দাফনের সময় কানে-মাথায় পিছনে রক্ত, হত্যা সন্দেহে লাশ নিয়ে গেল পুলিশ

প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:২৫ পিএম

ঝিনাইদহের সদর উপজেলায় বদিউজ্জামান এ্যাপো (৫০) নামে হাইস্কুলের এক শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে সাপের কামড়ে মৃত্যু বলে রবিবার প্রচারের পর লাশ দাফন করা হচ্ছিল। এ সময় দেখা গেল মৃত ব্যক্তির কান ও মাথার পেছন দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ বদিউজ্জামান এ্যাপোর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঝিনাইদহ উপজেলার এস্তেফাপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।

নিহত মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামান এ্যাপো পোড়াহাটী ইউনিয়নের এস্তেফাপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম লতার ছেলে। প্রথমে প্রচার করা হয় শনিবার রাতে তিনি সাপের কামড়ের শিকার হন। মধ্যরাতে কিছু অজ্ঞাত যুবক বদিউজ্জামান এ্যাপোর বড় মেয়ে চৈতীকে ফোন করে জানায় তার পিতাকে সাপে কামড় দিয়েছে। খবর পেয়ে তার মেয়ে হাসপাতালে পৌঁছে অজ্ঞাত ওই যুবকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয় এবং বলেন ‘তোরা আমার পিতাকে হত্যা করেছিস’। এর আগে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক তার পিতাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরবর্তীতে রহস্যময় এই মৃত্যুর পর রবিবার বাদ জোহর জানাজা শেষে প্রধান শিক্ষকের লাশ কবরস্থ করা হচ্ছিল, তখন তার মাথার পেছন ও কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দাফনে বাধা দেন। পরে লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। প্রতিবেশীরা জানায়, বদিউজ্জামানকে যদি সাপে দংশন করত তাহলে তার মুখ দিয়ে লালা ও চেহারা কালো বর্ণ ধারণ করত। কিন্তু সাপে কাটার কোনো লক্ষণ মৃত ব্যক্তির শরীরে নেই। তাছাড়া নিজের পুকুরপাড়ে দংশন করা ব্যক্তিকে কারা পার্শ্ববর্তী বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে নিয়ে গেল এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এছাড়া নিহতের স্ত্রী পাখি খাতুন অভিযোগ করেন যে রাতের আঁধারে ডেকে তার স্বামীকে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ছোট ভাই কলেজ শিক্ষক খায়রুজ্জামান সাইফুল জানান, আমরা হাসপাতালে পৌঁছে দেখি বড় ভাই মারা গেছেন। কীভাবে ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে আমরা সঠিকভাবে জানি না। এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার নামে অনেক মিথ্যা মামলাও করা হয়। দীর্ঘ মামলা মোকদ্দমা শেষে আদালতের নির্দেশে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বদিউজ্জামানের মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করা কথা ছিল। স্কুলে যোগদানের আগেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হতে পারে বলে গ্রামবাসী সন্দেহ করছে।

ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি আরো জানান, বদিউজ্জামানের মৃত্যু রহস্যজনক। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল বলে শুনেছি। এ কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওসি জানান, আদালতের নির্দেশে সোমবার স্কুলে যোগদান করার কথা ছিল তার। স্কুলে যোগদানের একদিন আগে তার এমন মৃত্যু আমরা রহস্যের চোখে দেখছি এবং লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছি। সোমবার দুপুরে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলেই আমরা পদক্ষেপ নিতে পারব।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: