ঘর দখল করে মালিকের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করলেন দখলদার!

প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:০১ পিএম

ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির উপরে নির্মিত বসত বাড়ীতে হামলা, ভাঙ্গচুর ও লুটপাটের পর উল্টো গৃহকর্তাদের আসামী করে মামলা করার অভিযোগ উঠেছে। আর মামলার বাদি হয়েছেন ঘরটি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠা রিয়াজ উদ্দিন নামের একজন আইনজীবী।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজার সদরের ঝিংলজা ইউনিয়নের কলেজ গেইট এলাকায়। এ মামলার আসামী করা হয়েছে, ঘর ও জায়গার দুই মালিক: মো শাহাজান, আমিন উল্লাহকে। এ ছাড়াও রাশেদুল করিম, জলাল আহমেদ, ফজলুল করিমসহ অজ্ঞাত আরো ১৫ জনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গেল (১০ সেপ্টেম্বর) সদর থানায় নথিভুক্ত হওয়া মামলায় বাদী রিয়াজ উদ্দিন এজাহারের দাবি করেন, ৭ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে একদল সন্ত্রাসী বেআইনীভাবে ঘরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের শ্লীলহানিতা, মারধর ও লুটপাট করেন। এতে দুই লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতির পাশাপশি আরও তিন লাখ ষোল হাজার টাকা লুটের কথা বলা হয়েছে।

অথচ এর আগের দিন ৯ সেপ্টেম্বর একই ঘটনায় ঘর ও জমির মালিক আমিন উল্লাহ সদর থানায় দালিক তথ্য উপস্থাপন করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ্য করেন, রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে স্থানীয় ওরাজ উদ্দিনসহ আরও ৫ থেকে ৫ জন চিহৃিত ভূমিদস্যুর একটি চক্র দেশীয় অস্ত্রসহ তার বাড়ীতে হানা দিয়ে বসতভিটা জবর দখলের চেষ্টা করেন। এসময় তাদের বাঁধা দিতে গেলে আমিন উল্লাহকে প্রাণে মারার হুমকি দেন। এবং ঘরের গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও কাগজপত্র নিয়ে যান। এসময় জাতীয় সেবা ৯৯৯ কল দিলে সদর থানা পুলিশকে তাকে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি লিখিত অভিযোগ করেন।

আমিন উল্লাহ জানান, স্থানীয় কামরুন্নাহারের কাছ থেকে চলতি বছরের শুরুতে আমি আর শাহাজান মিলে সদরের মৌজা ঝিংলজা, সৃজিত বি, এস খতিয়ান নং-২৫০৩, ১২৬৮৫, দাগ নং ১৪১৬১/৩৮৩৭৩, ১৪১৬০/২৪৮৬২ দাগের আন্দর .০৯ একর নাল এবং ভিটা জমি ক্রয় করেছি। সে থেকে আমাদের দখলে রয়েছে।

অন্য দিকে ভূমিদস্যু রিয়াজ উদ্দিনও মোক্তার আহমদে নামের এক ব্যাক্তির কাছ থেকে একই দাগের ও চৌহদ্দি উল্লেখ করে আমাদের পার্শ্ববর্তী কিছু জায়গা ক্রয় করেছেন। সেখানে তিনি বসতি গড়ে একজনকে বসবাস করার জন্য দিয়েছেন। কিন্তু হঠাৎ করে কোন কারন ছাড়া লোভের বসে আমার ভিটেভাটি বার বার দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন রিয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি চিহৃিত ভূমিদস্যু চক্র।এ কারনে আমি আদালতের আশ্রয় নিয়েছি।আদালত আমার পক্ষে ১৪৪ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।আমার পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছে। পাশাপশি শান্তিপূর্ণ ও স্থানীয়ভাবে বিরোধ মিটানোর জন্য একজন আইনজীবীর স্থানীয় মেম্বারের ও করিম নামের একজনের সমন্বয়ে বিচার রয়েছে। এরপর আমার ঘরে হামলা ও ভাঙচুর করে আমাকে আসামী করা হয়েছে।আমি এর বিচার চাই।

ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। স্থানীয়রা বলছে, একজনের উস্কানিতে অন্যের জমি দখলের চেষ্টা করছেন রিয়াজ উদ্দিন।

এদিকে অন্যের জমি বার বার দখলের চেষ্টার কারনে রিয়াজ উদ্দিনকে জমি বিক্রি করা মোক্তার আহমেদ আদালতে একটা লিখিত জবানবন্দি দিয়েছেন। লিখিত জবানবন্দিতে তিনি বলেন, রিয়াজ উদ্দিনকে দলিলমূলে ও চৌহদ্দি উল্লেখ করে জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছি, সেখানে তিনি দখলে রয়েছেন। এখন আমার কাছ থেকে ক্রয় করেছেন দাবি করে যে জায়গার দখল তিনি নিতে চাচ্ছেন বলে জেনেছি, সেটা আমার জমি নই। এ ধরনের ঘটনাও আমার কাম্য না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ওটা আমার ক্রয় করা জমি আমার দখলে রয়েছে। জাল দলিল সৃষ্টি ও জমির মূল মালিক মোক্তার আহমেদের লিখিত জবানবন্দি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি দলিল জাল করিনি, তারা করেছে। সেভাবে হয়তো মোক্তার আহমেদের জবানবন্দিও তারা জাল করেছে।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনসময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার শহর ও সদরের বিভিন্ন এলাকায় পরিকল্পিতভাবে আইনশৃংঙ্খলা অবনতি ঘটিয়ে একটি চক্র আসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। এ কারনে দিনদিন আইনশৃংঙ্খলা অবনতি হচ্ছে। বিশেষ করে সদরের বিএমখালী ও ঝিংলজা এলাকায় প্রতিনিয়ত উস্কানির মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিহর মানুষকে আসামী ও জমির মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। চক্রটির সাথে জড়িতের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

দখলদারকে বাদি বানিয়ে জায়গার মালিকদের আসামী করা প্রসঙ্গে জানতে চালে কক্সবাজার সদর থানার ওসি তদন্ত মোঃ সেলিম উদ্দিন বলেন, মূলতো জমির মালিক কে সেটা পুলিশের দেখার বিষয় না বিষয়টি দেখবে আদালত। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই ও ঘরে কাদের লোকজন রয়েছে সে তথ্যের ওপর ভিক্তি করে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী অধিক তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আদালতের আদেশ ও জমির মালিকের জবানবন্দি ও দলিলের বিষয়ে অবগত করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালত যদি কোন প্রকার সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে। পরিকল্পিত ভাবে উস্কানি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতী ঘটিয়ে পুলিশের সহযোগীতায় বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন সেলিম উদ্দিন।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: