৫০ শতাংশ মূল্য ছাড়ের ঘোষণা দিয়ে পর্যটকের সাথে ‘প্রতারণা’

‘শালিক নামক একটি রেস্তোরাঁয় বিকেলের নাস্তা করি। আমাদের দুইজনের বিল আসে ৫৭০ টাকা। একজন রেস্তোরাঁর কর্মচারী এসে একটা বিল হাতে ধরিয়ে দেয়। সেখানে ডিসকাউন্টের (ছাড়) কোনো কথা উল্লেখ ছিল না। ওই কর্মচারীকে ডেকে মেলা উপলক্ষে ছাড়ের কথা বললে উল্টো কিসের মেলা বলে হেসে ওঠেন ওই রেস্তোরাঁর কর্মচারী। এই থেকে বুঝা যায় পর্যটক দিবস উপলক্ষে ছাড়ের নামে পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।’ কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন ঢাকার সাবার থেকে কক্সবাজারে আসা রুমাইসা-মুস্তফা দম্পতি।
জানা গেছে, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। সাত দিনব্যাপী মেলা উপলক্ষে আবাসিক হোটেলগুলোতে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ এবং রেস্তোরাঁয় ৫০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। এমন ঘোষণায় রাঙামাটি থেকে কক্সবাজারে এসেছেন আবু রায়ান ও তার ৭ বন্ধু।
তবে বুধবার সকালে কক্সবাজারে পৌঁছার পর হোটেল বুকিং দিতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। ছাড় তো দূরের কথা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হোটেল ভাড়া দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে হিল টাউন নামের একটি হোটেলে স্বাভাবিক দামে কক্ষ ভাড়া করে উঠেছেন তারা। রেস্তোঁরা গুলোতে তর্কে জড়িয়ে প্রশাসনকে অবগত করেও কোন ছাড় পাননি এ পর্যটকরা।
বিষয়টিকে পর্যটকদের সাথে প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত করে আবু রায়ন বলেন, ‘আকর্ষণীয় ছাড়ের কথা শুনে কক্সবাজারে হাজারো পর্যটক এসে সবাই আমাদের মতো প্রতারিত হচ্ছেন। এর দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না।’
একইভাবে হোটেল ও রেস্তোরাঁয় ডিসকাউন্ট দেয়ায় অল্প খরচে কক্সবাজার ভ্রমণ করা যাবে, মনে করে পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে ঢাকার মিরপুর ৩ থেকে কক্সবাজারে এসেছেন জামাল হোসেন নামে একজন কাপড় ব্যবসায়ী।
জামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘কক্সবাজারের অন্তত ২০টি হোটেল ঘুরেও আমি ছাড় পাইনি। বরং স্বাভাবিক সময় কক্সবাজারে এক থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে ভালো হোটেলের রুম পাওয়া যেত, এবার এসে মনে হয়েছে তার চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে।’ রেস্তোরাঁ গুলোকে রীতিমত ডাকাতি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘জেলা প্রশাসন বা হোটেল মালিক যারাই ছাড়ের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পর্যটকদের সাথে প্রতারণা করছে তাদের বিরুদ্ধ মামলা করা উচিত।’
সিলেট থেকে আসা আবুল কালাম নামে এক পর্যটক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার পৌঁছে বিভিন্ন হোটেল গিয়েছি। কিন্তু পর্যটক মেলা উপলক্ষে যে ডিসকাউন্ট (ছাড়) দেওয়ার কথা ছিল, বাস্তবে তা নেই। আগে তাদের যে রেট ছিল বর্তমানেও একই অবস্থা। যা পর্যটকদের সাথে এক ধরনের প্রতারণা।’ একই ধরনের অভিযোগ করছেন সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য পর্যটক।
হোটেল মোটেল জোন ও রেস্তোঁরা গুলোতে ঘুরে পর্যটকদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। জেলা প্রশাসনের ঘোষণা মতে, হোটেল ও রেস্তোরাঁ গুলো কোন ধরনের ছাড় দিচ্ছে না। এ কারণে কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে ছাড় না পেয়ে প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্টদের সাথে তর্কে জড়াচ্ছেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন, জেলা প্রশাসন কর্তৃক হোটেল ও রেস্তোরাঁয় বিশাল ছাড়ের কথা জেনে গেল দুই দিনে অন্তত ৫০ হাজার পর্যটক কক্সবাজারে এসে একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। যদিও পর্যটকরা প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এর দায় নেবে না বলে জানায় জেলা প্রশাসন ও হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরা।
হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবসায়ীদের দাবি, জেলা প্রশাসন হোটেল মালিক, রেস্তোরাঁর মালিকদের সাথে আলাপ না করে নিজেদের মত ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছেন। এ কারণে পর্যটকরা প্রতারিত হচ্ছেন। এর দায় তারা নেবেন না, জেলা প্রশাসনকে নিতে হবে।
ঘোষণা পরও পর্যটকদের ছাড় না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুল হক টুটুল বলেন, মূলত আমাদের কারো সাথে আলাপ না করে জেলা প্রশাসন রেস্তোরাঁয় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছে। গণমাধ্যম প্রচার করেছে। তাই এর দায় জেলা প্রশাসনকে নিতে হবে।
কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘আমরা উৎসবের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছি। এরপরও মেলা উপলক্ষে আমাদের সমিতির মালিকানাধীন ননএসি রুমগুলো মেলা চলাকালে ৮০০ টাকা ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখনো পর্যটকের তেমন সাড়া পাইনি।’
তবে হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছে, পর্যটন মৌসুম ছাড়া সারা বছরই ননএসি রুমের ভাড় ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা করে নিয়ে থাকেন তারা। এখনো তাই নিচ্ছেন। বিশেষ ছাড়ের বিষয়টি তারা জানেন না।
কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘হোটেল ও রেস্তোরাঁ গুলোতে ছাড়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসন আমাদের সাথে কোন আলাপ করেনি। এখন জেলা প্রশাসন যদি নিজেদের মত করে ঘোষণা করে থাকে সেটি তাদের বিষয়।’
পর্যটকদের অভিযোগ উল্লেখ করে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান এ বিষয়ে যথাযথ জবাব দেননি। তবে তিনি দাবি করেন, হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের সাথে জেলা প্রশাসন সমন্বয় করে ছাড়ের বিষয়টি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সংশিষ্টরা এখন কেন এমন করছেন (অস্বীকার) তার জানা নাই।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: