বেঁচে ফিরেছে ছোট্ট দীপু, মায়ের মরদেহ এলেও বাবা নিখোঁজ

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:১৭ পিএম

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে হিন্দু পুণ্যার্থীদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনায় অসংখ্য মানুষ হারিয়েছন তাদের স্বজনদের। কেউ বা হারিয়েছেন তাদের পিতা মাতাকে, কেউ বা তাদের সন্তানদের। তাদের মাঝে এমনই একজন ৩ বছরের ছোট্ট দীপু। মহালয়া উপলক্ষ্যে ধর্মসভায় যাওয়ার আনন্দে বিভোর ছিল  দীপু। এ জন্য সকাল থেকে নতুন কাপড় পরে প্রস্তুত হয়ে ছিল সে। দুপুর গড়ালে বাবা-মায়ের সঙ্গে সেও আউলিয়া ঘাটে এসে পৌঁছায়। গন্তব্য ঘাটের অপরপ্রান্তে বদেশ্বরী মন্দির। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছার আগেই ঘাট থেকে ছেড়ে আসা তাদের বহনকারী নৌকা ডুবে যায় করতোয়ায়।

তবে সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ এই নৌ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হাত থেকে দীপু অলৌকিকভাবে ফিরে আসতে পারলেও প্রাণ হারিয়েছেন তার মা রুপালি রানী। বাবা ভূপেন্দ্রনাথের মরদেহ এখনও খুঁজে পাননি উদ্ধারকর্মীরা। স্বাভাবিকভাবে সেদিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি হয়তো মুছে যাবে ছোট্ট দীপুর মানসপট থেকে। সে শুধু জানে বাবা মন্দিরে গেছে পূজা দিতে, ফিরে আসবে একটু পরেই। দীপু পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার হাতিডুবা গ্রামের বাসিন্দা। অন্যের জমিতে বাস করে তার পরিবার। বৃদ্ধ দাদা-দাদিসহ ৭ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন ভূপেন্দ্রনাথ রায়। পুরো পরিবার আগলে রাখতেন মা রুপালি রানী। দুজনকে হারিয়ে অনিশ্চয়তায় দীপুর পরিবার।

বর্তমানে দীপুর বাড়ির প্রত্যেকেই যেন শোকে নিমজ্জিত। বাবা-মাকে হারিয়ে দিশেহারা দীপুর বড় দুই ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী দীপন রায় (১৭) এবং সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া পরিতোষ (১৩)। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে কান্না থামছে না দীপুর দাদি লক্ষ্মী রানীর। তাদের সমবেদনা জানাতে এসে নিস্তব্ধ প্রতিবেশীরাও।নাতিকে কোলে নিয়ে ভুপেন্দ্রনাথের বাবা মদন চন্দ্র প্রতিদিনই ঘাট পাড়ে এবং মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে তথ্য কেন্দ্রের সামনে ছেলের লাশের খোঁজ করছেন। বাবা-মা হারানো দীপুর দেখাশোনাও করছেন দাদা।

নিহত ভুপেন্দ্রনাথের বাবা মদন চন্দ্র বলেন, ‘ছেলে ও তার স্ত্রী নাতিকে নিয়ে নৌকায় পার হচ্ছিল। মাঝ নদীতে নৌকাডুবে গেলে নদীর স্রোতে তারা একে অপরকে হারিয়ে ফেলে। অলৌকিকভাবে দীপুকে জীবিত পেয়েছি। নৌকাডুবির দ্বিতীয় দিন ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কিলোমিটার ভাটিতে দিনাজপুরের খানসামায় দীপুর মায়ের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা। কিন্তু ভুপেন্দ্রনাথকে এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘ছেলের বউয়ের লাশ সৎকার করেছি। ছেলে জীবিত ফিরে আসার আশা নেই। লাশ পেলে সৎকার করতে পারতাম। ছেলের লাশের আশায় এখনও আছি। গত ছয়দিন ধরে নাতি দীপুকে নিয়ে ঘটনাস্থলসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি। জিজ্ঞাসা করলে বলি বাবা-মা মন্দিরে গেছে, খেলনা নিয়ে আসবে। এমন একটার পর একটা মিথ্যা কথা বলে তাকে সান্ত্বনা দিতে হচ্ছে। আর কত মিথ্যা কথা বলবো। দীপুকে কীভাবে মানুষ করবো জানি না।’

প্রসঙ্গত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর (রবিবার) দুপুরে আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে হিন্দু পুণ্যার্থীদের বহনকারী নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। মহালয়ার পূজা ও স্নান উৎসবে অংশ নিতে করতোয়া পাড়ি দিয়ে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু একটি নৌকায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় মাঝ নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এতে গত বুধবার পর্যন্ত ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ তিন জন। নিখোঁজদের খোঁজে আজ সকাল থেকে ষষ্ঠ দিনের মতো উদ্ধার অভিযান চলছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: