সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের পথে চারশত বছরের ঐতিহ্যবাহী মন্দির

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:০৬ পিএম

সংস্কারের অভাবে অনেকটা ধ্বংসের পথে প্রায় চার-শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাসী মঘিয়া শিব মন্দির ও দক্ষিনা কালী বাড়ির মন্দিরটি। বাদশা সেলিমের আমলে মঘিয়ার তৎকালিন জমিদার গন্ধর্ব নারায়ণ চৌধুরীর জমিদারি সময়ে এই মন্দির নির্মিত হয়। কিন্তু অযত্নে, অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে কালের সাক্ষী এ মন্দিরটি এখন ধ্বংসের পথে। যেকোন মুহূর্তেই তার অন্তিম সমাপ্তির আশঙ্কা রয়েছে। তাই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দাবি- অচিরেই পুনঃসংস্কার করে তাদের পূজা-অর্চনার জন্য মন্দিরটি উপযোগী করার ব্যবস্থা করে দেয়া হোক।

সরেজমিনে দেখা যায়, কচুয়া-চিতলমারী প্রধান সড়কে মঘিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অদূরেই এই মন্দির দুটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মন্দির দুটির পাশেই টিন দিয়ে ছাউনি ছোট একটা ঘর পূর্ব পাশে রয়েছে শীতলা মায়ের বিশালাকার বৃক্ষাদি। প্রায় আড়াই একর জায়গার উপর নির্মিত এ মন্দির দুটির সামনে বড় মাঠ। মন্দির দুটিও একেবারে জনমানবহীন। মন্দির হতে প্রায় পাঁচশত গজ উত্তরে মঘিয়া জমিদার বা রাজবাড়ি। বাগেরহাটের ‘মঘিয়া রাজবাড়ি’ দেশ-বিদেশে পরিচিত নাম। কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ইউনিয়নে এই রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়ির অবস্থান। জমিদারী আমলের শুরুর দিকে ওই শিব মন্দির ও দক্ষিণা-কালী মন্দিরসহ অন্যান্য স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন এখানকার জমিদার।

শিব মন্দিরের ফলকে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে মন্দিরটি সংস্কার করেন সুকুমারী চৌধুরানী ও সরজবালা চৌধুরানীর মেজ ছেলে বীরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। শিব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর সহধর্মীনি ব্রহ্মময়ী ও শশ্রুমান কাদম্বিনী রায় চৌধুরানী। তাদেরসহ অসংখ্য স্মৃতিবাহিত এই মন্দির। মঘিয়ার জমজমাট চৈত্র, বৈশাখী মেলা এই মন্দিরকে ঘিরেই হত বলে জানা যায়।

মঘিয়া শিব মন্দির ও দক্ষিনা কালী বাড়ির মন্দির কমিটির সভাপতি ও কচুয়া সরকারি সিএস পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় চৌধুরী (৫৬) বলেন, বাদশাহ সেলিমের আমলে গন্ধর্ব নারায়ণ চৌধুরীর জমিদারি আমলে এই শিব ও দক্ষিণা-কালী মন্দির, রাজবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হয়। মন্দিরটি জমিদাররা নির্মান করলেও তা এখন সার্বজনিন। তিনি আরো জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এখানে নানা অনুষ্ঠান হয়। ১৯৭৭ সালে কষ্টি পাথরের দক্ষিনা কালি মূর্তি চুরি হয়। ১৯৯০ সালে চুরি হয় কষ্টি পাথরের শিব লিঙ্গ। এরপর ১৯৯৬ সালে স্থানীয়দের সহায়তায় ভূবনেশ্বরীর কষ্টি পাথরের মূর্তি খুলনা যাদুঘর নিয়ে যাওয়া হয়। এখন বাকী যে স্থাপত্য আছে তা কালের স্বাক্ষী। এখন অর্থাভাবে প্রতিনিয়ত বিনষ্ট হচ্ছে চতুর্ভূজ আকৃতির ইট ও কারুকাজ খচিত মন্দিরের ভবন। সুব্রত রায় চৌধুরী আরো জানান, মন্দিরটির মাটির নিচেও রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন। এই স্থাপত্য সংরক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে একদিকে ইতিহাস রক্ষিত হবে অন্যদিকে পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রেও আয়ের পথ তৈরি হবে। তাই প্রাচীন স্থাপত্যসমূহ সংস্কার বা সংরক্ষণ করা অতীব জরুরি। এজন্যে সরকারের প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মন্দিরের পুরোহিত তাপস মুখার্র্জি জানান, মন্দিরটিতে প্রায় ২০ বছর ধরে পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। মন্দির দুটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ন অবস্থায় আছে। মন্দিরে দূর দুরান্ত থেকে হিন্দু–মুসলিম অসংখ্য ভক্তবৃন্দের আগমন ঘটে। মন্দিরটিতে প্রতি বছর কবি গান, মেলা অনুষ্ঠিত হয়। জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করা এই মন্দিরটি সংস্কার করা অতীব জরুরি। তাই মন্দিরটি পুনঃসংস্কারের জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি।

কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতান বলেন, ‘ইতিহাস ঐতিহ্যবাহিত নিদর্শন সংরক্ষণ করা দরকার। এখানে সংরক্ষণ করে পর্যটন উপযোগী করলে একদিকে এলাকার আয় বাড়বে। অপরদিকে দর্শনার্থীরা অতীত সম্পর্কে জানতে পারবে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: