স্কুল মাঠে পশুর হাট, জাতীয় সংগীত বাজে না অনেকদিন

প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৫৮ পিএম

আব্দুল বাশির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার 'বাঙ্গাবাড়ি ইউনুস স্মরণী স্কুল ও কলেজ' মাঠে দীর্ঘদিন ধরে পশুর হাট বসায় বিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানে অনেকদিন ধরে অ্যাসেম্বলি ও জাতীয় সঙ্গীত না হওয়ার বিষয়টি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্র ও শিক্ষকরা এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন।

সরজমিনে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঙ্গাবাড়ি ইউনুস স্মরণী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল তার নিকট আত্নীয় তাইস উদ্দিনকে প্রতিষ্ঠানের মাঠে পশুর হাট বসানোর মৌখিক অনুমতি দিয়ে রেখেছে। সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বুধবার বিদ্যালয় মাঠে সকাল ৯টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত গরু-ছাগলের হাট বসে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। এমনিতেই বর্ষার সময় প্রতিষ্ঠানের মাঠ পানিতে ডুবে থাকে। তার উপর সপ্তাহে দুই দিন হাট বসিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। এনিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী এবং এলাকাবাসীর মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এছাড়াও এই‌ গরুর হাটের টাকা যদি স্কুল প্রতিষ্ঠারে ফান্ডে জমা হয়। তবে দুই-তিন সপ্তাহ ধরে কেন হাটের টাকা তোলা বন্ধ রয়েছে? এ নিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

অধ্যক্ষ তাঁর ভগ্নিপতি ও অফিস সহকারী তাইস উদ্দিন ও ভাগিনা রাজুকে চাকরি দিয়ে স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন কাজে সংযুক্ত করে অধ্যক্ষের উদ্দেশ্য হাসিল করছে বলে নাম প্রকাশে এক শিক্ষক ও সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জানান। তিনি সদস্য থাকা কালীন ওই প্রতিষ্ঠানে একজন কম্পিউটার ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়। সেখানে ৭ থেকে ৯ লক্ষ টাকার নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোষাগারে (ফান্ডে) ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা জমা হয়েছে বলে তিনি জানান। বাকি টাকা কোথায় গেল এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রশ্নের ঘুরপাক খেলেও তার কোন সদুত্তর পায়নি তারা।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ রাজশাহী শহরের শালবাগান বিজিবি ক্যাম্পের পাশে একটি পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তিনি নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই অত্র প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও স্থানীয়রা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদও জানাচ্ছে। কিন্তু অজানা কারণে তা ধামাচাপা থেকেই যাচ্ছে বলে এলাকাবাসী, শিক্ষক ও সাবেক ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় অত্র প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী ও পশু হাটের তথাকথিত ইজারাদার তাইস উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, আমি প্রতি বছর ৮ হাজার টাকায় ২০১৫ সাল থেকে অদ্যবধি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের নিকট হতে পশুর হাট ইজারা নিয়ে হাট পরিচালনা করে আসছি। হাট বসানো কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুটা হলেও পাঠদানের ক্ষতি হচ্ছে। তারপর কেন করছেন এমন প্রশ্নে তিনি সদুত্তর দেননি।

অত্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মোস্তফা কামাল জানান, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাইস উদ্দিনকে প্রতি বছর ৫ হাজার টাকার চুক্তিতে হাট বসানোর অনুমতি দেয়া আছে। ইজারার টাকা নিয়মিত ব্যাংকে জমা দেয়া হয়। হাট বসানোর কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে, এ প্রশ্নে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। আর ২/৩ সপ্তাহ থেকে হাটের টাকা তোলা বন্ধ বিভিন্ন ঝামেলার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজশাহীর শালবাগানে ৫ তলা বাড়ি রয়েছে। আপনার বিরুদ্ধে অনেক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ করছে এলাকাবাসী ও সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা বললে তিনি বলেন, মানুষ বললে তো আমি তাদের নিষেধ করে পারবো না। কিন্তু যারা বলছে তাদের আমার সাথে প্রমানে আসতে বলেন। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছে। আমি অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি টাকাও খাইনা।

তিনি আরও বলেন,আমি ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সাথে নিয়ে হাট বন্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু ইজারাদারের কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি) ফেরদৌসী বেগমের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে। তিনি মোবাইলে কোন মন্তব্য দিতে রাজি হননি। কোন কথা বলার থাকলে অফিসে আসেন বলে ফোন কেটে দেন। অতঃপর দুপুর ১টা ২০মিনিটে তার অফিসে গিয়ে তালাবদ্ধ আছে দেখা গেছে। ওই সময়ে তাঁকে ফোন দেয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের সাথে (০১৭৪৮-৯৪৫৭৯২) নম্বরে একাধিকবার ফোন দিয়েও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উপজেলা চেয়ারম্যান হুমায়ূন রেজা' মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্কুল ও কলেজ মাঠে হাট বসানোর বিষয়টি বে-আইনী। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে হাটের ইজারাদারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে পশুর হাট বন্ধ করার জন্য।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: