কুবিতে বাড়ছে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ: নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৪৪ এএম

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ছাত্রলীগের হলের নেতাকর্মীদের মাঝে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে দিন দিন বাড়ছে হাতাহাতি ও সংঘর্ষ। কোন ঘটনার তদন্ত কমিটি হলেও হচ্ছে না এর সুষ্ঠু বিচার। এতে হলের নেতাকর্মীরা প্রশাসনকে বৃদ্ধ আঙুল দেখিয়ে আরও উচ্ছৃঙ্খল হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা সবসময় নিরাপত্তা নিয়ে সংকীর্ণ রয়েছেন। প্রশাসনের এমন বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেন চলছে কচ্ছপের গতিতে।

জানা যায়, গত শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) জুমার নামায শেষে বঙ্গবন্ধু হলের প্রধান ফটকের সামনে তুচ্ছ ঘটনা জের ধরে কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং বঙ্গবন্ধু হলের মাঝে হাতাহাতি হয়। যা পরবর্তী রাত ১২ টায় উভয় হলের মাঝে আবার কয়েকদফা দাওয়া পাল্টা হয়। এতে উভয় হলের প্রায় ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পূর্বের ঘটনা জের ধরে আবার মূল ফটকের সামনে উভয় হলে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়, এতে প্রায় সাংবাদিকসহ ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। এতে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বিবেচনায় দুদিন সকল পরিক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) রাতে বাসে সিট রাখাকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম সিফাতের সঙ্গে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদমান সাকিব, রবিন দাশ, মিরাজ হাসান, ছাত্রলীগ কর্মী জাহিদ মোল্লা, রিয়াজুল ইসলাম বাধন, ১৪ তম ব্যাচের একই হল ছাত্রলীগের উপ-নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক মো.রবিউল আলম রিয়াজসহ কয়েকজন বঙ্গবন্ধু হলের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তরিকুলকে মারধর করেন। এতে হয়নি কোন সুষ্ঠু বিচার।

এর আগে ২১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় ওয়াকিল আহমেদকে চিনতে না পেরে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করায় মারধরের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের এক সাধারণ শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান। এ ঘটনায় তার বাঁ-চোখ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হলেও তা পরবর্তী শাখা ছাত্রলীগ বা প্রশাসন কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেও নেই কোন খোঁজ খবর।

ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষ ও হাতাহাতি হয়। এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। ফলে ক্যাম্পাসে সবসময় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহূর্তে সামান্য বিষয় নিয়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। ক্যাম্পাসের এমন ঘটনার প্রশাসনের কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

এই নিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক সময়ে সামান্য ঘটনা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধর এবং নিজেদের হলের মধ্যে মারামারি যেন প্রতিদিনের ঘটনা। সকালে ঘুম থেকে নিউজ দেখি মারামারি বা হাতাহাতি হয়েছে। এসবের কারণে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না সুষ্ঠু বিচার আর পারছে না পড়াশোনা করতে। শেষ পর্যন্ত ক্ষতির সম্মুখীন হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হলে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি বিগত কয়েকবছর স্থিতিশীল থাকলেও বর্তমানে প্রত্যেকটা ছাত্র হলের হাতেগোনা কয়েকটা উশৃঙ্খল নেতাকর্মীর কারণে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আতঙ্ক হয়ে পড়ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করা, আবার নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারি করা এখন তাদের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। প্রশাসন যদি এখনই এদেরকে শক্তহাতে দমন না করে তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় খালেদ সাইফুল্লাহর মত আরেকটি লাশ উপহার পাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, আমরা প্রতিটি ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব। যারা সংগঠনের ভিতরে বিশৃঙ্খলা তৈরি কারে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক হওয়া দরকার নেই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে একাডেমিক ভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে। যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোন ভাবে নিরাপত্তাহীনতা বা আতঙ্কে না থাকে।

তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে কোন রকমের সুষ্ঠু বিচার আশা করা যায় না। শুধু মাত্র শিক্ষার্থীরা না, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারও কোন বিচার প্রশাসন করতে পারছে না। শিক্ষার্থীরা কেন ক্লাস-পরিক্ষা বর্জন করছে তা প্রশাসনে কোন মাথাব্যথা নেই। এমনও হতে পারে সরাসরি প্রশাসন ইন্ধনে দিচ্ছে কোন ঘটনায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, বিগত যে সংঘর্ষ হচ্ছে তা নিয়ে হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে বসে আলোচনা হয়েছে। আমরা হল প্রশাসনের সাথে বসে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর আগে ওয়াকিল নামে এক ছাত্রলীগ নেতা সাধারণ শিক্ষার্থী মারধরের বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, আমরা এই ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এখন তদন্ত কমিটি কতটুকু কাজ করছে এটা আমি বলতে পারব না। শিক্ষার্থীদের যেকোন সংঘর্ষে প্রশাসন কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না এই প্রশ্ন তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে লিখিত অভিযোগ না দিলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। আর তারা যদি নিজেরা নিজেদের সমস্যা সমাধান করে ফেলে তাহলে আমরা কি করব।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এফ এম আবদুল মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল যেন না হয় আমরা তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। এ কমিটি সাত দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রশাসন সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: