‘স্কুলে গেলে ইটের খোয়া টানান প্রধান শিক্ষক তাই স্কুলে যাই না’

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৪৮ পিএম

আজ মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রামের একটি চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নাজমুল হোসেন। কয়েক জন বড় ভাইকে দেখে উঠে দাঁড়ায় বেঞ্চ থেকে। এর মধ্যে একজন বলেন, ‘আজও কাজের ভয়ে স্কুল যায়নি সে।’এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় নাজমুলের। নাজমুল বলে, ‘দুদিন ধরে স্কুলে যাই না। স্কুলে গেলেই ক্লাস থেকে বের করে শ্রমিকের মতো কাজ করান প্রধান শিক্ষক মোস্তারি বেগম। তিনি ইটের খোয়াতে পানি দিতে বলেন, বালুর বস্তা ভরতে বলেন। তাই কাজের ভয়ে স্কুলে যাই না।’

মঙ্গলবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা মুন্সিপাড়া গ্রামে শামসিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে নাজমুলের অভিযোগের প্রমাণ মেলে। তখন দুপুর ১টা ১৭ মিনিট। স্কুলের মাঠে দেখা গেল ১৫ শিক্ষার্থীকে। কেউ ইটের খোয়া বস্তায় ভরছে। তপ্তরোদে স্কুল পোশাক খুলেছে কেউ। ঘেমে নিস্তেজ হয়ে অনেকে টিউবওয়েলের পানি পান করছে। কেউ আবার বস্তায় করে মাঠের বালু অপসারণ করছে।

শিক্ষার্থী আবু নোমান বলে, ‘গতকালও টিফিনের সময় আমাদের দিয়ে ইটের খোয়া টানার কাজ করিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। বাড়ি যেতে দেননি। কাজ শেষে কিছু খাওয়াননি। আমরা পানি খেয়ে ছিলাম। তার কথা বলা দেখে ক্যামরার সামনে ছুটে আসে আরও কয়েক শিক্ষার্থী। তাদের ধারণা, কাজের জন্য অফিস থেকে কেউ পুরস্কার দিতে এসেছে। প্রধান শিক্ষকের এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন ও অভিভাবকরা।

অভিভাবক দায়ম উদ্দীন বলেন, ‘আমি প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছি, বাচ্চাদের দিয়ে কাজ করাচ্ছেন কেনো। তিনি কোনো উত্তর দেননি। ‘আমারা তো সন্তানদের এখানে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছি, কাজ করার জন্য নয়। ওদের দিয়ে কাজ করালে শ্রমিকের কি বরাদ্দ নেই? আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জাানাবো কর্তৃপক্ষের কাছে।’ সাবিনা ইয়াসমিনের বাড়ি স্কুলের পাশেই। তিনি বলেন, ‘শিশুদের দিয়ে প্রায়ই কাজ করতে দেখেছি। কখনো কিছু বলিনি শিক্ষকদের।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক সিনিয়র সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের হতে বলেন। আমাদেরসহ কাজ করান। আমিও কাজ করেছি। কি আর বলবো।’

এদিকে প্রধান শিক্ষক মোস্তারি বেগম শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্কুলে একটি শ্রেণিকক্ষের নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণ কাজে অতিরিক্ত খোয়া আনায় দুদিন কিছু সময় কাজ করতে হয়েছে।’

এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে বিষয়টি জানতাম না। তাদের দিয়ে কাজ করাবেন কেন। এমনটি হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে কাজ করানো অন্যায়। আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: