিথ লিমে। তিনি বলেন, এটা এমন একটি রোগ, যা নিয়ে আসলে আপনি কিছুই করতে পারছেন না।‘আমরা জানি না, এই রোগটি কত দ্রুত কত দূর যাবে। তবে আমরা আশঙ্কা করছি, তারা মাঝ-বয়সে গিয়ে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যাবে।’
সাধারণত এই রোগে স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন লোকেরা অন্ধকারের সাথে দ্রুত মানিয়ে নেয়। একবার এই দম্পতি একবার একটি খবর দেখতে পান। সেখানে তারা জানতে পারেন, অন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে তাদের স্মৃতিতে এমন কিছু বিষয় গেঁথে দেওয়া দরকার; যা তাদের বাকি জীবন চলার পথে দরকার হবে। তখন তারা সন্তানদের দক্ষতা তৈরিতে সহায়তা করার দিকে মনোযোগ দেন। মিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে ভিজ্যুয়াল স্মৃতিতে নিমগ্ন রাখার পরামর্শ দেন। যাতে মাঝ-বয়সে দৃষ্টি হারালেও কল্পনায় সেসবের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে সে। সন্তানদের জন্য চিকিৎসকের এই পরামর্শ বাস্তবায়নের একটি পথই আছে। সেটি হলো সন্তানদের নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়া। বিষয়টির ব্যাখ্যায় লিমে বলেছেন, ‘আমি ভাবলাম, আমি তাকে বইয়ে আঁকা হাতির ছবি দেখাবো না। আমি তাকে বাস্তবের হাতি দেখাতে নিয়ে যাবো। এবং আমি এখন তার মেমোরি সেরা, সবচেয়ে সুন্দর ছবি দিয়ে পূর্ণ করে দিতে চাচ্ছি।’
আর এই সিদ্ধান্তের পরপরেই এই দম্পতি সন্তানদের নিয়ে এক বছরের জন্য বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার পরিকল্পনা শুরু করেন। সন্তানের বাবা-মা হওয়ার আগে এই দম্পতি একাধিকবার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে গেলেও এবার বছরজুড়ে সন্তানদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো তাদের জন্য একটু কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন সেবাস্তিয়ান পেলেতায়ার। তিনি বলেন, চিকিৎসা চালানোর পাশাপাশি আমাদের আর্থিক সংকটও রয়েছে। বাড়িতে দুর্দান্ত কাজ করার মতো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু ভ্রমণের চেয়ে ভালো আর কিছুই নেই।‘ভ্রমণে কেবল দৃশ্য উপভোগ নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি ও মানুষের সাথে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা হবে।’ পরে তারা বিশ্ব ভ্রমণের জন্য সঞ্চয় করতে শুরু করেন। সেবাস্তিয়ান যে কোম্পানিতে কাজ করতেন, সেখানে তার নিজের শেয়ারও ছিল। পরে তা বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ পান। লিমেও একটি স্বাস্থ্যসেবা সংস্থায় কাজ করেন। তিনি বলেন, এটা অনেকটা জীবন থেকে পাওয়া ছোট উপহারের মতো ছিল। যেমন, এখানে আপনার ভ্রমণের জন্য টাকা আছে। ২০২০ সালের জুলাইয়ে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার কথা ছিল ছয় সদস্যের এই পরিবারের। তারা স্থলপথে রাশিয়া গিয়ে সেখান থেকে চীনে সময় কাটানোর গভীর পরিকল্পনা করেছিলেন।
তবে মহামারী করোনা ভাইরাসে তাদের বিপত্তি ঘটে। মহামারির বিধি-নিষেধের কারণে ভ্রমণ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হন তারা। বারবার তারা ভ্রমণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন। অবশেষে চলতি বছরের মার্চে তারা মন্ট্রিল ছাড়েন। লিমে বলেন, আমরা আসলে কোনও ধরনের সময়সূচি ছাড়াই মন্ট্রিল থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম।‘আমরা কোথায় যেতে চাই সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিল। তবে আমরা যেতে যেতেই পরিকল্পনা করি। হয়তো এক মাস আগে।’ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ার আগে কোথায় কোথায় যাবেন, সেই তালিকা করেছিলেন এডিথ লিমে-সেবাস্তিয়ান পেলেতায়ার দম্পতি। লিমের মতে, মিয়া ঘোড়ায় চড়তে চেয়েছিল। আর লরেন্ট চেয়েছিল উটের পিঠে বসে ফলের জুস পান করতে।তারা নামিবিয়া ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। সেখানে তারা হাতি, জেব্রা এবং জিরাফের কাছাকাছি যান। পরে সেখান থেকে জাম্বিয়া এবং তানজানিয়া তারপর তুুরস্কের উদ্দেশ্যে উড়াল দেন তারা। তুরস্কে প্রায় এক মাস ঘুরে বেড়ান। কানাডীয় এই পরিবার তুরস্ক থেকে মঙ্গোলিয়া এবং পরে ইন্দোনেশিয়ায় যায়।
তবে এখনো নিরাশ হননি এই দম্পতি। তাদের তিন সন্তান মিয়া, কলিন এবং লরেন্ট শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিশক্তি হারাবে না বলে এখনও আশায় বুক বেধে আছেন সেবাস্তিয়ান-লিমে দম্পতি। ভবিষ্যতে সন্তানদের যাই ঘটুক না কেন সেজন্য তারা এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সন্তানরাও যাতে বিষয়টি ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারে সেজন্য তাদের সেভাবেই তৈরি করছেন তারা। সেবাস্তিয়ান পেলেতায়ার বলেন, ‘আশা করছি, বিজ্ঞান এর একটি সমাধান বের করবে। আমরা সেজন্য প্রার্থনা করছি। কিন্তু আমরা জানি, তারা অন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের সন্তানরা যেন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকে, আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই।’সুত্রঃ সিএনএন
রেজানুল/সা.এ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: