পরীক্ষা শেষে অটোরিকশা নিয়ে রোজগারে বের হয় এসএসসি পরীক্ষার্থী
রবিন মিয়া (১৬) একজন অটোরিকশা চালক। চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। চাল-চলন কথাবার্তায় সবার চেয়ে একটু ব্যতিক্রম। লেখাপড়ায়ও তার অদম্য ইচ্ছা শক্তি রয়েছে। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষা শেষেই রোজগারের জন্য অটোরিকশা নিয়ে বের হয় সে। বড় ভাই সোহেল মিয়া অর্থাভাবে লেখা পড়া করতে পারেননি। তাই প্রাইমারী গন্ডি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল তার লেখাপড়া। পিতার সাথে কৃষিকাজ এবং অবসরে অন্যান্য কাজ করে চলছিল সংসার। এক পর্যায়ে ধার দেনা করে পারি জমান প্রবাসে। একই হাল তার ছোট ভাই জুয়েল মিয়ার। অর্থাভাবে প্রাইমারী গন্ডি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল লেখাপড়া। অবশেষে পাড়ি জমান প্রবাসে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে দেশে এসে আর প্রবাসে যেতে পারেননি তারা। সংসারে আবার সেই অভাব অনটন দেখা দেয়।
পরিবারের সবার ছোট রবিন মিয়া। সারা বিশ্বে যখন করোনা মহামারির প্রভাব পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে তাদের পরিবারেও। ১১ সদস্যের এই সংসারে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তার লেখাপড়াও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সংসার চালানোর মত যখন আয় রোজগারের এর কোন উৎস্য ছিল না তখন রবিনের প্রবাস ফেরত বড় দুই ভাই মিলে একটি অটোরিকশা কিনেন। এই সুযোগটি নেয় রবিন। সে তখন ৯ম শ্রেণির ছাত্র। তার লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য স্কুল সময়ের পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত চালায় অটোরিকশা। এ থেকে যে টাকা উপার্জন হয়, নিজের খরচ রেখে বাকীটুকু সংসারের জন্য ব্যয় করে। রবিন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ মুমুরদিয়া গ্রামের মো. রমজান আলীর ছোটে ছেলে। সে হাজেরা সুলতানা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন নিয়মিত ছাত্র।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। রবিন জানায়, প্রথম দিন বাংলা প্রথমপত্র এবং শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ভাল হয়েছে। অন্যান্য বিষয়েও ভাল প্রস্তুতি আছে। ভাল ফলাফল হবে এমনটিই তার প্রত্যাশা।
রবিনের বড় ভাই সোহেল মিয়া জানান, আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে রবিন সবার ছোট। সে লেখাপড়ায় ভালো। নিজ চেষ্টায় লেখা পড়া করে যাচ্ছে। তার নিজের লেখাপড়ার খরচ সে নিজে অটোচালিয়ে জোগার করে।
রবিনের বাবা মো. রমজান মিয়া বলেন, আমার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১১জন। আয় রোজগার বলতে কিছু নেই। প্রবাস ফেরত দুই ছেলে মিলে একটি অটোরিকশা কিনেছে। এটিই এখন একমাত্র ভরসা।
রবিন শান্ত, সরল প্রকৃতির ছেলে। পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে সে অটোরিকশা চালায়। এতে সে লজ্জা বোধ করে না। বরং পরিশ্রমের মাধ্যমে আয় রোজগারে সে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। নিজের খরচের জন্য কারো কাছে হাত পাততে হয় না। রবিনের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই সে যেন জীবনে বড় হতে পারে।
মুমুরদিয়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য শামীমা আক্তার শাম্মী বলেন, রবিন ভালো ছেলে। নিয়মিত স্কুলে যায়, পড়াশোনা করে। আমি প্রত্যাশা করবো পিতা মাতার দারিদ্রতার কারণে শিক্ষা থেকে দূরে সরে না গিয়ে প্রত্যেক ছেলে মেয়ে যদি রবিনের মত কর্মমুখি হয় তাহলে দেশ দ্রুত উন্নতির শিখরে পৌছে যাবে।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: